বসন্ত এসে এসে চলে গিয়েছে অন্তত ১৬ বার। তমলুক জেলা সদর হয়েছে সেই ২০০১ সালে। কিন্তু অবসর বিনোদনে আধুনিকতার ছাপ আজও গায়ে লাগেনি সাবেক তাম্রলিপ্তের। বহু চর্চিত ভ্যালেন্টাইনস ডে-ও তাই কেটে গেল বিরস বদনে। অন্তত তেমনই জানালেন শহরের বাসিন্দা শ্রীদীপ্তা পাল। তমলুক কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী শ্রীদীপ্তা ভালবাসেন তথ্য প্রযুক্তি সংস্থায় কাজ করা তরুণ বিনয়কে। বিনয়ের ইচ্ছে ছিল ১৪ ফেব্রুয়ারি তাঁরা কলকাতায় কাটাবেন। কিন্তু তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে হবে বলে রাজি হননি শ্রীদীপ্তা। তাঁর আক্ষেপ, তমলুকেই যদি একটা বিনোদন পার্ক থাকত তবে এমন হত না।
সে কথা সত্যি বটে। ৮ থেকে ৮০— কারও জন্যও তেমন ভাল বিনোদনের ব্যবস্থা নেই তমলুক শহরে। বিশেষত ১৮ পেরনো যুবক-যুবতীরা যে মনের মানুষটিকে নিয়ে একটু সময় কাটাবেন, এমন জায়গা একেবারেই নেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আর এক তরুণী ঠোঁট উল্টে বললেন, ‘‘থাকার মধ্যে আছে শহরের হাতে গোনা চারটি রেস্তোরাঁ, তাও আবার সন্ধ্যের আগে খোলে না। আর বর্গভীমার মন্দির।’’ কিন্তু সেখানেও ঠাঁই নেই। বিশেষত, ফাল্গুনে একের পর এক বিয়ের তারিখ। বসন্ত পেরিয়ে যায় বর কনে আর বরযাত্রীর ভিড় দেখে দেখে। বসার সামান্য জায়গা পাওয়া দায়। আর আছে রূপনারায়ণের চর। তাও কখনও ভেসে যায় জোয়ারের জলে।
সাধ্য থাকলে অনেকেই চলে যান হলদিয়ায়। সেখানে শপিং মল, সিনেমা হল— তবু খানিক মনোরঞ্জন হয়। তেমনই গিয়েছিলেন বছর ছাব্বিশের অন্তরা মণ্ডল। তিনি চাকরি করেন তমলুকেই। কিন্তু তাঁর প্রেমিক থাকেন মধ্য প্রদেশ ভ্যালেন্টাইনস ডে-তে দু’জনে এসেছিলেন হলদিয়ায়। অন্তরার প্রশ্ন, “যা হলদিয়ায় হয়, তা তমলুকে কেন হয় না?”
সে প্রশ্ন তুলেছেন বছর সত্তরের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক সুধাংশু বেরাও। তাঁর বক্তব্য, “ছেলে মেয়েরা কর্মসূত্রে বাইরে থাকে। আমি আর আমার স্ত্রী থাকি। বিকেলে কোথায় গেলে সময়টা কেটে যায়। কিন্তু সে সুযোগ কই!’’ সব শুনে পুর প্রধান রবীন্দ্রনাথ সেন অবশ্য বললেন, “হলদিয়া শিল্পাঞ্চল। ওখানে অনেক কিছুই সহজে করা সম্ভব। তবে আমি হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদের সাথে কথা বলে দেখব, যদি ওই ধরনের পার্ক বা মল তমলুকে করা সম্ভব হয়, আমরা নিশ্চয়ই উদ্যোগী হব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy