Advertisement
E-Paper

সংসারটা ভেসে গেল, হাহাকার বন‌্ধে গুলিবিদ্ধ যুবকের পরিবারের

বুধবার বিজেপি-র ডাকা ১২ ঘণ্টা বন্‌ধের সন্ধ্যায় প্রাণ গিয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশিয়াড়ির খাজরা বাজারের পান দোকানি বছর পঁয়তাল্লিশের বিভুরঞ্জনের। দোকানের অদূরেই অ্যাসবেস্টসের ছাউনি বাড়ি বিভুরঞ্জনের

দেবমাল্য বাগচী

শেষ আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০০:৩৫
বাবার মৃত্যুতে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন দুই মেয়ে। বৃহস্পতিবার (বাঁ দিকে)। বুধবার এই পান দোকানের সামনেই গুলিবিদ্ধ হল বিভুরঞ্জন দাস (ডান দিকে)। ছবি: দেবরাজ ঘোষ

বাবার মৃত্যুতে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন দুই মেয়ে। বৃহস্পতিবার (বাঁ দিকে)। বুধবার এই পান দোকানের সামনেই গুলিবিদ্ধ হল বিভুরঞ্জন দাস (ডান দিকে)। ছবি: দেবরাজ ঘোষ

বন্‌ধের সকালে দোকান খোলেননি। কাঠের দরজা বন্ধ করে ভেতরে রঙের কাজ করছিলেন। দুপুরে একবার বাড়ি ফিরেছিলেন। বিভুরঞ্জন দাসের যে সেই শেষ বাড়ি ফেরা, ঘুণাক্ষরেও টের পাননি পরিজনেরা। বোঝানেনি বন্‌ধের পরে দোকান খোলার কিছুক্ষণের মধ্যেই গুলি এফোঁড়-ওফোঁড় করে দেবে বিভুরঞ্জনকে।

বুধবার বিজেপি-র ডাকা ১২ ঘণ্টা বন্‌ধের সন্ধ্যায় প্রাণ গিয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশিয়াড়ির খাজরা বাজারের পান দোকানি বছর পঁয়তাল্লিশের বিভুরঞ্জনের। দোকানের অদূরেই অ্যাসবেস্টসের ছাউনি বাড়ি বিভুরঞ্জনের। ঘটনার পর থেকে নাগাড়ে কেঁদে চলেছেন বিভুরঞ্জনের স্ত্রী সীমা। আর বলছেন, ‘‘আমার স্বামী তো সক্রিয় রাজনীতির মধ্যে ছিল না। এলাকার এক তৃণমূল নেতার দোকান ভাড়ায় চালাত। সেই সূত্রে তৃণমূলের সমর্থক ছিলেন। ওর কোনও শত্রুও ছিল না। তবে কেন ওকে মরতে হল!’’

ডাকনাম কাল্টুতেই গোটা এলাকা চিনত বিভুরঞ্জনকে। তিনি যে নির্বিবাদী মানুষ ছিলেন, তা একবাক্যে বলছেন সকলেই। স্থানীয় বাসিন্দা নিশীথ পাল বলেন, “খুব অমায়িক স্বভাবের ছেলে ছিল কাল্টু। তাই ওঁর দোকানে ভিড় লেগে থাকত। ছেলেটার এমন মৃত্যু মানা যাচ্ছে না।” বিভুরঞ্জনের মৃত্যুর প্রতিবাদে বৃহস্পতিবারও দোকানপাট বন্ধ ছিল খাজরা বাজারে। বুকে কালো ব্যাজ পড়ে পথে নেমেছিলেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। সেই মৌনী নিরাপত্তার দাবি জানানোর পাশাপাশি প্রকৃত অপরাধীকে গ্রেফতারের দাবি তোলেন তাঁরা।এই সব চাপানউতোর, শোক ছাপিয়েও অবশ্য ধরা পড়ছে বিভুরঞ্জনের পরিবারের অসহায়তা। ভাড়া নেওয়া পান দোকানের রোজগারেই সংসার চালাতেন বিভুরঞ্জন। কষ্টার্জিত অর্থে বিয়ে দিয়েছিলেন দুই মেয়ের। আর বছর দু’য়েক ধরে বেঙ্গালুরুতে একটি হোটেলে কাজ পেয়েছিলেন ছেলে রাজকুমার। বাবার মৃত্যুসংবাদ এগারো মাস পরে এ দিন বাড়ি ফিরেছেন রাজকুমার। তিনিও বলেন, ‘‘বাপির তো কোনও শত্রু ছিল না। অকারণে বাপি মারা গেল। আমি রোজগার করছি বটে। তবে বাপির রোজগারেই মূলত সংসার চলত। এর পরে কীভাবে কী হবে বুঝতে পারছি না।’’

বিভুরঞ্জনের বাবা নব্বই পেরনো রামচন্দ্র দাস অবসরপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষক। পেনশন পান। আগে ছেলের সংসারে সাহায্য করতেন। কিন্তু তিনি নিজেও এখন কঠিন অসুখে ভুগছেন। তাই স্বামীর দোকানের জন্য খাটতেন সীমা। বাড়িতে বসে সুপুরি কেটে দিতেন।

রামচন্দ্রবাবু বলেন, “পেনশনের টাকা আমার অসুখেই বেরিয়ে যায়। আমিও প্রয়োজনে ছেলের কাছে হাত পাততাম। বৌমা অনেক পরিশ্রম করত। ছেলেটা মরে সংসারটা ভেসে গেল।”

বিভুরঞ্জনের দোকানের সামনে এ দিনও ছিল রক্তের দাগ। সেখানে সকাল থেকেই চোখে পড়েছে জটলা। আর দফায় দফায় তৃণমূল নেতাদের আনাগোনা চলেছে দাস বাড়িতে। কখনও এসেছেন ব্লক সভাপতি পবিত্র শীট, ফটিক পাহাড়ি, প্রাক্তন ব্লক সভাপতি জগদীশ, পরে আসেন বিধায়ক পরেশ সিংহ আসেনও। সন্ধের পরে তৃণমূলের পতাকায় মোড়া বিভুরঞ্জনের দেহের সঙ্গেও এসেছেন জেলা তৃণমূল সভাপতি অজিত মাইতি, সাংসদ মানস ভুঁইয়ার মতো নেতারা। খাজরা হাইস্কুল থেকে খাজরা বাজার পর্যন্ত দেহ নিয়ে মিছিল হয়। পরে দেহ নিয়ে যাওয়া হয় বাড়িতে। সকলেই পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন। সীমার দিশাহারা দশা অবশ্য কাটছে না। সজল চোখে বারবারই তিনি বলছেন, ‘‘জানি না সংসারটা কী ভাবে চালাব!”

Death Businessman Family
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy