Advertisement
০২ মে ২০২৪
জনসংযোগে নয়া কৌশল

পুড়ে যাওয়া পার্টি অফিস ফের বানাতে অর্থ সংগ্রহে সিপিএম

গরিব-মধ্যবিত্তের একটা বড় অংশের সমর্থন হারিয়েছে দল। সেই সমর্থন ফিরে পেতেই এখন মরিয়া সিপিএম। আর তার জন্য নেওয়া হচ্ছে নানা কৌশল। মেদিনীপুরে গত মার্চে পুড়ে যাওয়া লোকাল কমিটির কার্যালয় পুনর্নির্মাণের জন্য অর্থ সাহায্য চেয়ে শহরে রীতিমতো পোস্টার সাঁটিয়েছে তৃণমূল।

আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত সিপিএমের কার্যালয়। (ইনসেটে) পোস্টার।

আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত সিপিএমের কার্যালয়। (ইনসেটে) পোস্টার।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০১৫ ০০:৪১
Share: Save:

গরিব-মধ্যবিত্তের একটা বড় অংশের সমর্থন হারিয়েছে দল। সেই সমর্থন ফিরে পেতেই এখন মরিয়া সিপিএম। আর তার জন্য নেওয়া হচ্ছে নানা কৌশল। মেদিনীপুরে গত মার্চে পুড়ে যাওয়া লোকাল কমিটির কার্যালয় পুনর্নির্মাণের জন্য অর্থ সাহায্য চেয়ে শহরে রীতিমতো পোস্টার সাঁটিয়েছে তৃণমূল। তৃণমূলের গুন্ডামির ছবিটা তুলে ধরে মানুষের মনে দাগ কাটতেই সিপিএমের এই পদক্ষেপ রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের ধারণা।

সিপিএমের শহর জোনাল সম্পাদক সারদা চক্রবর্তী বলেন, “তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কতীরাই ওই ঘৃণ্য ঘটনা ঘটিয়েছিল। শহরের সব গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষ তার ঘটনার নিন্দা করেছিলেন। তাই মানুষের কাছে অর্থ সাহায্য চাইছি।’’

শাখা কমিটির অফিস পুনর্নির্মাণে যে অর্থের প্রয়োজন, তা সংগ্রহ করা শহর সিপিএমের কাছে খুব একটা কঠিন নয়। কৌটো নিয়ে দিন কয়েক বেরোলেই হয়তো প্রয়োজনীয় অর্থ উঠে আসবে। তাহলে কেন এ ভাবে পোস্টার সাঁটানো? সিপিএমের এক জোনাল সদস্যের মতে, “প্রতিনিয়ত নানা ঘটনা ঘটছে। এর মধ্যে কিছু ঘটনা ঘটছে যা সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে আলোড়ন তৈরি করে। এ বাবে প্রভাব বিস্তার করতে না পারলে দলের ভিত মজবুত করা কঠিন। তাছাড়া প্রচারও একটা লড়াই।’’ তিনি আরও জানান, ওই ঘটনায় তৃণমূল দুঃখপ্রকাশ করেনি। হামলার নিন্দাও করেনি। অথচ, পোস্টার দেখে তৃণমূলেরই এক কর্মী জানিয়েছেন, তিনি পার্টি অফিস পুনর্নির্মাণে ১০ বস্তা সিমেন্ট দেবেন।

গত মার্চের গোড়ায় রাতের অন্ধকারে মেদিনীপুর শহরে একের পর এক বিরোধী দলের অফিসে হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। সিপিএমের কোতবাজার শাখা কমিটির অফিসে হামলা চলে। আগুনে পার্টি অফিসের একাংশ পুড়ে যায়। গুরুত্বপূরর্ণ কাগজপত্র পুড়ে ছাই হয়ে যায়। তৃণমূল অবশ্য এখনও দাবি করে, ওই ঘটনার সঙ্গে দলের কেউ যুক্ত নয়। তৃণমূলের শহর সভাপতি আশিস চক্রবর্তী বলেন, “দলের নামে কুত্‌সা-অপপ্রচার করতেই ওই ঘটনা ঘটানো হয়েছিল।’’ আর দলীয় কার্যালয় পুনর্নিমাণে সিপিএমের উদ্যোগ প্রসঙ্গে আশিসবাবুর মন্তব্য, “এ সব নাটক। সিপিএম মানুষের সমর্থন আর কোনও দিনও ফেরত পাবে না।”

সিপিএমের এই কৌশল নিয়ে কোনও মন্তব্য না করলেও পার্টি অফিসে হামলার নিন্দা করেছে কংগ্রেস, বিজেপি। শহর কংগ্রেস সভাপতি সৌমেন খান বলেন, “যে কোনও দলের অফিসে হামলার ঘটনাই নিন্দনীয়। এ ভাবে হামলা দুষ্কৃতীরাই করতে পারে।’’ বিজেপির শহর সভাপতি অরূপ দাসের বক্তব্য, “ওই দিন তো আমাদের দলের জেলা অফিসের সামনেও তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা হামলা চালায়। পতাকা-ফেস্টুন ছিঁড়ে পুড়িয়ে দেয়।”

সিপিএম নেতৃত্ব মনে করেন, ঘুরে দাঁড়ানোর এটাই সঠিক সময়। শহরাঞ্চলে তুমুল তৃণমূল-বিরোধী হাওয়া তৈরি হচ্ছে। তৃণমূলের যে অংশ শাসক দলে বীতশ্রদ্ধ, তারাও লাল ঝান্ডার কাছাকাছি থাকতে চাইছেন। তাই নিবিড় জনসংযোগের জন্য এই সময়টায় গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। দলের এক জোনাল সদস্যের জবাব, “মানুষকে সঙ্গে না নিয়ে রাজনীতি হয় না। তাই স্থানীয় বিষয় বাছাই করে নিবিড় জনসংযোগে জোর দেওয়া হচ্ছে।’’ একের পর এক ঘটনায় তৃণমূলের কোণঠাসা পরিস্থিতিকে কাজে লাগানার জন্য দলের অন্দরে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেই খবর। বলা হয়েছে, শত্রুর বিরুদ্ধে প্রচারে নেতৃত্বের বক্তব্য হবে আবেদনমূলক। আর প্রচার তথ্য। সিপিএমের পোস্টারে তাই পুড়ে যাওয়া পার্টি অফিসের ছবিও রয়েছে। পোস্টার সাঁটানো হয়েছে জনবহুল এলাকায়। যাতে পথে বেরোলেই মানুষের চোখে পড়ে। একটা প্রতিক্রিয়া হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE