Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

মাধ্যমিক দিয়ে ছেলে শুনল, বাবা আর নেই

খবরটা অবশ্য শেষ পর্যন্ত চাপা থাকেনি। মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী বিশ্বপ্রতাপ মুর্মু ইংরাজি পরীক্ষা দিয়ে ফিরে জানতে পেরেছে, গোয়ালতোড়ের নয়াবসতে হামারগেড়্যার জঙ্গলে বাঘ ধরতে গিয়ে বন দফতরের গাড়ির মধ্যেই মৃত্যু হয়েছে বাবা দামোদর মুর্মুর।

মায়ের পাশে মৃত দামোদরবাবুর ছেলে বিশ্বপ্রতাপ। নিজস্ব চিত্র

মায়ের পাশে মৃত দামোদরবাবুর ছেলে বিশ্বপ্রতাপ। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
গোয়ালতোড় শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০১৮ ০৫:০৬
Share: Save:

বন দফতরের গাড়ির মধ্যেই মৃত্যু হয়েছে বাবার। ছেলে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। সে কথা জানলে হয়তো পরীক্ষা দিতেই যাবে না, এই আশঙ্কায় মঙ্গলবার সকালে বাবার সহকর্মীরা কোয়ার্টারে এসে টেলিভিশন বন্ধ করে দেন।

খবরটা অবশ্য শেষ পর্যন্ত চাপা থাকেনি। মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী বিশ্বপ্রতাপ মুর্মু ইংরাজি পরীক্ষা দিয়ে ফিরে জানতে পেরেছে, গোয়ালতোড়ের নয়াবসতে হামারগেড়্যার জঙ্গলে বাঘ ধরতে গিয়ে বন দফতরের গাড়ির মধ্যেই মৃত্যু হয়েছে বাবা দামোদর মুর্মুর। ফরেস্ট গার্ড দামোদর ছাড়াও ওই গাড়িতেই দেহ মিলেছে চালক অমল চক্রবর্তীর। দামোদরের বড় ছেলে বিশ্বপ্রতাপ নয়াবসত হাইস্কুলের ছাত্র। ছেলে পরীক্ষা দিতে বেরিয়ে যাওয়ার পরে নয়াবসতে বন দফতরের কোয়ার্টারেই ছিলেন দামোদরের স্ত্রী লক্ষ্মীমণি। তিনিও কিছুই জানতেন না। বিশ্বপ্রতাপের পরীক্ষার পরে বন দফতরের গাড়িতেই লক্ষ্মীমণিদেবী আর তাঁর ছোট ছেলে প্রদীপকে নিয়ে যাওয়া হয় দামোদরের গ্রামের বাড়ি আকছোড়ায়। আর বিশ্বপ্রতাপকে অন্য একটি গাড়িতে পরীক্ষাকেন্দ্র থেকে নিয়ে আসা হয়। কিছু পরে এসে পৌঁছয় দামোদরের দেহ।

সাত বছর আগে বাবার মৃত্যুর পরেই ফরেস্ট গার্ডের চাকরি পেয়েছিলেন দামোদর। সোমবার রাত দু’টোর সময়ও স্বামীর সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে লক্ষ্মীমণির। মৃতের ভাইপো সুরজিৎ মুর্মু বলেন, “গাড়ির দরজা-জানলা সব কেন বন্ধ ছিল বুঝতে পারছি না।”

বাবাকে হারালেও বিশ্বপ্রতাপের মাধ্যমিকে যাতে বিঘ্ন না ঘটে, পরিজনেরা সেই চেষ্টা করছেন।

আরও পড়ুন: বাঘ-ভয়ে বন্ধ গাড়ি, মৃত ২

অমল ছিলেন বন দফতরের অস্থায়ী কর্মী। তাঁর বাড়ি পিঁড়াকাটার মালিদায়। অমল ও স্ত্রী মিঠু চক্রবর্তীর দুই ছেলে। বড় ছেলে রঞ্জন একাদশ শ্রেণির ছাত্র, ছোট সূর্য অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। সোমবার দুপুরেও বাড়ি এসেছিলেন অমল। খাওয়াদাওয়া সেরে চলে যান ডিউটিতে। সোমবার রাত দেড়টার সময় স্বামীর সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে মিঠুর। এ দিন সকালে বাড়ি আসার কথা বলেছিলেন অমল। মিঠুর বাবা সুনীল বন্দ্যোপাধ্যায় বলছিলেন, “গাড়ির দরজা-জানলা বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়াটা ভুল ছিল। একটা ভুলই সব শেষ করে দিল।”

বছর ছয়েক বন দফতরের গাড়ি চালাচ্ছিলেন অমল। ভাল কাজের জন্য বন দফতরের থেকে পুরস্কার পাওয়ার কথা ছিল তাঁর। তার আগেই সব শেষ। এ দিন মেদিনীপুরে আসেন মুখ্য বনপাল (পশ্চিমাঞ্চল) শক্তিশঙ্কর দে। তাঁর আশ্বাস, “বন দফতর দুই পরিবারের পাশে থাকবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE