বিডিওকে ঘিরে বিক্ষোভ। বিনপুরের কেন্দডাংরি গ্রামে। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।
ছ’মাস ধরে সৌরচালিত পানীয় জল প্রকল্পটি বিকল। বাধ্য হয়ে একটি পরিত্যক্ত পাতকুয়োর জলে তেষ্টা মেটাচ্ছিলেন গ্রামবাসী। সম্প্রতি গ্রামে ডায়েরিয়া ছড়িয়েছে। গত পাঁচদিনে আক্রান্ত ছয় মহিলা-সহ ন’জন গ্রামবাসী ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে কেন্দডাংরি গ্রামে ছুটে গিয়েছিলেন বিনপুর-১ ব্লকের বিডিও জ্যোতিন্দ্রনাথ বৈরাগী। সঙ্গে ছিলেন স্থানীয় দহিজুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান পূর্ণিমা মাণ্ডি ও স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য বিনোদ সরেন। বিডিও-র সঙ্গে শাসক দলের দুই জনপ্রতিনিধিকে দেখে তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠেন বাসিন্দারা। বিডিও এবং দুই জনপ্রতিনিধিকে ঘিরে তুমুল বিক্ষোভ দেখান গ্রামের মহিলারা। গ্রামবাসী ছিত্তামণি হেমব্রম, কুনি মুর্মু, হীরামণি মুর্মুরা ঝাঁঝিয়ে বলেন, “গ্রামে অসুখ হওয়ার খবর শুনে এখন পরিদর্শনে এসেছেন। এতদিন তো প্রধান ও পঞ্চায়েত সদস্যের টিকিও দেখতে পাইনি। ছ’মাস ধরে গ্রামে পরিস্রুত পানীয় জল পরিষেবা বন্ধ। আমরা বাধ্য হয়ে ভাঙা পাতকুয়োর দূষিত জল খাচ্ছি। তখন তো কই খোঁজ নিতে আসেননি।” জঙ্গলমহলে প্রত্যন্ত গ্রামীণ এলাকায় গ্রামবাসীদের বিক্ষোভের মুখে পড়ে আমতা আমতা করতে থাকেন তৃণমূলের পঞ্চায়েত প্রধান ও পঞ্চায়েত সদস্য। ঝাড়গ্রামের সিএমওএইচ অশ্বিনী মাঝি বলেন, “মনে হচ্ছে পাতকুয়োর দূষিত জল খাওয়ার জন্যই বাসিন্দারা অসুস্থ হয়েছেন। চিকিৎসায় সকলেরই অবস্থা এখন স্থিতিশীল। ওই পাতকুয়োর জল পান করতে নিষেধ করা হয়েছে।”
দহিজুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত কেন্দডাংরি গ্রামের আদিবাসী পড়ায় বাস করে ৩৫টি পরিবার। জনসংখ্যা সব মিলিয়ে দু’শো। সকলেই পেশায় প্রান্তিক চাষি অথবা খেতমজুর। এলাকায় কোনও নলকূপ নেই। গ্রামের সৌরচালিত জল প্রকল্পটি থেকে পরিস্রুত পানীয় জল পাওয়া যেত। জনস্বাস্থ্য কারিগরি বিভাগের ওই প্রকল্পে পাম্পের সাহায্যে জল তুলে পাঁচ হাজার লিটার ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন ট্যাঙ্কে মজুত করা হত। ট্যাঙ্কে লাগানো ট্যাপ থেকে জল পেতেন বাসিন্দারা। মাস ছ’য়েক আগে সে ব্যবস্থা অকেজো হয়ে যায়। ফলে জল বন্ধ।
বাধ্য হয়েই একটি পরিত্যক্ত পাতকুয়োর জল খাচ্ছিলেন বাসিন্দারা। দিন পাঁচেক আগে এক বৃদ্ধা ও এক অন্তঃসত্ত্বা মহিলা ডায়েরিয়ায় আক্রান্ত হন। গত রবিবার তাঁদের ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। এরপর থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত একে একে মোট ন’জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। খবর পেয়ে গত কয়েকদিনে মেডিক্যাল টিম গ্রামে গিয়েছিল। এ দিনও সকালে বিএমওএইচ-এর নেতৃত্বে মেডিক্যাল টিম গ্রামে যায়। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় সৌরচালিত পাম্পটি মেরামতির কাজ শুরু হয়। কিন্তু বিডিও এবং জনপ্রতিনিধিরা গ্রামে গিয়ে গ্রামবাসীর রোষের মুখে পড়েন। এলাকায় রাস্তা নেই, একশো দিনের কাজ হচ্ছে না, পঞ্চায়েত সদস্য এলাকায় আসেন না বলে ক্ষোভ উগরে দেন বাসিন্দারা। বিডিও গ্রামবাসীদের শান্ত করে জানান, পুরনো জল প্রকল্পটি মেরামত করা হচ্ছে। তাঁর আশ্বাস, যত দ্রুত সম্ভব গ্রামে নতুন একটি সাব মার্সিবল পাম্প বসিয়ে পানীয় জলের ব্যবস্থা করা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy