Advertisement
০৪ মে ২০২৪
লক্ষ্য স্বনির্ভরতা

হোমের মেয়েদের নার্সিং প্রশিক্ষণ

ছোট থেকেই হোমে বেড়ে ওঠা অনিমা সাহা, জেসমিন খাতুনদের। উচ্চ মাধ্যমিকের পর বাড়ি ফেরার পালা। কিন্তু ঠিকানাহীন অনিমা, জেসমিনরা যাবেন কোথায়!

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০১৬ ০০:২৩
Share: Save:

ছোট থেকেই হোমে বেড়ে ওঠা অনিমা সাহা, জেসমিন খাতুনদের। উচ্চ মাধ্যমিকের পর বাড়ি ফেরার পালা। কিন্তু ঠিকানাহীন অনিমা, জেসমিনরা যাবেন কোথায়!

কারও কারও বাড়ি রয়েছে। কিন্তু অভাব নিত্য সঙ্গী। বহু কষ্টে দিন চলে। ছেলেমেয়ের দু’বেলা থাকা-খাওয়া আর পড়াশোনা নিশ্চিত করতে হোমে রেখে গিয়েছিলেন। তিনিই বা বাড়ি ফিরে কী ভাবে দিন কাটাবেন! আরও কারও আবার বাড়িরও খোঁজ নেই।

এ বার সেই দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি দিতে হোমের মেয়েদের নার্সিং প্রশিক্ষণ দিতে উদ্যোগী হল রাজ্য সরকার। রাজ্যের সব হোমে থাকা অষ্টম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির মেয়েদের এই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। প্রশিক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে। গত মঙ্গলবার পশ্চিম মেদিনীপুরের বিদ্যাসাগর বালিকা ভবনে সেই প্রশিক্ষণের সূচনা হল। প্রশিক্ষণ শেষে যাতে সকলে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে তারও ব্যবস্থা করবে ওই সংস্থা।

প্রশিক্ষণের নাম দেওয়া হয়েছে ‘বেড সাইড অ্যাসিস্ট্যান্ট’। বর্তমানে শহরে তো বটেই, গ্রামেগঞ্জেও বহু নার্সিংহোম ও বেসরকারি হাসপাতাল গড়ে উঠছে। সেখানেই তাঁদের নিয়োগ করা হবে। প্রশিক্ষণের দায়িত্বপ্রাপ্ত স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার অংশীদার সদস্য সোমা মুখোপাধ্যায়ের কথায়, “বেসরকারি নাসিংহোম ও হাসপাতালে তো রোগীর সেবার জন্য অনেক কর্মীর প্রয়োজন হয়। সেখানেই ওদের আমরা নিয়োগের চেষ্টা করব।”আর আগে চার মাস ধরে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। শনি ও রবিবার দিনে ৬ ঘণ্টার প্রশিক্ষণ হবে। বাকি দিন চার ঘণ্টা করে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থায় খুশি অনিমা, মামণি, জেসমিনরা।

মামণি পাত্রের বাড়ি সবংয়ের তিলন্ত পাড়ায়। ছোটবেলা থেকেই মা নেই। গরিব বাবা মেয়েকে হোমে রেখে গিয়েছিলেন। এ বার মামণি উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেছেন। মামণির কথায়, “বাড়ি ফিরে কী ভাবে জীবন কাটাব ভাবতেই পারছিলাম না। এ বার কিছুটা নিশ্চিন্ত হলাম।’’ অনিমা বলছেন, “মনে হচ্ছে যেন নবজন্ম হল। একটা কাজ জানা থাকলে, প্রশাসনিক সুযোগ পেলে, নিশ্চয় নিজেকে মেলে ধরতে পারব।”

সাধারণত ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত হোমে থাকা যায়। বিশেষ অনুমতি নিয়ে বড় জোর ২১ বছর। তারপর হোম থেকে বিদায় নিতেই হবে। জেলা সমাজ কল্যাণ আধিকারিক প্রবীর সামন্ত বলেন, “সরকারি নিয়মে একটা বয়সের পর যে হোমে রাখার উপায় ছিল না। সে দিক দিয়ে এই ধরনের প্রকল্প যে ওদের কাছে কত বড় উপকারি, তা বলে বোঝানো যাবে না।’’ প্রশিক্ষণের সূচনা অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন, জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা ও জেলা সভাধিপতি উত্তরা সিংহও। তাঁদের কথায়, “এই ধরনের প্রকল্পের ফলে হোমে থাকা আবাসিকদের আর দুশ্চিন্তার মধ্যে দিন কাটাতে হবে। নির্দিষ্ট বয়সের পর হোম ছেড়ে যাওয়ার আগেই নিজের পায়ে দাঁড়ানোর সুযোগ পাবেন সকলেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Training
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE