কাঁথি-জুনপুট রাস্তার ধারে ডাঁই করে রাখা মোরাম।
অনিয়মটাই নিয়মে পরিণত হয়েছে। রাজ্য সড়ক এমনকী জাতীয় সড়কের ধারে স্তূপাকারে রেখে দেওয়া হচ্ছে বালি, সিমেন্ট, স্টোনচিপস্-এর মতো ইমারতি দ্রব্য। চলছে দেদার ব্যবসাও।
সঙ্কীর্ণ রাস্তায় দ্রুতগতিতে ছুটছে গাড়ি। দুর্ঘটনাও ঘটছে আকছার। রাস্তা দখলমুক্ত করতে প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েও এতদিন কোনও কাজ হয়নি বলে অভিযোগ। দুর্ঘটনা বাড়তে থাকায় সম্প্রতি পূর্ব মেদিনীপুর জেলার বিভিন্ন রাস্তা দখলমুক্ত করতে উদ্যোগী হয়েছে প্রশাসন। চলছে অভিযানও। যদিও নিয়মিত অভিযান না চালালে ফল কতটা মিলবে, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছেন জেলারই একাংশ বাসিন্দা।
সম্প্রতি জেলাশাসক রশ্মি কমলের দফতর থেকে নির্দেশিকা জারি করে জেলার সব রাস্তার ধার থেকে ইমারতি দ্রব্য সরিয়ে ফেলতে বলা হয়েছে। তারপরেও কাজ না হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা সংস্থার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে পুলিশকে।
দিঘা-কলকাতা রাস্তা দিয়ে দিনে কয়েক হাজার যানবাহন চলাচল করে। রাস্তার ধারেই ইমারতি দ্রব্য রেখে রীতিমতো ব্যবসা চালানো হয়। রাস্তার নন্দকুমার থেকে দিঘা পর্যন্ত চণ্ডীপুর, বাজকুল, মারিশদা, নাচিন্দা, দেউলিবাংলো, চৌধুরী মোড়, বালিসাই ও রামনগরে অবস্থা শোচনীয়। কাঁথি মহকুমা বাস পরিবহণ শ্রমিক ইউনিয়নের সম্পাদক শিবরাম মাইতির অভিযোগ, ‘‘রাস্তার উপর যে ভাবে ইট, বালি, মোরাম আর স্টোনচিপস্ ফেলে রাস্তার বেশিরভাগ অংশ দখল করে রাখা হয়। ইমারতি দ্রব্য পড়ে রাখায় বাস, লরি ছাড়াও বিভিন্ন যান চালকদের গাড়ি চালাতে বেশ অসুবিধা হয়।’’ জেলাশাসকের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে শিবরামবাবু বলেন, ‘‘আগেও সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রশাসনে অভিযোগ জানানো হয়েছে। তারপরেও রাস্তা দখলমুক্ত করতে কোনও উদ্যোগ চোখে পড়েনি। জেলাশাসকের সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাই।’’
হলদিয়া-মেচেদা ৪১ নম্বর জাতীয় সড়কে চলছে অভিযান ।—নিজস্ব চিত্র।
জেলাশাসকের নির্দেশে বৃহস্পতিবার থেকেই দিঘা-কলকাতা রাস্তার নন্দকুমার থেকে দিঘা পর্যন্ত রাস্তার ধারে জমে থাকা ইমারতি দ্রব্য সরাতে অভিযানে নেমেছে পুলিশ-প্রশাসন। এ দিন কাঁথি মহকুমার বাজকুল থেকে হেঁড়িয়া পর্যন্ত রাস্তার ধারে জমা করে রাখা ইট, বালি, স্টোনচিপস্, মোরাম সরাতে পুলিশ অভিযান চালাবে। কাঁথির এসডিপিও ইন্দিরা মুখোপাধ্যায় বলেন, “বুধবার হেঁড়িয়া থেকে বাজকুল পর্যন্ত এলাকায় রাস্তার ধারে স্তূপাকার সামগ্রী সরিয়ে নেওয়ার জন্য মাইকের মাধ্যমে প্রচার করা হয়। তারপরেও যারা ইমারতি দ্রব্য পেলে রেখেছেন বৃহস্পতিবার সেগুলি সরিয়ে দিতে অভিযান চালানো হয়।” আগামী কয়েকদিন বাজকুল থেকে দিঘা শহরের বাইপাস পর্যন্ত এই অভিযান চলবে বলেও জানান তিনি।
হলদিয়া-মেচেদা, বাজকুল-এগরা, নন্দীগ্রাম-চণ্ডীপুর রাজ্য সড়কেও অবস্থা কমবেশি একই। জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কলকাতা-মুম্বই ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক ও হলদিয়া-মেচেদা ৪১ নম্বর জাতীয় সড়ক দিয়ে মালবাহী লরি, তেল, গ্যাস ট্যাঙ্কার-সহ ভারী যানবাহন, যাত্রীবাহী বাস, ট্যাক্সি চলাচল করে। কিন্তু ওই রাস্তাগুলির পাশে বালি, মোরাম পড়ে থাকে। দীর্ঘদিন নির্মাণ সামগ্রী পড়ে থাকলেও দেখার কেউ নেই। প্রা
ইমারতি দ্রব্য পড়ে থাকায় প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে ৪১ নম্বর জাতীয় সড়কেও। স্থানীয় বাসিন্দা উৎপল মাইতি, শিক্ষক মিহির দাস বলেন, “এটা সত্যি সদর্থক পদক্ষেপ। প্রায়ই নানা দুর্ঘটনার খবর শুনতে পাই। জাতীয় সড়কে আরও নজরদারি চালানো উচিত।” পুলিশ সূত্রে খবর, ৪১ নম্বর জাতীয় সড়কের হলদিয়ার সংলগ্ন এলাকাগুলিতে অভিযান চালানো হচ্ছে। হলদিয়ার কাপাসএরিয়া, ব্রজলালচক, টাউনশিপ, মঞ্জুশ্রী মোড় ও সিটি সেন্টারের রাস্তা দিয়ে ভারী যান চলাচল করে। ইমারতি দ্রব্য পড়ে থাকায় রাস্তা সঙ্কীর্ণ হয়ে যাচ্ছে। ফলে যান যাতায়াতেও সমস্যা হচ্ছে। রয়েছে দুর্ঘটনার আশঙ্কাও। এই সব রাস্তা থেকেই নির্মাণ সামগ্রী সরিয়ে দেওয়া হবে বলে জানান পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে।
হলদিয়ার বিডিও রাজর্ষি নাথ বলেন, ‘‘জাতীয় সড়কে অবৈধ নির্মাণ সামগ্রী পড়ে থাকায় যান চলাচলের ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি হচ্ছিল। এ নিয়ে বিস্তর অভিযোগও উঠছিল।’’ তাঁর আরও অভিযোগ, ‘‘নির্মাণ সামগ্রী পড়ে থাকায় দুর্ঘটনাও ঘটছে। লরি, ডাম্পারের মতো ভারী গাড়ির সঙ্গে ছোট গাড়ির সংঘর্ষ ঘটছে। যান চলাচলের জায়গা ছোট হয়ে আসায় বাইক দুর্ঘটনাও ঘটছে। তাই এই অভিযান শুরু হয়েছে। আগামী দিনেও অভিযান চলবে।”
(তথ্য সহায়তা: আনন্দ মণ্ডল, সুব্রত গুহ, অপ্রমেয় দত্তগুপ্ত)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy