Advertisement
১৮ মে ২০২৪

ধার-দেনাতেই কারবার

ঝাড়গ্রাম জেলার বেলপাহাড়ি ব্লকের প্রত্যন্ত পাহাড়ি গ্রাম বরাপাল। বাঁকুড়ার বারিকুল এলাকার সীমানা লাগোয়া পাহাড়-জঙ্গল ঘেরা গ্রামে যাওয়ার কোনও রাস্তা নেই।

স্কুলছুট: ফাঁকা বরাপাল শিশুশিক্ষা কেন্দ্র। বাকিরা গিয়েছে বাবা-মায়ের সঙ্গে কাজে। নিজস্ব চিত্র

স্কুলছুট: ফাঁকা বরাপাল শিশুশিক্ষা কেন্দ্র। বাকিরা গিয়েছে বাবা-মায়ের সঙ্গে কাজে। নিজস্ব চিত্র

কিংশুক গুপ্ত
বেলপাহাড়ি শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০১৭ ০২:১৩
Share: Save:

শালপাতা, কেন্দুপাতা, ভেষজ গুল্মলতা সংগ্রহ করে দিন গুজরান হয় বেশির ভাগ গ্রামবাসীর। আগে সে সব কিনে নিয়ে যেতেন মহাজনেরা। কিন্তু ‘নোটবন্দি’র পর থেকে তাঁরা অনিয়মিত। আর সরকারি সমবায়ে বিক্রি করলে সঙ্গে সঙ্গে নগদ মেলে না। কাজেই বাকিতে জিনিস বিক্রি ছাড়া উপায় নেই গ্রামবাসীর।

ঝাড়গ্রাম জেলার বেলপাহাড়ি ব্লকের প্রত্যন্ত পাহাড়ি গ্রাম বরাপাল। বাঁকুড়ার বারিকুল এলাকার সীমানা লাগোয়া পাহাড়-জঙ্গল ঘেরা গ্রামে যাওয়ার কোনও রাস্তা নেই। গ্রামের ৩০টি আদিবাসী পরিবারের মধ্যে ২৩টি পরিবার শবর সম্প্রদায়ের। নেই সেচের ব্যবস্থা। গ্রীষ্ম ও শীতে টিউবওয়েলের জলস্তর নেমে যায়। গ্রামে নেই পুকুর বা ডোবা। বৃদ্ধা মিলনী সরেন বলেন, “দুর্গম এলাকায় বাইরের জগতের খবর আসে না। তবে টাকা বদলে গিয়ে আমাদের দুর্ভোগ বেড়েছে।” মিলনীদেবী জানান, এলাকায় একশো দিনের কাজের ব্যবস্থা নেই। চাষ করলেও জলের অভাবে ফসল শুকিয়ে যায়। তাই লতাপাতা সংগ্রহই ভরসা।

জানা গেল, ‘নোটবন্দি’র পর থেকেই তৈরি হয়েছে কিছু ফড়ে। তারা গ্রামে এসে দু’হাজার টাকার নোট দিয়ে শবরদের কাছ থেকে কম দামে বনজ সম্পদ কিনে নিয়ে যান। স্থানীয় শ্রীমতী শবর, সুনীল শবরদের বক্তব্য, দু’হাজার টাকার নোট ভাঙাতে যেতে হয় ১১ কিলোমিটার দূরে ভুলাভেদা এলাকা ব্যাঙ্কে বা দোকানে। অনেক সময় বাকিতেও বিক্রি করতে হয় জিনিস। এ দিকে নোট বাতিলের পরে এলাকায় খুচরো এত বেড়ে গিয়েছিল, যে ভুলাভেদার দোকানিরা খুচরো পয়সা নিতে চান না। দশ, কুড়ি এবং পঞ্চাশ টাকার নোটের অভাবে সমস্যায় পড়েন সুনীলবাবুরা। ফলে বরাপাল গ্রামে গেলেই ‘নোটবন্দি’ নিয়ে স্থানীয়দের ক্ষোভটা মালুম হয়। মুদি দোকানি তারাপদ শবর, চাষি মৃত্যুঞ্জয় কিস্কুদের দাবি, ‘নোটবন্দি’র ফলে কয়েক দশক পিছিয়ে গিয়েছেন তাঁরা। আবার খুদে রূপালি শবর, শ্যামলী শবরদের শিশুশিক্ষা কেন্দ্রে যাওয়া হয় না। তারা রুজির টানে বাবা মায়ের সঙ্গে জঙ্গলে ঘুরে বেড়ায়।

একই ছবি বেলপাহাড়ির অন্যান্য এলাকাতেও। মুম্বইয়ে রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করতেন বিদরি গ্রামের রঘুবীর মাহাতো, অমদাবাদে শ্রমিকের কাজ করতেন কাশমাড় গ্রামের চঞ্চল সর্দার। ‘নোটবন্দি’র পরে ঠিকাদারি সংস্থা উঠে যাওয়ায় কাজ হারিয়ে বাড়ি ফিরে এসেছেন তাঁরা।

বেলপাহাড়ি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তথা তৃণমূলের বেলপাহাড়ি ব্লক সভাপতি বংশীবদন মাহাতো বলেন, “কেন্দ্রের নোট বাতিলের জেরে প্রত্যন্ত এলাকার মানুষের সমস্যা হয়েছে। নয়া নীতির ফলে একশো দিনের প্রকল্পে কাজ করেও সময় মতো মজুরি পাচ্ছেন না এলাকাবাসী। তবে আমরা ধাক্কা কাটিয়ে গ্রামোন্নয়নের কাজ শুরু করেছি।”

পঞ্চায়েত সমিতির বিরোধী কংগ্রেস সদস্য সুব্রত ভট্টাচার্যের কটাক্ষ, “কেন্দ্রের নোট বাতিল আর রাজ্যের ব্যর্থতার জেরে বেলপাহাড়ির প্রত্যন্ত এলাকার আমজনতার নাভিশ্বাস।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Demonetisation Crisis
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE