Advertisement
E-Paper

নোটের দাপটে বাজার ঠান্ডা বালাপোশের

শীতের শুরুটা দেখে ওঁরা বুঝে গিয়েছিলেন এ বার সুদিন আসছে। তাই দুর্গাপুজোর পর থেকেই তুলো ধুনে লেপ-কম্বল-বালাপোশ তৈরি শুরু করে দিয়েছিলেন। প্রথমে বিক্রি হচ্ছিল ভালই। কিন্তু ভরা শীতের মরসুমে এমন নোটের গরম যে তাঁদের আয়ের পথে কাঁটা হবে, ভাবতেও পারেননি উত্তম দেবনাথ, নিরঞ্জন দেবনাথরা। আদতে যাঁরা তমলুকের কিয়াখালি, আমগেছিয়া, দামোদরপুর গ্রামের দেবনাথ পাড়ার লেপ-বালাপোষের কারিগর।

আনন্দ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০১৬ ০১:৫৩
চলছে বালাপোশ তৈরি। পার্থপ্রতিম দাসের তোলা ছবি।

চলছে বালাপোশ তৈরি। পার্থপ্রতিম দাসের তোলা ছবি।

শীতের শুরুটা দেখে ওঁরা বুঝে গিয়েছিলেন এ বার সুদিন আসছে। তাই দুর্গাপুজোর পর থেকেই তুলো ধুনে লেপ-কম্বল-বালাপোশ তৈরি শুরু করে দিয়েছিলেন। প্রথমে বিক্রি হচ্ছিল ভালই। কিন্তু ভরা শীতের মরসুমে এমন নোটের গরম যে তাঁদের আয়ের পথে কাঁটা হবে, ভাবতেও পারেননি উত্তম দেবনাথ, নিরঞ্জন দেবনাথরা। আদতে যাঁরা তমলুকের কিয়াখালি, আমগেছিয়া, দামোদরপুর গ্রামের দেবনাথ পাড়ার লেপ-বালাপোষের কারিগর।

পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা সদর তমলুক শহরের রাধাবল্লভপুর বাসস্টপ থেকে এক কিলোমিটার পশ্চিমে গেলেই কিয়াখালি গ্রাম, দামোদরপুর ও আমগেছিয়া পিঠোপিঠি গ্রামের দেবনাথপাড়া। ৬০ টি পরিবারের অধিকাংশই জমিজমাহীন। এইসব পরিবারের বাসিন্দার জীবিকা গ্রীষ্মকালে গ্রাম-শহরে ঘুরে বা স্কুল চত্বরে আইসক্রিম বিক্রি, বর্ষাকালে গ্রামে গ্রামে ঘুরে ছাতা সারানো এবং শীতকালে লেপ, কম্বল, বালাপোশ তৈরি।

অন্য বছরের মত এ বছরও শীতের কিছুটা আগে থেকে গ্রাম ঘুরে লেপ, বালাপোশ তৈরির অর্ডার নিয়ে কাজ শুরু করেছিলেন দেবনাথ পাড়ার কারিগররা। ডিমারি, কোলাঘাট থেকে হোসিয়ারি কারখানার বাতিল কাপড়ের তৈরি ঝুট তুলো কিনে নিয়ে এসে বাড়ির সামনে ত্রিপল পেতে সকাল থেকে সন্ধে পর্যন্ত জোর কদমে কাজও করেছেন। প্রথম দিকে বিক্রিও হচ্ছিল ভালই। কিন্তু তার মাঝেই প্রধানমন্ত্রীর নোট বাতিলের ঘোষণার পরই ছবিটা বদলে গেল।

বালাপোশ তৈরির কারিগর উত্তম দেবনাথ জানালেন, অনেকে জিনিস দিলেই ৫০০, ১০০০ টাকার নোট ধরাচ্ছেন। বালাপোশ তৈরির জন্য ২৫০-৩০০ টাকা নেওয়া হয়। তাই ৫০০, ১০০০ টাকার ওই নোট দিলে খুচরো দেওয়া যাচ্ছে না। আর ওই পুরনো নোট নিয়ে কেউই নতুন করে আর সমস্যায় পড়তে চাইছেন না। উত্তমবাবুর কথায়, ‘‘পাঁচটি নতুন বালাপোশ আজ সকালেই পৌঁছে দিতে গিয়েছিলাম। কিন্তু তাঁরা জানান ৫০০ অথবা ১০০০ টাকার খুচরো দিতে পারলে তবে বালাপোশ নেব। না হলে নেব না। সবাইকে খুচরো দেব কী করে বলুন তো?’’ পাড়ার প্রবীণ কারিগর নিরঞ্জন দেবনাথ বলেন, ‘‘প্রথম দিকে আমি ৫০০, ১০০০ টাকার নোট নিয়েছিলাম। কিন্তু সেই নোট বদল করতে বেশ সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। এখনও আমার ২২ হাজার টাকার পুরনো নোট জমে।’’

নোট বাতিলের ধাক্কায় পাড়ার কারিগরদের সাথে ভুক্তভোগী স্থানীয় ধলহরা পঞ্চায়েতের কিয়াখালি গ্রামের সিপিএম পঞ্চায়েত সদস্য অশোক দেবনাথ। অশোকবাবু নিজেও বালাপোশ, কম্বল তৈরির কারিগর। তিনি বলেন, ‘‘দিনে দুটি বালাপোশ তৈরি করলে ২০০ টাকা পাওয়া যায়। নোট নিয়ে সমস্যার জেরে বালাপোশ, কম্বল তৈরি করেও বিক্রি করতে পারা যাচ্ছে না।’’

তবু কাজ ছাড়েননি কারিগরা। শুক্রবার দেবনাথ পাড়ায় গিয়ে দেখা গেল বালাপোশ তৈরিতে ব্যস্ত কারিগররা। মলিন হেসে এক প্রবীণ কারিগর বলেন, ‘‘আশায় বাঁচি আমরা। বাজার ফিরলে তখন আবার যদি না জোগান দিয়ে উঠতে পারি!’’

Demonetization
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy