Advertisement
০৪ মে ২০২৪
Keshiari TMC Leader Murder

খুনের তদন্তে বালি-যোগের ইঙ্গিত পাচ্ছে সিআইডি

শুরুতে তদন্তে নামে পুলিশই। পরে তদন্তভার গিয়েছে সিআইডি- র হাতে। এখনও এই খুনের কিনারা হয়নি। তদন্তকারী সংস্থার আশা, শীঘ্রই কিনারা হবে।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

বরুণ দে
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০২৩ ০৮:০৯
Share: Save:

মামলায় নতুন মোড়।‌ বালি- যোগের সম্ভাবনা।

কেশিয়াড়ির তৃণমূল নেতা মৃত্যুঞ্জয় ওরফে ঝাড়েশ্বর সাঁতরা খুনের মামলা। সেই মামলায় সদ্য বহিষ্কৃত তৃণমূল নেতা ফটিক পাহাড়ি সহ দু’জনকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি। তদন্তে নেমে খুনের পিছনে বালি-যোগের ইঙ্গিত পাচ্ছে তদন্তকারী সংস্থা। তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, মৃত্যুঞ্জয় এক সময়ে ফটিকেরই ‘ডান হাত’ ছিলেন। তবে পরে দু’জনের ‘দূরত্ব’ বেড়েছিল। এর পিছনে না কি ছিল বালি কারবারই। কেশিয়াড়িতে সুবর্ণরেখার বুকে বালির অবৈধ কারবারের অভিযোগ নতুন নয়। লক্ষ লক্ষ টাকার কারবার চলে। বালি কারবারিদের কাছে কি ‘চোখের বালি’ হয়ে উঠেছিলেন মৃত্যুঞ্জয়, তাই কি তাঁকে খুন হতে হয়েছে, তদন্তে নেমে খতিয়ে দেখছে সিআইডি।

সূত্রের খবর, ইতিমধ্যে খুন হওয়া নেতার পরিজনেদের সঙ্গে কথা বলেছেন তদন্তকারীরা। ‘মৃত্যুঞ্জয় এক সময়ে ফটিকের ডান হাত ছিলেন’, এই স্বীকারোক্তি করেছেন পরিজনেরাও। ৪ সেপ্টেম্বর কেশিয়াড়ি পঞ্চায়েত সমিতির বোর্ড গঠনের দিন ধার্য রয়েছে। তার আগে সমিতির ৩ তৃণমূল সদস্যের গ্রেফতারি নিয়ে চর্চা তুঙ্গে। যাঁরা দলের অন্দরে ‘বিদ্রোহ’ ঘোষণা করেছিলেন, ওই ৩ জন তাঁদের অন্যতম। মৃত্যুঞ্জয় দলের অঞ্চল সভাপতি ছিলেন। খুনের ঘটনাটি ২০১৭ সালের ডিসেম্বরের। পরের বছর অর্থাৎ, ২০১৮ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচন ছিল। বালি কারবার যে এলাকায় চলে, সেই ভসরাঘাটে ঢোকার সময়ে তাঁর উপর চড়াও হয়েছিল সশস্ত্র দুষ্কৃতী দল বলে অভিযোগ।

শুরুতে তদন্তে নামে পুলিশই। পরে তদন্তভার গিয়েছে সিআইডি- র হাতে। এখনও এই খুনের কিনারা হয়নি। তদন্তকারী সংস্থার আশা, শীঘ্রই কিনারা হবে। একাধিক মহলের পর্যবেক্ষণ, এই মামলায় হঠাৎ করেই তদন্ত ‘গতি’ পেয়েছে। সিআইডি গ্রেফতার করেছে ফটিক পাহাড়ি এবং কার্তিক পালুইকে। দু’জনেই পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য। অন্য একটি প্রতারণার মামলায় রামপদ সিংহ নামে পঞ্চায়েত সমিতির আরেক তৃণমূল সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। কয়েক দিন আগেই কেশিয়াড়ি পঞ্চায়েত সমিতির বোর্ড গঠনের সভা স্থগিত হয়েছে। গত ১০ অগস্ট সমিতির বোর্ড গঠন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা হয়নি। পরে কেশিয়াড়ি পঞ্চায়েত সমিতির বোর্ড গঠন নিয়ে মামলাও হয়েছিল কলকাতা হাই কোর্টে। মামলা ঠুকেছিলেন সমিতির ১৫ জন তৃণমূল সদস্য। এখানে সমিতির ২৭ জন সদস্যের মধ্যে তৃণমূলেরই ২৩ জন। এঁদের মধ্যেই ‘আড়াআড়ি’ বিভাজন রয়েছে। তৃণমূলের একপক্ষ চেয়েছিল, সমিতির সভাপতি হন ফটিক পাহাড়ি। আরেকপক্ষ চেয়েছিল সভাপতি হন উত্তম শীট। জেলা নেতৃত্বের ‘হুইপ’ ছিল উত্তমকে সভাপতি করার। দলেরই একাংশ সেই ‘হুইপ’ মানেননি। ঘটনাচক্রে, এর পরপরই ফটিকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয় দল। তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। মামলার প্রেক্ষিতে কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশ, আইনানুযায়ী (পঞ্চায়েতের) নির্ধারিত সময়ের (স্টিপুলেটেড টাইম) মধ্যেই কেশিয়াড়ি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, সহ সভাপতি নির্বাচন করতে হবে। সমিতির সভাপতি, সহ সভাপতি নির্বাচনের জন্য ফের ৪ সেপ্টেম্বর বৈঠক ডাকা হয়েছে। তার আগেই সিআইডি- র হাতে গ্রেফতার হলেন ‘বিদ্রোহী’ ফটিকেরা।

এখন ফটিক সহ দু’জন সিআইডি হেফাজতে রয়েছেন। রামপদ পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন। ফটিকদের ১৪ দিনের জন্য হেফাজতে নিয়েছে সিআইডি। সূত্রের খবর, খুনের পিছনে বালি- যোগের ইঙ্গিত পেয়েই ধৃতদের ১৪ দিনের জন্য হেফাজতে চেয়েছিল তদন্তকারী সংস্থা। প্রাথমিকভাবে তাদের অনুমান, খুনের পিছনে গভীর ষড়যন্ত্র থেকে থাকতে পারে। তদন্তে না কি বালি-যোগের ইঙ্গিত মিলেছে? রবিবার সিআইডি- র এক কর্তার জবাব, ‘‘তদন্তের ব্যাপারে এখনই কিছু বলব না।’’ হাই কোর্টে সমিতির বোর্ড গঠন নিয়ে যে মামলা হয়েছিল, তার মূল মামলাকারী ছিলেন কার্তিকই। শনিবার যখন কোর্টে নিয়ে আসা হয়েছিল রামপদকে, তখন তিনি দাবি করেছেন, ‘‘বোর্ড গঠনে অংশগ্রহণ করতে না দেওয়ার জন্যই এই রাজনীতি।’’ ফটিক শুনিয়েছেন, ‘‘সময় কথা বলবে।’’

ফটিকদের গ্রেফতারিতে ‘স্বস্তি’ শাসক দলের ‘ক্ষমতাসীন’ শিবিরে। তৃণমূলের মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা শোনাচ্ছেন, ‘‘দলের অঞ্চল সভাপতি খুন হয়েছেন। দোষীদের শাস্তি হবে না? ’’ জেলা বিজেপির মুখপাত্র অরূপ দাসের মন্তব্য, ‘‘কেশিয়াড়িতে ভয়ঙ্কর খেলা হচ্ছে। তৃণমূলের বিক্ষুব্ধ নেতারাও সেই খেলার শিকার!’’

কেশিয়াড়িতে অঙ্ক জটিল পৃঃ ক ২

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

midnapore
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE