প্রহৃত: হাসপাতালে প্রধান শিক্ষক চণ্ডীচরণ মান্না। --নিজস্ব চিত্র
জেলায় জেলায় সভা করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বার্তা, ‘সিন্ডিকেট, তোলাবাজি, কাটমানি চলবে না’। কিন্তু নেত্রীর কথা যে আদৌ দলীয় কর্মীদের কানে পৌঁছচ্ছে না তার ফের প্রমাণ মিলল পূর্ব মেদিনীপুরে। ময়নার এক স্কুলে শ্রেণিকক্ষ তৈরির বরাত নিয়ে গোলমালে প্রধান শিক্ষককে বেধড়ক মারের অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বুথ কমিটির সভাপতির বিরুদ্ধে। ওই বুথ সভাপতি ঠিকাদারিও করেন। প্রধান শিক্ষক জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
বৃহস্পতিবার আক্রান্ত শিক্ষক চণ্ডীচরণ মান্না থানায় লিখিত অভিযোগ করেন তৃণমূল বুথ সভাপতি সুব্রত জানা-সহ পাঁচ জনের বিরুদ্ধে। জেলার পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া বলেন, ‘‘অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা দায়ের হয়েছে পাঁচ জনের বিরুদ্ধে। তদন্ত শুরু হয়েছে।’’
রামচক পঞ্চায়েতের মগরা প্রাথমিক স্কুলের তিনটি শ্রেণিকক্ষ নির্মাণে সর্বশিক্ষা মিশন থেকে প্রায় ১৪ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। গ্রাম শিক্ষা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজের বরাত পেয়েছেন পরমানন্দপুরের এক ঠিকাদার। মগরার বাসিন্দা তৃণমূল বুথ সভাপতি সুব্রত জানা কাজের বরাত না পেয়ে প্রধান শিক্ষককে হুমকি দেন বলে অভিযোগ। বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ সাইকেলে পিংলার বারাঙ্গাদাঁড়ি গ্রামের বাড়ি ফিরছিলেন চণ্ডীচরণবাবু। তাঁর অভিযোগ, বলাইপন্ডা বাজারের কাছে সুব্রতবাবু ও তাঁর দলবল তাঁকে জোর করে তৃণমূলের অঞ্চল অফিসে নিয়ে যায়। তারপর প্লাস্টিকের পাইপ দিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয়। মাথায় এবং সারা শরীরে চোট নিয়ে কোনও ক্রমে বাড়ি ফেরেন তিনি।
বৃহস্পতিবার হাসপাতালে শুয়ে চণ্ডীচরণবাবু বলেন, ‘‘হুমকি চলছিলই। ওই দিন দলীয় কার্যালয়ে নিয়ে গিয়ে মারধর করে ওরা। তারপর আমাকে দিয়ে মুচলেকা লিখিয়ে নেয় যে, স্কুলের নির্মাণ কাজে নানা অনিয়ম হচ্ছে।’’ স্কুলের গ্রামশিক্ষা কমিটির সভাপতি, সিপিআইয়ের পঞ্চায়েত সদস্য সুজন জানার অভিযোগ, ‘‘কমিটির সদস্য ও গ্রামবাসী মিলে ঠিকাদার নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কিন্তু ওই কাজের বরাত না পাওয়ায় গ্রামের সুব্রত জানা প্রধান শিক্ষককে কিছুদিন ধরে হুমকি দিয়ে যাচ্ছিল। আর ওই দিন যা ঘটেছে, তার নিন্দা করার ভাষা নেই।’’
তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করে সুব্রত জানা দাবি করেছেন, তিনি স্কুলের কাজ করতেই চাননি। বরং তাঁর পাল্টা অভিযোগ, ‘‘প্রধান শিক্ষক চাইছিলেন গ্রামের কয়েকজনকে নিয়ে স্কুলের কাজ করতে। স্থানীয় যুবকেরা তাঁর সঙ্গে কথা গিয়েছিলেন। তখন উনি মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কুৎসিত মন্তব্য করেন। তাই একটা গোলমাল হয়েছে। আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম না।’’ ঠিকাদারকে বাঁচিয়ে, প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন স্থানীয় বিধায়কও। তৃণমূল বিধায়ক সংগ্রাম দোলাই বলেন, ‘‘প্রধান শিক্ষক আর্থিক তছরুপে জড়িত বলে গ্রামবাসী ক্ষুব্ধ ছিলেন। তার জেরেই ওই ঘটনা। এর সঙ্গে দলের যোগ নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy