Advertisement
১৯ মে ২০২৪
Kurmi Community

নেতাদের ভাগাভাগিতেই তিমিরে কুড়মি দাবিদাওয়া

আন্দোলনের চতুর্থ দিনেই সামনে আসে কুড়মি সংগঠনের আভ্যন্তরীণ মতভেদ। পুরুলিয়ার ‘আদিবাসী কুড়মি সমাজে’র নেতারা রাজ্য প্রশাসনের সঙ্গে ভিডিয়ো বৈঠকের পরে পঞ্চম দিনে অবরোধ তুলে নেন।

রেল ও জাতীয় সড়ক অবরোধ করেছিলেন কুড়মিরা।

রেল ও জাতীয় সড়ক অবরোধ করেছিলেন কুড়মিরা। — ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০২২ ০৮:৩৩
Share: Save:

পুজোর আগে টানা পাঁচদিন রেল ও জাতীয় সড়ক অবরোধ করেছিলেন কুড়মিরা। আদিবাসী তালিকাভুক্তি-সহ দাবি ছিল হরেক। সেই অবরোধে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের রাজস্ব ক্ষতি হয় প্রায় ৭৮ কোটি টাকা। আর জাতীয় সড়কে পণ্য পরিবহণ থমকে ছিল পাঁচদিন। যাতে পচেছে কয়েক টন কাঁচা খাদ্যসামগ্রী। কিন্তু এত ‘ক্ষতি’ সয়েও আখেরে লাভটা কী হল— প্রশ্ন উঠছে কুড়মিদের ভেতর থেকেই।

বস্তুত, আন্দোলনের চতুর্থ দিনেই সামনে আসে কুড়মি সংগঠনের আভ্যন্তরীণ মতভেদ। পুরুলিয়ার ‘আদিবাসী কুড়মি সমাজে’র নেতারা রাজ্য প্রশাসনের সঙ্গে ভিডিয়ো বৈঠকের পরে পঞ্চম দিনে অবরোধ তুলে নেন। অথচ খড়্গপুর গ্রামীণের খেমাশুলিতে ‘কুড়মি সমাজ পশ্চিমবঙ্গে’-র নেতা রাজেশ মাহাতোর নেতৃত্বে আরও ১৮ ঘন্টা অবরোধ চলে। তবে দাবি পূরণ এখন দূরঅস্ত। রাজেশ মাহাতো বলছেন, ‘‘আমরা যেখানে ছিলাম, সেখানেই রয়েছি। সদর্থক দিক একটাই, এতবড় আন্দোলন হয়েছে শান্তিপূর্ণ ভাবে। রেল ও জাতীয় সড়কের কোনও সম্পত্তির ক্ষতি হয়নি। আত্ম-পরিচিতির দাবিতে কুড়মিরা একজোট হতে পারেন, সেটা প্রমাণ হয়েছে।’’ তবে রাজেশরা এর দায় চাপিয়েছেন পুরুলিয়ার আদিবাসী কুড়মি সমাজের উপরই। ওই সংগঠনের মূল মানতা (মুখ্য উপদেষ্টা) অজিতপ্রসাদ মাহাতো রাজেশদের সংগঠনের সঙ্গে আলোচনা না করেই একতরফা ভাবে আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেন বলে অভিযোগ। অজিতপ্রসাদ পাল্টা বলছেন, ‘‘সচিবের থেকে উপযুক্ত প্রতিশ্রুতি পেয়েই আন্দোলন তুলেছি। রাজেশ তো ভিডিয়ো বৈঠকে থাকলেনই না। আর আন্দোলন মোটেই নিষ্ফলা হয়নি। একই সঙ্গে তাঁর স্বীকারোক্তি, ‘‘উৎসবের সময়ে অবরোধে ক্ষতি হয়েছে। এ জন্য আমরা ক্ষমা চেয়ে নিয়েছি।’’

আদিবাসী তালিকাভুক্তি, কুড়মালি ভাষার সাংবিধানিক স্বীকৃতি, সারনা ধরমের কোড চালু, ছোটনাগপুর প্রজাসত্ত্ব আইনের আওতায় কুড়মিদের আনা সহ নানা দাবিতে বহু বছর ধরে পর্যায়ক্রমে কুড়মিদের একাধিক সংগঠন ইতিপূর্বে আন্দোলন করেছে। কুড়মি বিদ্বজ্জনদের একাংশের আক্ষেপ, কুড়মি সংগঠনগুলির মতভেদের কারণেই আন্দোলন হলেও দাবিপূরণের পথ প্রশস্ত হয়নি।

রাজেশের দাবি, বৃহত্তর আন্দোলনের ভাবনাটি তাঁর সংগঠনোই প্রথম নিয়েছিল। সেই মতো ওড়িশা ও ঝাড়খণ্ডের কুড়মি নেতাদের বাড়িতে গিয়ে আলোচনা করা হয়। ঝাড়গ্রাম শহরের ধর্মশালায় চিন্তন শিবির হয়। সেখানে তিন রাজ্যের কুড়মি নেতারা একযোগে আন্দোলনে সায় দেন। পরে সম্মিলিত সিদ্ধান্ত হয়, ‘ছোটনাগপুর টোটেমিক কুড়মি/ কুরমি মাহাতো সমাজ’ নামে নতুন মঞ্চের তরফে ২০ সেপ্টেম্বর ‘রেল টেকা’ হবে।

তবে মতানৈক্য সামনে আসতে দেরি হয়নি। ওড়িশার কুড়মি সেনা এবং ঝাড়খণ্ডের কুড়মি বিকাশ মোর্চা আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়ায়। ‘ছোটনাগপুর টোটেমিক কুড়মি/ কুরমি মাহাতো সমাজে’র ব্যানারে মূলত রাজেশের সংগঠন ও অজিতপ্রসাদের আদিবাসী কুড়মি সমাজ এবং আরও কয়েকটি সংগঠন মিলে খেমাশুলিতে রেল ও জাতীয় সড়ক ও পুরুলিয়ার কুস্তাউরে রেল অবরোধ শুরু করে। তবে ‘ছোটনাগপুর টোটেমিক কুড়মি/ কুরমি মাহাতো সমাজ’ কোনও স্বীকৃত মঞ্চ বা সংগঠন নয়। তাই আন্দোলনের আগে অজিতের সংগঠনের প্যাডেই বিভিন্ন বিষয়টি জানানো হয়েছিল।

এ দিকে, আন্দোলনের চতুর্থ দিনেও রাজ্য সরকারের প্রতিনিধির সঙ্গে এলাকায় আলোচনার দাবিতে অনড় থাকেন রাজেশরা। অথচ অজিতরা ভিডিয়ো বৈঠকে সম্মত হন। ২৪ সেপ্টেম্বর পঞ্চম দিনে রাজ্য অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ দফতরের সচিব সঞ্জয় বনসলের সঙ্গে চার জেলা (ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর, পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া) থেকে ভিডিয়ো বৈঠক করেন কুড়মি নেতারা। রাজেশরা বৈঠক বয়কট করেন। এক দিন পরে তাঁরাও অবরোধ তুলে নেন। রাজেশ মানছেন, ‘‘যেহেতু অজিতবাবুর সংগঠনের প্যাডে আন্দোলনের আগাম বিষয়টি প্রশাসনে জানানো হয়েছিল, তাঁরাই আন্দোলন প্রত্যাহার করায় আমাদের উপর প্রশাসনিক চাপ বাড়ে। আন্দোলন প্রত্যাহারে বাধ্য হই।’’

এই ভাগাভাগিতে লাভটা কী হল? সারা ভারত কুড়মি সমন্বয় সমিতির রাজ্য আহ্বায়ক অশোক মাহাতো বলছেন, ‘‘বঞ্চনার কারণে কুড়মি বিদ্রোহের পূর্বাভাস সরকারকে দেওয়া গিয়েছে। এটাই বা কম কিসের!’’

a

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kurmi Community Jhargram
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE