E-Paper

অবসরেও ছেদ নেই পড়ানোয়

৭৬ বছর বয়সি অজিত বলছেন, ‘‘শিক্ষকের অবসর বলে কিছু নেই। শিক্ষকের কর্তব্য শিক্ষাদান। স্কুলে এসে পড়ালে আনন্দ পাই। ভাল লাগে। তাই আসি।

বরুণ দে

শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৯:০৩
ক্লাস নিচ্ছেন অজিত।

ক্লাস নিচ্ছেন অজিত। —নিজস্ব চিত্র।

শিক্ষকের অবসর হয় না।

এই কথাটি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন অজিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়। পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুরের আনন্দপুরের তোড়িয়ার বাসিন্দা তিনি। তোড়িয়া প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষকতা করতেন। বছর ষোলো আগে অবসর নিয়েছেন। এখন তোড়িয়া হাইস্কুলে শিক্ষকতা করেন। নিয়মিত স্কুলে এসে নিঃস্বার্থভাবে পড়ুয়াদের পড়ান।

অজিত তোড়িয়া প্রাথমিক স্কুলের সহ-শিক্ষক ছিলেন। শিক্ষকতার চাকরিতে যোগদান ১৯৭৩ সালে। ২০০৭ সালে অবসর নেন। তোড়িয়া হাইস্কুলে পড়াচ্ছেন ২০১৩ সাল থেকে। সাড়ে দশটা বাজলেই স্কুলে হাজির হয়ে যান তিনি। মূলত সংস্কৃতের ক্লাস নেন তিনি। এই স্কুলে সংস্কৃতের শিক্ষক পদটি শূন্য। ওই ২০১৩ সাল থেকেই। তোড়িয়া হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক উৎপল গুড়ে বলছিলেন, ‘‘অজিতবাবু যে ভাবে অবসরের পরেও রোজ স্কুলে এসে নিঃস্বার্থভাবে পড়ুয়াদের পড়াচ্ছেন, সেটা আমাদের কাছে দৃষ্টান্ত। ওঁকে দেখে আমরাও অনুপ্রাণিত হই। কমনরুম এবং ক্লাসরুম, দু’জায়গাতেই উনি জনপ্রিয়।’’ তিনি জানান, স্কুলে আগে একজন সংস্কৃত শিক্ষক ছিলেন। ২০১৩ সালে তিনি বদলি নিয়ে অন্য স্কুলে চলে যান। তখন কী ভাবে রোজকার সংস্কৃতের ক্লাস চলবে, ভেবে পাচ্ছিলেন না স্কুল কর্তৃপক্ষ। ঠিক তখনই এগিয়ে আসেন অজিত। তাঁকে স্কুলে এসে পড়ানোর অনুরোধ করতে এককথায় রাজি হয়ে যান।

৭৬ বছর বয়সি অজিত বলছেন, ‘‘শিক্ষকের অবসর বলে কিছু নেই। শিক্ষকের কর্তব্য শিক্ষাদান। স্কুলে এসে পড়ালে আনন্দ পাই। ভাল লাগে। তাই আসি। স্কুল চাইলে সারা জীবন আসব।’’ তাঁর কথায়, ‘‘আমি সংস্কৃত জানি। সংস্কৃত আমার অন্যতম প্রিয় বিষয়। পড়াতে পারি। স্কুলে গিয়ে ক্লাস নিতে খুব ভাল লাগে। আমাকে সবাই খুব ভালবাসে। সম্মান করে। গুরুজন বলে মানে। এটাই তো প্রাপ্তি।’’

এর জন্য আলাদা কোনও পারিশ্রমিক পান না তিনি। অবশ্য পারিশ্রমিকের আশাও করেন না। অজিত বলছেন, ‘‘পারিশ্রমিকের ব্যাপারে কখনও আমি কিছু বলিনি। স্কুলে গেলে আমি খুব আনন্দ পাই। পড়িয়ে আনন্দ পাই। তাই স্কুলে গিয়ে পড়াশোনা করাই।’’ স্ত্রী জয়রানি, দুই ছেলে তারাশঙ্কর এবং শিবশঙ্করকে নিয়ে তাঁর পরিবার। খুব সামান্য জমি রয়েছে। পেনশনের টাকায় সংসার চলে। অজিত জানাচ্ছেন, পরিবারের সবাই তাঁকে স্কুলে আসতে উৎসাহ দেন। তাঁর কথায়, ‘‘বয়স হয়েছে। অন্য গ্রামে হলে হয়তো পারতাম না। নিজের গ্রামে স্কুল। তাই সুবিধা।’’

তোড়িয়া হাইস্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা প্রায় ১,১৭০। শিক্ষক রয়েছেন ২৫ জন। এরমধ্যে ২ জন পার্শ্বশিক্ষক। অবসরপ্রাপ্ত প্রাথমিক স্কুল শিক্ষক অজিতকে শিক্ষক হিসেবে পেয়ে খুশি ওই স্কুলের ছাত্রছাত্রীরাও। ক্লাস শেষে কোনও পড়ুয়া আলাদা করে কিছু বুঝে নিতে চাইলেও হাসিমুখে সময় দেন তিনি। পড়ুয়াদের কথায়, ‘‘যে কোনও কঠিন জিনিসই স্যার খুব সহজে বুঝিয়ে দেন।’’ স্কুলের প্রধান শিক্ষক বলছেন, ‘‘এ রকম মানুষ যে কোনও প্রতিষ্ঠানেরই সম্পদ।’’

চক-ডাস্টার হাতে ক্লাসে যাওয়ার আগে অজিত মনে করালেন, ‘‘ছেলেমেয়েরা মানুষ হলেই আমার শ্রম সার্থক।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

midnapore

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy