E-Paper

‘মা, চুরি করিনি’, সিসি ক্যামেরাতেও দেখা গেল সেই সত্য

কৃষ্ণেন্দু আর বেঁচে নেই। চোর অপবাদের অপমানেই আগাছানাশক পান করে সপ্তম শ্রেণির ওই ছাত্র আত্মহত্যা করেছে বলে পরিবারের দাবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০২৫ ০৬:৫১
কৃষ্ণেন্দু দাস।

কৃষ্ণেন্দু দাস। ছবি: সংগৃহীত।

শাস্তি পেয়ে, মার খেয়েও চোদ্দো বছরের কিশোর বার বার দাবি করেছিল, সে দোকান থেকে চিপসের প্যাকেট চুরি করেনি, কুড়িয়ে পেয়েছে। সুইসাইড নোটেও একই কথা লিখেছিল সে। এ বার সেই দোকানের সিসিটিভি ফুটেজেও দেখা গেল, সত্য কথাই বলেছিল কৃষ্ণেন্দু দাস।

কৃষ্ণেন্দু আর বেঁচে নেই। চোর অপবাদের অপমানেই আগাছানাশক পান করে সপ্তম শ্রেণির ওই ছাত্র আত্মহত্যা করেছে বলে পরিবারের দাবি। যে দোকান থেকে চিপসের প্যাকেট চুরি করার অপবাদ তাকে দেওয়া হয়েছিল, সেখানকার সিসিটিভি ফুটেজ পুলিশের হাতে এসেছে। দেখা যাচ্ছে, দোকানের সামনে সিঁড়িতে পড়ে থাকা সবুজ রঙের চিপসের প্যাকেট কুড়িয়ে নিচ্ছে সে।

গোঁসাইবেড় এলাকায় কৃষ্ণেন্দুর অস্বাভাবিক মৃত্যুর পরে জনরোষ ছড়িয়েছে। ওই দোকানের মালিক, পেশায় সিভিক কর্মী শুভঙ্কর দীক্ষিতের বাড়ি ও দোকানে বৃহস্পতিবার রাতে ভাঙচুর চালিয়েছেন ক্ষুব্ধ গ্রামবাসী। শুভঙ্করের পরিবার নিরাপত্তা চেয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছে। শুভঙ্করের স্ত্রী নিশা-র অভিযোগ, ‘‘দোকানে তালা লাগিয়ে দিয়েছে। বাড়ি ভাঙচুর করেছে। আমাদের পেট্রোল দিয়ে পুড়িয়ে মারার চেষ্টাও করেছিল।’’ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পাঁশকুড়া ও কোলাঘাট থানার পুলিশ এসে লাঠিচার্জ করে। তমলুকের মহকুমা পুলিশ আধিকারিক আফজল আবরার বলেন, ‘‘ভাঙচুরের ঘটনায় ছ’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অভিযুক্তদের আদালতে তোলা হলে বিচারক ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন। বাকিদের খোঁজ চলছে।’’

কৃষ্ণেন্দুর পরিবারের তরফে এখনও কারও বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ জানানো হয়নি। ছেলেহারা মা সুমিত্রা দাস বলেন, ‘‘চুরির অপবাদ দিয়েছিল আমার সন্তানকে। মারধরও করেছে। তার জেরেই এই ঘটনা। নিশ্চিত ভাবেই পুলিশে অভিযোগ জানাব। কিন্তু যারা প্রতিবাদ করতে গেল, আগে তাদের ছাড়িয়ে আনি। তার পরেই সন্তান হারানোর বিচার চেয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হব।’’

স্থানীয় সূত্রে খবর, সিভিক কর্মী কৃষ্ণেন্দুকে বকাবকি ও কান ধরে ওঠবস করান। কৃষ্ণেন্দুর মা-ও অভিযোগ শুনে দোকানে গিয়ে সকলের সামনে ছেলেকে চড় মেরে শাসন করেন। সিসি ক্যামেরার ফুটেজেও তা দেখা যাচ্ছে। মনোচিকিৎসকদের মতে, ঘরের মধ্যে শাসন আর সর্বসমক্ষে শাসনের মধ্যে অনেকটা ফারাক। বয়ঃসন্ধির অতি স্পর্শকাতর মনে প্রকাশ্য শাসন অনেক বেশি নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। কিন্তু বহু অভিভাবক তা বোঝেন না।

মনোচিকিৎসক আলোক পাত্রের কথায়, ‘‘সন্তানের মধ্যে হতাশা সহ্য করার ক্ষমতা গড়তে অভিভাবকদের সাহায্য করা উচিত। যে কোনও জটিল পরিস্থিতির চটজলদি সমাধান হিসেবে সন্তানকে মারধরের বদলে ঠান্ডা মাথায় তা মোকাবিলা করতে হবে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Panskura Suicide Minor Child Harassment

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy