Advertisement
০৮ মে ২০২৪

চন্দ্রকোনায় পুরপ্রধান অরূপ, চাপানউতোর শুরু তৃণমূলে

গতবার ছিল পাঁচটি আসন, এ বার তা বেড়ে হয়েছে ১১। কিন্তু নিরঙ্কুশ জয়ের পরেও চন্দ্রকোনায় কোন্দলে অস্থির ছিল তৃণমূল। কারণ, পুরপ্রধানের দাবিদার ছিলেন ছ’জন। সোমবার কলকাতায় তৃণমূল ভবনের বৈঠকে চূড়ান্ত হয়েছে গত দু’বারের বিজয়ী কাউন্সিলর অরূপ ধাড়ার নাম। সে খবর চন্দ্রকোনায় এসে পৌঁছতেই চাপানউতোর শুরু হয়ে গিয়েছে শহরজুড়ে। পুরপ্রধান পদপ্রার্থী হিসাবে বেশ অনেকখানি পিছিয়ে ছিলেন অরূপবাবু।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঘাটাল শেষ আপডেট: ১২ মে ২০১৫ ০০:১৮
Share: Save:

গতবার ছিল পাঁচটি আসন, এ বার তা বেড়ে হয়েছে ১১। কিন্তু নিরঙ্কুশ জয়ের পরেও চন্দ্রকোনায় কোন্দলে অস্থির ছিল তৃণমূল। কারণ, পুরপ্রধানের দাবিদার ছিলেন ছ’জন।

সোমবার কলকাতায় তৃণমূল ভবনের বৈঠকে চূড়ান্ত হয়েছে গত দু’বারের বিজয়ী কাউন্সিলর অরূপ ধাড়ার নাম। সে খবর চন্দ্রকোনায় এসে পৌঁছতেই চাপানউতোর শুরু হয়ে গিয়েছে শহরজুড়ে। পুরপ্রধান পদপ্রার্থী হিসাবে বেশ অনেকখানি পিছিয়ে ছিলেন অরূপবাবু। বরং অশোক পালধি বা রণজিৎ ভাণ্ডারি ছিলেন অনেক জোরাল প্রতিদ্বন্দ্বী। ফলে সব নেতার অনুগামীরাই এ নিয়ে বেশ উত্তেজিত।

তৃণমূলের শহর কমিটির এক নেতার গলায় এ নিয়ে বেশ উদ্বেগ, ‘‘নাম চূড়ান্ত করেছেন সুব্রত বক্সী। প্রকাশ্যে কেউই কিছু বলতে পারছেন না। কিন্তু এরপর এলাকায় যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে, তা সামলাব কী করে?’’

শহরের বাসিন্দারা অবশ্য প্রশ্ন তুলছেন, উন্নয়ন করার জন্য কি সবাইকে পুরপ্রধান হতে হবে? কাউন্সিলর হয়ে এলাকার উন্নয়ন সম্ভব নয় তা হলে?

দিন কয়েক আগে দলের এক জেলা নেতার গলায় শোনা গিয়েছিল হাতাশার সুর, “চন্দ্রকোনার বিষয়টি দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে পৌঁছেছে। পুরপ্রধান কে হবেন সেটা উনি ঠিক করে দিলেই ভাল হয়। না হলে গণ্ডগোল ঠেকানো অসম্ভব।” যদিও তৃণমূল জেলা সভাপতি দীনেন রায় বলেন, “দলনেত্রী তো একটি কমিটি তৈরি করেই দিয়েছেন। ওই কমিটি যাঁর নাম চূড়ান্ত করবে তাঁর নাম রাজ্যস্তরে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।”

ভোটের আগে প্রার্থী তালিকা নিয়েও এলাকায় ব্যাপক ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল। তাই পুরপ্রধান হিসাবে কারও নাম ঘোষণা না করেই ভোটে লড়েছিল তৃণমূল। ভোট মিটেছে। চন্দ্রকোনার ১২টি আসনের মধ্যে তৃণমূল একক ভাবে ১১টি আসন পেয়েছে। একটিতে জেতে নির্দল। ভোটের ফলপ্রকাশের পরে পুরপ্রধান কে হবেন তা নিয়েও তৃণমূলের অন্দরে ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল।

প্রধান পদের দাবিদার প্রত্যেকেই তাঁদের অনুগামীদের নিয়ে তৈরি। গত কয়েক দিনে দলের রাজ্য বা জেলা নেতার সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ করেছেন সকলেই। শুধু নিজেদের গুণগান করা নয়, বরং অন্যের নামে খানিকটা করে নিন্দা করে আসছেন প্রায় প্রত্যেকেই। কেউ বলছেন অমুক কাউন্সিল প্রচুর জমি কিনেছেন দলকে ব্যবহার করে। তো কেউ একাধিক গাড়ি, কেউ বা কলকাতায় বাড়ি। এতেই কপালে ভাঁজ জেলা নেতাদের। এক জেলা নেতার কথায়, “পুরপ্রধান নিয়ে এমন পরিস্থিতি যে চন্দ্রকোনায় কে কী করছেন জানা হয়ে গিয়েছে। দলীয় ভাবে পরে তার তদন্ত হবে।” তবে এই ঘটনায় দলের ভবিষ্যত নিয়েই আপাতত ভাবছেন নেতারা।

গত পুরভোটে তৃণমূলে পাঁচটি আসন ছিল। সিপিএমের চার এবং সমর্থিত নির্দলের তিন কাউন্সিলরকে নিয়ে বোর্ড গঠন করেছিল সিপিএম। পরে সিপিএম সমর্থিত তিন জন নির্দল কাউন্সিলর তৃণমূলের সঙ্গে জোট করে সিপিএমের বোর্ডের প্রতি অনস্থা আনে। বোর্ড চলে যায় তৃণমূলের হাতে। এ বারের ভোটে বিদায়ী চেয়ারম্যান রাম কামিল্যা টিকিট পাননি। বরং ভোটে লড়ে জয়ী হয়েছেন তাঁর ভ্রাতৃবধূ। সুতরাং তিনি প্রধান পদের অন্যতম দাবিদার। যাঁরা চাইছেন কোনও মহিলা কাউন্সলিরই প্রধান হোন, তাঁরা প্রথমেই বলছেন রিনা কামিল্যার কথা। তৃণমূলের ১১ জন জয়ী কাউন্সিলরের মধ্যে ছ’জনই মহিলা। ফলে দলের অনেকেই পুরপ্রধান পদে কোনও একজন মহিলাকে চাইছেন।

আবার প্রাথমিক ভাবে দলের শ্রমিক সংগঠনের নেতা অশোক পালধির নাম উঠে এলেও তাতে অনেকেই আপত্তি তুলেছেন। বিদায়ী উপ-পুরপ্রধান রণজিৎ ভাণ্ডারির অনুগামীদের বক্তব্য, এ বার পুরপ্রধান তাঁকেই করতে হবে। অন্যদিকে পুরসভার ৮ নম্বর থেকে পরপর দু’বার জয়ী কাউন্সিলর অরূপ ধাড়াও রয়েছেন প্রধানের পদে দৌড়ে।

আবার ৯ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জয়ী রামপ্রসাদ রায়ের অনুগামীর সংখ্যাও নেহাৎ কম নয়। তাঁদের বক্তব্য, চন্দ্রকোনায় গত বারে প্রথম সিপিএম বোর্ডের চেয়ারম্যান অরুণ সাহাকে হারিয়ে রামপ্রসাদ জয়ী হয়েছেন। তাই তাঁকেই পুরপ্রধান করতে হবে। এ দিকে রাম কামিল্যার পুত্রবধূ ছাড়াও প্রধানপদের দৌড়ে রয়েছেন পাপিয়া দলবেরার বা সাথী সিংহ পালধি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE