Advertisement
১৯ মে ২০২৪
পরিস্রুত পানীয় জল মেলে না হাসপাতালেই

অবহেলায় বেলপাহাড়ি

তিন বছরের ছোট্ট মামনি সিংহ ডায়েরিয়া নিয়ে ভর্তি বেলপাহাড়ি গ্রামীণ হাসপাতালে। চিকিৎসকরা তার মাকে বার বার বলে দিয়েছেন শিশুটিকে পরিস্রুত জল খাওয়াতে। কিন্তু সে তো বাড়ি ফিরলে। যত দিন হাসপাতালে থাকবে মামনি পরিস্রুত জল পাবে কোথায়?

নরককুণ্ড: জল মিলছে যেখানে তার চারপাশে জমে রয়েছে নোংরা জল, আবর্জনা।নিজস্ব চিত্র।

নরককুণ্ড: জল মিলছে যেখানে তার চারপাশে জমে রয়েছে নোংরা জল, আবর্জনা।নিজস্ব চিত্র।

কিংশুক গুপ্ত
বেলপাহাড়ি শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০১৭ ০০:৫২
Share: Save:

তিন বছরের ছোট্ট মামনি সিংহ ডায়েরিয়া নিয়ে ভর্তি বেলপাহাড়ি গ্রামীণ হাসপাতালে। চিকিৎসকরা তার মাকে বার বার বলে দিয়েছেন শিশুটিকে পরিস্রুত জল খাওয়াতে। কিন্তু সে তো বাড়ি ফিরলে। যত দিন হাসপাতালে থাকবে মামনি পরিস্রুত জল পাবে কোথায়?

হাসপাতাল চত্বর থেকে প্রায় দেড়শো মিটার দূরে নলকূপ। সেখান থেকেই মেয়ের জন্য বোতলে জল ভরছিলেন মামনির মা সুমিতাদেবী। চারপাশে জমা জল, আবর্জনা, মাছি ভনভন করে। পাশেই অন্য রোগীর জামা কাপড়় কাচছেন পরিজনেরা। শুধু কি তাই? ঢাঙিকুসুম গ্রামের বাসিন্দা সুমিতাদেবী বললেন, ‘‘নলকূপের জলে দুর্গন্ধ। আয়রনের পরিমাণ খুব বেশি। কিন্তু আমরা দিন আনি দিন খাই। বোতলের জল কিনে খাওয়ার মতো ক্ষমতা নেই। বাধ্য হয়েই এই জলই মেয়েকে খাওয়াচ্ছি।”

কিন্তু এমনটা তো হওয়ার কথা নয়। বিশেষত একদা মাওবাদীদের খাসতালুক বেলপাহাড়িতে। জঙ্গলমহলের উন্নয়নে যথেষ্ট দরাজ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। বিভিন্ন প্রকল্পে কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ হচ্ছে। কিন্তু খোদ বেলপাহাড়ির সরকারি হাসপাতালে রোগীদের তেষ্টা মেটানোর জন্য পদক্ষেপ করা হয়নি বলে অভিযোগ।

রাজ্যে ক্ষমতার পালা বদলের পরে ২০১২-১৩ অর্থবর্ষে হাসপাতাল চত্বরে পরিস্রুত পানীয় জল প্রকল্প চালু করা হয়েছিল। অর্থ বরাদ্দ করেছিল পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদ। প্রকল্প রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে ছিল কলকাতার একটি বেসরকারি সংস্থা। গভীর নলকূপের জল পাম্পের মাধ্যমে তুলে ট্যাঙ্কে ভর্তি করার পরে সেই জল বিশেষ পদ্ধতিতে পরিস্রুত করে রিজার্ভারে সঞ্চিত করা হত। চারটি ট্যাঙ্কের মাধ্যমে রোগী ও তাঁদের পরিজনরা প্রয়োজন মতো সেই জল সংগ্রহ করতেন। কিন্তু তৈরির কয়েক বছরের মধ্যেই প্রকল্পটি অকেজো হয়ে যায়। সেটি মেরামত করে ফের চালু করার কোনও উদ্যোগ দেখা যায়নি। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, পরে বেসরকারি ওই সংস্থার সঙ্গে আর চুক্তি নবীকরণ করেনি পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন দফতর। স্বাস্থ্য দফতরকে প্রকল্পটির দায়িত্ব নিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু দফতর রাজি হয়নি। প্রকল্পটি নতুন করে চালানোর জন্য টাকা দেবে কে, সেই বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি।

হাসপাতাল চত্বরে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের নলবাহিত জলের আলাদা সংযোগ রয়েছে। রয়েছে একটি কমিউনিটি ট্যাঙ্কও। সেই জল কেবলমাত্র দিনের নির্দিষ্ট সময়ে সরবরাহ করা হয়। কয়েকদিন ধরে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের জল সরবরাহ বন্ধ। আর তাতেই নগ্ন হয়ে পড়েছে সমস্যাটা।

হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেল রোগীদের পরিজনরা বোতল নিয়ে বাইরে থেকে জল ভরে আনছেন। লাইনও দিয়েছেন অনেকে। লখিরাম হাঁসদা, ছিতামণি টুডু, অখিল বেসরাও বললেন একশো-দেড়শো মিটার দূরের নলকূপের কথা। দু’টি নলকূপই এখন হাসপাতালের ভরসা। কিন্তু রোগীর পরিজনদের বক্তব্য ওই নলকূপ কার্যত নরককুণ্ড। তার উপর গরম বাড়লেই ওই জলে দুর্গন্ধের মাত্রা বাড়তে থাকে। জলস্তরও কমে যায়। এ বার ফাল্গুনের মাঝামাঝিই সে সমস্যা শুরু হয়ে গিয়েছে।

হাসপাতাল চত্বরে বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদের বরাদ্দে তৈরি হওয়া কল । নিজস্ব চিত্র

বেলপাহাড়ি পঞ্চায়েত সমিতির বিরোধী কংগ্রেস সদস্য সুব্রত ভট্টাচার্যের আক্ষেপ, “বেলপাহাড়ির মতো এলাকার সরকারি গ্রামীণ হাসপাতালের রোগীরা পরিস্রুত পানীয় জল পাচ্ছেন না। বিষয়টি নিয়ে কারও কোনও হেলদোলও নেই।” বেলপাহাড়ির বিএমওএইচ উত্তম মাণ্ডি বলেন, “এ ব্যপারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।” ঝাড়গ্রাম স্বাস্থ্যজেলার সিএমওএইচ অশ্বিনীকুমার মাঝি বলেন, “রোগীদের খুবই সমস্যা হচ্ছে। পরিস্রুত জল প্রকল্পটি ফের চালু করার জন্য পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদকে অনুরোধ করেছি।”

পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদের বর্তমান চেয়ারম্যান সুকুমার হাঁসদা। তিনি মন্ত্রী থাকাকালীনই হাসপাতালে পানীয় জল প্রকল্পের উদ্বোধন হয়েছিল। সুকুমারবাবু বলেন, “খোঁজ নিয়ে শীঘ্র উপযুক্ত পদক্ষেপ করব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

hospital Belpahari
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE