Advertisement
E-Paper

হাসপাতালের ছাদে নিখোঁজ রোগীর দেহ

সিসিইউ থেকে হঠাৎ রোগী উধাও হয়ে যাওয়ায় প্রশ্নের মুখে পড়েছিল মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নিরাপত্তা। শেষমেশ সেই রোগীর ঝুলন্ত দেহ মিলল হাসপাতালের ছাদে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:১৩
মৃত: সমরেশ হাজরা। —নিজস্ব চিত্র।

মৃত: সমরেশ হাজরা। —নিজস্ব চিত্র।

সিসিইউ থেকে হঠাৎ রোগী উধাও হয়ে যাওয়ায় প্রশ্নের মুখে পড়েছিল মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নিরাপত্তা। শেষমেশ সেই রোগীর ঝুলন্ত দেহ মিলল হাসপাতালের ছাদে।

সোমবার সকালে হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ) থেকে নিখোঁজ হয়ে যান সমরেশ হাজরা (৩২)। মঙ্গলবার সকালে হাসপাতালের পুরনো ভবনের তিনতলার ছাদে তাঁর দেহ মেলে। ছাদের কার্নিশ থেকে বেরনো লোহার শিকে গলায় গামছার ফাঁস লাগানো অবস্থায় ঝুলছিল দেহটি। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া বলেন, “প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে এটি আত্মহত্যার ঘটনা। এখনও পর্যন্ত অন্য রকম কিছু পাওয়া যায়নি।” পুলিশ সূত্রে খবর, মৃতের কাছে সুইসাইড নোট মিলেছে। সেখানে একাধিক নাম রয়েছে। নোটটি খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।

মৃতের পরিজনেদের অবশ্য দাবি, এটি আত্মহত্যার ঘটনা নয়। সমরেশকে খুন করা হয়েছে। সিবিআইয়ের মতো কোনও তদন্তকারী সংস্থাকে দিয়ে ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত করানোরও দাবি তুলেছেন পরিজনেরা। সমরেশের দাদা অমলেশ হাজরার কথায়, “ভাই আত্মহত্যা করতে পারে না। নিরপেক্ষ তদন্ত হলেই ঘটনার কিনারা হবে।”

সমরেশ ডব্লুবিসিএস অফিসার। তাঁর বাড়ি হুগলির চুঁচুড়ার রবীন্দ্রনগরে। শালবনিতে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের রাজস্ব আধিকারিকের প্রশিক্ষণ নিচ্ছিলেন তিনি। সমরেশ শালবনিতে আসেন গত ৭ জানুয়ারি। ১৮ জানুয়ারি থেকে তিনি মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিত্সাধীন ছিলেন। হাসপাতাল সূত্রের খবর, অতিরিক্ত ঘুমের ওষুধ খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন তিনি।

সামান্য ছিটে বেড়ার ঘরেই দুই ছেলেকে বড় করেছেন আনাজ ব্যবসায়ী অনিল হাজরা। ছোট ছেলে সমরেশ মেধাবী, ভূগোলে স্নাতক হওয়ায় পরই শুরু করেছিলেন ডব্লুবিসিএসের প্রস্তুতি। গৃহশিক্ষকতা করে রোজগার করতেন। সেখানেই প্রেম। বিয়ে করেছিলেন নিজের ছাত্রী পৌলমী রায়চৌধুরীকে। অনিলবাবু বলেন, ‘‘সংসার করে সুখী হতে পারল না ছেলেটা। কত কষ্ট করে পড়াশোনা করে একটা ভাল চাকরি পেল। কিন্তু এ ভাবে সব শেষ করে দিল শ্বশুরবাড়ির চাপ।’’

গত বছর এপ্রিলে পৌলমীকে বিয়ে করেন সমরেশ। কিন্তু চার মাসের মধ্যেই বাপের বাড়ি চলে যান পৌলমী। তাঁর অভিযোগ, শ্বশুরবাড়িতে মানসিক নির্যাতন করা হতো। এরই মধ্যে ডব্লুবিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন সমরেশ। ছেলের মৃত্যুর জন্য পৌলমীর পরিবারকে দায়ী করেছেন সমরেশের বাবা, দাদা। তাঁদের অভিযোগ, সংসার ছেড়ে বাপের বাড়ি চলে গেলেও ছেলে ভাল চাকরি পাওয়ার পর তাঁর উপর মানসিক চাপ তৈরি করছিল পৌলমীর পরিবার। যদিও তা অস্বীকার করে পৌলমী বলেন, ‘‘বাপের বাড়ি চলে আসার পরে আর কোনও যোগাযোগ ছিল না আমাদের। বিয়ের পর থেকে শ্বশুরবাড়ির লোকেরা যা অত্যাচার করেছে, তাতে থানায় অভিযোগ করতেই পারতাম। কিন্তু ওঁর কথা ভেবেই সে কাজ করিনি।’’

পৌলমীর বাবা রূপক রায়চৌধুরীর বক্তব্য, ‘‘জামাই খুবই ভাল ছিল। পড়াশোনা ছাড়া কিছুই বুঝত না। কিন্তু শ্বশুরবাড়িতে আমারে মেয়ের উপর এত অত্যাচার চালানো হত যে বাধ্য হয়ে মেয়েকে ফিরিয়ে নিয়ে আসি। তারপর থেকে আর কোনও যোগাযোগ ছিল না।’’

dead body Missing Girl Hospital
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy