কালো পতাকা হাতে কাঁথির রাস্তায়। নিজস্ব চিত্র
নেতা বদল হচ্ছে। কিন্তু সংগঠনের হাল ফিরছে কি! এই প্রশ্নই ঘোরাফেরা করছে বিজেপি কর্মী, সমর্থকদের মধ্যে।
সোমবার বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের সভাকে কেন্দ্র করে ধুন্ধুমারের পর আরও জোরাল হয়েছে প্রশ্নটা। কারণ, এ দিনের ঘটনায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হলেও দলের গোষ্ঠী কোন্দল ও সাংগঠনিক দুর্বলতা যে প্রকট হয়েছে তা মানছেন বিজেপি জেলা নেতৃত্বের একাংশ। কারণ, গাড়ি থেকে নেমে রাজ্য সভাপতি যখন কর্মিসভার দিকে যাচ্ছিলেন তখন বিজেপির দলীয় পরিচয়পত্র ঝোলানো কয়েকজন কালো পতাকা দেখান। তারপরই শুরু হয়ে যায় মারধর, হাতাহাতি। পাশের জেলা পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রামে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলের সঙ্গে টক্কর দিয়ে সাংগঠনিক শক্তি বাড়িয়েছে বিজেপি। একাধিক জায়গায় তৃণমূলকে হারিয়ে পঞ্চায়েতের ক্ষমতাও দখল করেছে বিজেপি। সেখানে পূর্ব মেদিনীপুরে শক্তিবৃদ্ধি তো দূর-অস্ত, বরং বারবার সামনে আসছে গোষ্ঠী কোন্দল।
কেন এই হাল? গেরুয়া শিবিরের অন্দরের খবর, এই জেলায় যোগ্য নেতৃত্বের অভাবই ভোগাচ্ছে বিজেপিকে। সিপিএমের প্রাক্তন সাংসদ লক্ষ্মণ শেঠ বিজেপিতে যোগ দিলেও তাতে বিশেষ কিছু সুবিধা হয়নি। দলে কোণঠাসা হয়ে লক্ষ্মণ রবিবারই সাংবাদিক বৈঠক করে দল ছাড়ার কথা ঘোষণা করেন। জানিয়ে দেন, বিজেপিতে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে তিনি ভুল করেছিলেন। সাংগঠনিক কাজে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগে সম্প্রতি দলের কাঁথি সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সোমনাথ রায়কে সরানো হয়েছে। তাঁর জায়গায় নতুন সভাপতি করা হয়েছে তপন মাইতিকে। কিন্তু তাতেও তো থামল না কোন্দল!
সোমনাথের বক্তব্য, ‘‘তৃণমূলকে রোখার জন্য যে শক্তি দরকার ততটা আমরা সাংগঠনিক ভাবে প্রস্তুত হতে পারিনি। তবে আমাদের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নেই।’’ আর তপনের কথায়, ‘‘এখানে ভেতরে ভেতরে শক্তি বাড়ছে। কোনও দ্বন্দ্ব নেই। সংগঠন আগের চেয়ে বেশি মজবুত।’’
একবার নয়। গোষ্ঠী কোন্দলের জেরে বারবারই অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছে বিজেপি নেতৃত্বকে। মাস খানেক আগে দলের তমলুক সাংগঠনিক জেলা কমিটির সভা হয়েছিল নিমতৌড়ি স্মৃতিসৌধে। সভায় আসা রাজ্য সভাপতির সামনেই দলের নেতা – কর্মীদের একাংশ জেলা সভাপতি প্রদীপ দাসের বিরুদ্ধে পঞ্চায়েত ভোটে প্রার্থিপদে টিকিট বিলি ও আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন।
পঞ্চায়েত ভোটে টিকিট নিয়ে পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম জেলা বিজেপির অন্দরে মনোমালিন্য ছিল না এমনটা নয়। কিন্তু ভোট মিটতে দেখা যাচ্ছে, ওই দু’টি জেলায় বলার মতো সাফল্য পেয়েছে গেরুয়া শিবির। অথচ পূর্ব মেদিনীপুরে জেলার ২৫টি পঞ্চায়েত সমিতির একটিও জয় পায়নি। জেলা পরিষদের ৬০টি আসনেও শূন্য হাতে ফিরেছে। ২২৩ টি গ্রামপঞ্চায়েতের মধ্যে মাত্র দু’টিতে জোড়াতালি দিয়ে কোনরকমে ক্ষমতা দখল করেছে।
জেলায় সংগঠন বৃদ্ধি- না হওয়ার অভিযোগ উড়িয়ে প্রদীপের অবশ্য দাবি, ‘‘প্রশাসন ও পুলিশকে ব্যবহার করে পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূল সন্ত্রাস করে বিরোধী প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দিতে দেয়নি। এরপর ভোট লুট করা, গণনা কেন্দ্রেও হামলা করেছে তৃণমূল। তাই ভোটে প্রকৃত জনমত পাওয়া যায়নি। জেলায় শক্তি বৃদ্ধি হয়েছে বলেই বিজেপি নেতা–কর্মীদের উপর তৃণমূল হামলার পথ নিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy