Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

প্রার্থী নিয়ে ক্ষোভ, পথে বিজেপি কর্মীরা

নতুন-পুরনো বিতর্কেই তাল কাটল। রেলশহরে পুরভোটে বিজেপির প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পর চব্বিশ ঘণ্টাও কাটেনি। প্রার্থী নির্বাচনে স্বজনপোষণের অভিযোগে বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহের কুশপুতুল পুড়িয়ে বিক্ষোভ দেখাল দলের একাংশ কর্মী। সোমবার দুপুরে খড়্গপুরের মালঞ্চ রোডের বালাজি মন্দির পল্লি এলাকায় প্রার্থী তালিকা প্রত্যাহারের দাবিতে প্রায় আধ ঘণ্টা বিক্ষোভ চলে।

পোড়ানো হচ্ছে রাহুল সিংহের কুশপুতুল। —নিজস্ব চিত্র।

পোড়ানো হচ্ছে রাহুল সিংহের কুশপুতুল। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
খড়্গপুর শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০১৫ ০০:৪৬
Share: Save:

নতুন-পুরনো বিতর্কেই তাল কাটল।

রেলশহরে পুরভোটে বিজেপির প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পর চব্বিশ ঘণ্টাও কাটেনি। প্রার্থী নির্বাচনে স্বজনপোষণের অভিযোগে বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহের কুশপুতুল পুড়িয়ে বিক্ষোভ দেখাল দলের একাংশ কর্মী। সোমবার দুপুরে খড়্গপুরের মালঞ্চ রোডের বালাজি মন্দির পল্লি এলাকায় প্রার্থী তালিকা প্রত্যাহারের দাবিতে প্রায় আধ ঘণ্টা বিক্ষোভ চলে। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, প্রার্থী তালিকা তৈরির সময় দলের পুরনো কর্মীদের গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। তার পরিবর্তে তালিকায় ঠাঁই পেয়েছেন সদ্য বিজেপিতে আসা কর্মীরা। অবিলম্বে প্রার্থী তালিকা সংশোধন করা না হলে রেলশহরের ৩৫টি ওয়ার্ডেই নির্দল হিসেবে লড়াই করার হুঁশিয়ারিও দেন বিক্ষোভকারী বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের একাংশ।

রেলশহরে গোষ্ঠীকোন্দলে জেরবার তৃণমূল। দলীয় সূত্রে খবর, প্রাক্তন পুরপ্রধান জহরলাল পাল ও শহর তৃণমূল সভাপতি দেবাশিস চৌধুরীর গোষ্ঠীর দ্বন্দ্ব মেটাতে হিমশিম খেতে হয়েছে দলীয় নেতৃত্বকে। প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পরও কোন্দল অব্যাহত। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, গত লোকসভা নির্বাচনের খড়্গপুরে বহু মানুষের সমর্থন পেয়েছিল বিজেপি। কিন্তু পুরভোটের আগে প্রার্থী তালিকা নিয়ে দ্বন্দ্বে এখন কিছুটা হলেও ব্যাকফুটে গেরুয়া শিবির। যদিও এর আগেও প্রকাশ্যে এসেছে বিজেপির দলীয় কোন্দল। গত ৩০ জানুয়ারি খরিদার ১৭ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় বিজেপির সদস্য সংগ্রহ অভিযান চলাকালীন দলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে গোলমাল বাধে। পুরভোটের মুখে প্রার্থী তালিকা ঘোষণার আগেই ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে দেওয়াল লিখে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন বিজেপির পুরনো কর্মী অজয় চট্টোপাধ্যায়। পরে অবশ্য দেওয়াল লিখনগুলি মুছে দেওয়া হয়।

এ দিন বিক্ষোভকারীরা দাবি করেন, বিজেপির জেলা নেতৃত্ব চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা অনুমোদনের জন্য দলের রাজ্য নেতৃত্বের কাছে পাঠায়। কিন্তু রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে যোগসাজশ করে শহর বিজেপি সভাপতি প্রেমচাঁদ ঝা স্বজনপোষণ করে প্রার্থী তালিকার পুনর্বিন্যাস করেছেন। আর এই কাজে দলের রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহেরও মদত ছিল। বিক্ষোভকারী বিজেপি কর্মী সুশান্ত বেহেরা, বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী, নটরাজ ঘোষালদের দাবি, তাঁদের মতো যাঁরা লোকসভা নির্বাচনের বহু আগে থেকেই বিজেপিতে রয়েছেন, তাঁরাই এখন দলে ব্রাত্য। প্রার্থী তালিকা তৈরির তাঁদের মতামতকেও গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। তাঁদের অভিযোগ, “জেলা নেতৃত্ব চাইলেও প্রেমচাঁদ ঝা রাজ্য সভাপতির সঙ্গে আঁতাত করে এ সব করেছেন।”

বিজেপি সূত্রে খবর, এ বার পুরভোটে শহরের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে সুশান্ত বেহেরাকে প্রার্থী করার প্রস্তাব ছিল। কিন্তু সেই আবেদনে গুরুত্ব না দিয়ে রেল মাফিয়া শ্রীনু নায়ডুর স্ত্রী পূজা নায়ডুকে প্রার্থী করা হয়েছে। পূজাদেবী কয়েকদিন আগে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। একইভাবে, কয়েকমাস আগে কংগ্রেস থেকে বিজেপিতে আসা জগদম্বা গুপ্তকে ২১ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী করা হয়েছে। যদিও তাঁর জায়গায় মজদুর মোর্চার নেতা শৈলেশ শুক্লকে প্রার্থী করার কথা ছিল। ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে বি মুরলিধর রাওকে টিকিট দেওয়ার বিষয়টিও মানতে পারছেন না দলের একাংশ কর্মী। ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে রাজীব দাস, ১০ নম্বর ওয়ার্ডে অপর্ণা সেন, ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে পদ্মাবতীকে প্রার্থী না করায় বেজায় চটেছেন একাংশ বিজেপি কর্মী। যদিও এ দিন বিজেপির শহর সভাপতি প্রেমচাঁদ ঝার দাবি, যাঁরা দলের যোগ্য কর্মী, তাঁরা এ সব করেছে বলে তিনি বিশ্বাস করেন না। আর প্রার্থীর গ্রহণযোগ্যতা গুরুত্ব পেয়েছে। তারপর দলের শহর, জেলা ও শেষে রাজ্য নেতৃত্বের সিদ্ধান্তক্রমে তালিকা চূড়ান্ত হয়েছে।

বিজেপির এক সূত্রে খবর, প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করার আগে যখন বিজেপির পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায় কলকাতায় গিয়েছিলেন, তখন প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে তুষারের তুলনায় প্রেমচাঁদ ঝার প্রস্তাবকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। এমনকী কিছু কিছু ক্ষেত্রে টাকার বিনিময়ে প্রার্থীর নাম চূড়ান্ত করা হয় বলে দলের অন্দরে অভিযোগ উঠছে। তুষারবাবু বলেন, “এই ধরনের কিছু অভিযোগ পেয়েছি। যদি তা প্রমাণিত হয় তবে প্রার্থিপদ বাতিল হবে। যিনি টাকা দিয়েছেন বলে অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” একই সঙ্গে, তুষারবাবুর বক্তব্য, “১৪০ জন আবেদনকারীর মধ্যে সবাইকে তো প্রার্থী করা যায় না। যাঁরা টিকিট পেলেন না, তাঁদের ক্ষোভ থাকতে পারে। তবে ওই কারণে যদি কেউ দল বিরোধী কাজ করে, সেটা বরদাস্ত করা হবে না।” তাঁর হুঁশিয়ারি, “যাঁরা প্রকাশ্যে রাজ্য সভাপতিকে অসম্মান করেছে, তাঁদের চিহ্নিত করে দলীয়ভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE