তৃণমূলের পতাকা হাতে মঞ্জু বেরা (চিহ্নিত)। নিজস্ব চিত্র
রবিবার তমলুকের শ্রীরামপুর-১ পঞ্চায়েতের প্রধান মঞ্জু বেরার বাড়িতে হামলার ঘটনায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছিলেন মঞ্জুদেবী সহ জেলা বিজেপি নেতৃত্ব। একই ঘটনায় একশো দিনের কাজ না হওয়ায় বিজেপি পঞ্চায়েত প্রধানের বাড়িতে জবাব চাইতে গেলে তাঁর স্বামী মারধর, শ্লীলতাহানি ও অপমানজনক মন্তব্য করেছিলেন অভিযোগ দায়ের করেছিলেন এক মহিলা।
কিন্তু মঞ্জুদেবীর বাড়িতে হামলার ঘটনায় পুলিশ কাউকে গ্রেফতার না করলেও মঞ্জুদেবীর স্বামী গুরুপদ সহ ৫ জনের বিরুদ্ধে যে মারধর, শ্লীলতাহানি ও অপমানজনক মন্তব্যের অভিযোগ করেছিল তৃণমূল, তার জেরে সোমবার রাতে মঞ্জুদেবীর স্বামীকে গ্রেফতার করে তমলুক থানার পুলিশ। যা নিয়ে পুলিশের নিরপেক্ষ তদন্ত নিয়ে পরিবহণ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর সওয়ালকে কটাক্ষ করেছে বিজেপি। সেই সঙ্গে পুলিশকে দিয়ে মিথ্য়া মামলায় দলীয় নেতা-কর্মীদের জড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখানের অভিযোগও ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে।
তৃণমূল সেই অভিযোগ অস্বীকার করলেও, শ্রীরামপুর-১ পঞ্চায়েতের বিজেপি প্রধান মঞ্জু বেরা বুধবার তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় তাদের অভিযোগেরই সারবত্তা প্রমাণিত হল বলে বিজেপির দাবি। পুলিশ সূত্রে খবর, এ দিন মঞ্জু দেবীর স্বামী গুরুপদকে তমলুক আদালতে তোলা হয়। সেখানে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগকারিণী মানসী বর্মন আদালতে হলফনামা দিয়ে জানান, অভিযুক্তের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে মীমাংসা হয়ে গিয়েছে। তাই অভিযুক্ত জামিন পেলে তাঁর কোনও আপত্তি নেই। যদিও সব শোনার পর এদিন বিচারক গুরুপদকে ১৪দিন জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।
আর একেই হাতিয়ার করে বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, কার্যত চাপ সৃষ্টি করে, ভয় দেখিয়ে যে মঞ্জু বেরাকে তৃণমূলে যোগ দিতে বাধ্য করা হয়েছে, মানসী বর্মনের হলফনামাই তা প্রমাণ করেছে। এদিন সন্ধ্যায় তমলুক শহরের মানিকতলায় তৃণমূলের কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে মঞ্জুদেবীর হাতে দলের পতাকা তুলে দেন তমলুকের তৃণমূল সাংসদ দিব্যেন্দু অধিকারী। তৃণমূলে যোগ দেওয়া নিয়ে মঞ্জুদেবী বলেন, ‘‘রাজ্যে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে যে উন্নয়ন যজ্ঞ চলছে, তাতে শামিল হতে এবং শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে কাজ করতেই তৃণমূলে যোগ দিলাম।’’ তাঁকে কোনওরকম ভয় দেখানো বা চাপ দেওয়া হয়েছিল কি না সেই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘‘আমাকে কেউ কোনওরকম ভয় দেখায়নি বা চাপ দেয়নি।’’ এ দিন মঞ্জুদেবীর সঙ্গেই তৃণমূলে যোগ দেন বিজেপির আর এক পঞ্চায়েত সদস্য কৃষ্ণা দাস।
বিজেপির তমলুক জেলা সভাপতি প্রদীপ দাসের অভিযোগ, ‘‘তৃণমূলের গুন্ডাবাহিনী পঞ্চায়েত অফিসে ও বাড়িতে হামলা চালিয়েছিল। তারপর মিথ্যা মামলা দায়ের করে মঞ্জুদেবীর স্বামীকে গ্রেফতার করে তাঁর উপর চাপ সৃষ্টি করা হয়েছিল। ভয় দেখিয়ে মঞ্জুদেবীকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়ানো হল। একজন অনগ্রসর শ্রেণির মহিলা জনপ্রতিনিধির উপর যে ভাবে অত্যাচার করা হল তা লজ্জাজনক। আগামীদিনে এর উপযুক্ত জবাব পাবে তৃণমূল।’’
মঞ্জুদেবীকে জোর করে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে জেলা তৃণমূল সভাপতি শিশির অধিকারী বলেন, ‘‘বিজেপির পঞ্চায়েত প্রধানের আমাদের দলে যোগ দেওয়ার ঘটনা অত্যন্ত স্বাভাবিক। শুধু মঞ্জুদেবীই নন, বিজেপি-সিপিএম থেকে আরও অনেকে তৃণমূলে আসছেন। জোর করে যোগ দেওয়ানোর অভিযোগ ভিত্তিহীন।’’ এ দিন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নন্দকুমারের বিধায়ক সুকুমার দে, জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ সোমনাথ বেরা প্রমুখ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy