পুজোর আনন্দ ভাগ করে নেওয়া হচ্ছে এ ভাবেই। নিজস্ব চিত্র
সকাল থেকেই ওরা স্নান করে তৈরি। কেউ হাত লাগিয়েছে প্রতিমার সাজানোর কাজে। একদল ছাত্র- ছাত্রী শিক্ষকদের সঙ্গে ভোগের জোগাড়ে ব্যস্ত। কেউ রাঁধুনিকে সাহায্য করছে। কিন্তু কোনও কথা নেই। সব কাজই হচ্ছে ইশারায়। এঁরা সকলেই হলদিয়ার বাড়বাসুদেবপুরের মূক ও বধির বিদ্যালয় ‘শ্রুতির’ ছাত্র-ছাত্রী।
সরস্বতী পুজো বলে কথা। তাই সকলেরই সাজের বহর যথেষ্ট। পাটভাঙা শাড়ির সঙ্গে ম্যাচ করে গয়না, মাথায় রঙিন ফিতে—প্রত্য়েকেই খুশিতে ডগমগ। দেখলে বোঝা যাবে না তাঁদের প্রতিবন্ধকতা। বছরের আর পাঁচটা দিনের মতো নয়, প্রতি বছরই তাই এদিন স্কুলের ছবিটাই বদলে যায়। শুধু বর্তমান ছাত্রছাত্রীরাই নয়, পুজোয় সবাই মিলে আনন্দে সামিল হন প্রাক্তনেরাও। আসেন অভিভাবকেরাও।
এক প্রাক্তনীর কথায়, ‘‘ছোটবেলা কেটেছে এখানে। স্মৃতিও অনেকে। তা ছাড়া পুরনো বন্ধুদের দেখতে পাওয়াটাও তো একটা বড় পাওনা। সবাই মিলে আনন্দ করি। ভাল লাগে।’’ সকাল সকাল অঞ্জলি দিয়ে দিয়েছে লিবু টুডু। পশ্চিম মেদিনীপুরের গোয়ালতোড়ের লিবু এখন এই স্কুলের ছাত্র। বড্ড লাজুক। অঞ্জলির পর পুজোর প্রসাদ খাওয়ার এক ফাঁকেই ইশারায় স্যারকে জানিয়েছে, খিচুড়ি তার ভারী পছন্দের। গেঁওখালির সেখ মুস্তাক আলি, সাগরের মিলন ঘোষ আবার জানিয়ে দিল, পরিবেশন করাতেই তাদের আনন্দ বেশি। চকগাজিপুর থেকে এসেছেন চিন্ময় দাসের অভিভাবক কৃষ্ণা দাস। তিনি বলেন, ‘‘এখানে এসে খুব আনন্দ পাই। শুধু ছেলে আছে বলে নয়। ওদের আনন্দে মেতে উঠতে দেখে ভাল লাগে।’’
স্কুলের অঙ্কন শিক্ষক বিশ্বজিৎ মণ্ডল বলেন, ‘‘প্রতিমার সাজসজ্জার কাজে ওদের অংশগ্রহণ মুগ্ধ করেছে। কিছু বলতে হয়নি। ওরাই ঠিক বুঝে নেয় কোথায় কী দিতে হবে। ওদের একাগ্রতা দেখার মতো।’’ আর অক শিক্ষক পান্নালাল দাসের কথায়, ‘‘শ্রুতির’ দুই প্রাক্তন ক্রীড়াবিদ সাঁতারু চিন্ময় মিদ্যা ও অ্যাথলেটিকসে শ্রীকৃষ্ণ মাহাতোকে এ বার সংবর্ধনা জানানো হবে। দু’জনেই আন্তর্জাতিক স্তরে পুরস্কার পেয়েছেন।’’ তিনি জানান, প্রতি বছর এই দিনটিতে ঘরের ছেলে মেয়েরা ঘরে ফেরে। তাই এখানেই তাঁদের সংবর্ধনার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy