নোংরা: ঘাটাল পুরসভার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের নিকাশি নালায় জমে আছে আবর্জনা। ছবি: কৌশিক সাঁতরা
ঘুম ভেঙেছিল গোড়াতেই। কামান কেনা, পুর ও স্বাস্থ্য কর্মীদের মাঠে নামিয়ে শুরু হয়েছিল মশাবাহিত রোগের মোকাবিলায় তৎপরতাও। লাভ হয়নি। গত বছরের মতো এ বছরও ঠেকানো যায়নি ডেঙ্গি, ম্যালোরিয়ার মতো মশাবাহিত রোগের প্রকোপ।
কিন্তু কেন মোকাবিলা করা গেল না? সে প্রশ্নেই এখন চলছে চাপানউতোর।
এক পক্ষে রয়েছে পুরসভা ও পঞ্চায়েত-প্রশাসন। অন্যদিকে ভুক্তভোগীরা। প্রশাসনের যুক্তি, তারা গোড়া থেকেই এলাকায় ঘুরে কীটনাশক স্প্রে করা থেকে শুরু করে সচেতনতা প্রচার— সবই করেছে। কিন্তু যাঁদের জন্য এত আয়োজন, তাঁরাই সচেতন হননি।
ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষ অবশ্য বলছেন, পুরসভা রাসায়নিক স্প্রে করেছে ঠিকই, কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় তা যৎসামান্য। নালা নর্দমা সাফাইয়ের ক্ষেত্রেও রয়েছে গাফিলতি, আঙুল তুলছেন বাসিন্দারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা স্বাস্থ্য ভবনের এক আধিকারিকের গলাতেও সেই উদ্বেগের সুরই শোনা গিয়েছে। তিনি বলেন, “এ বার প্রথম থেকেই সরকার সজাগ ছিল। সে জন্য আলাদা ভাবে টাকাও দিয়েছিল সরকার। কিন্তু পুরসভা ও পঞ্চায়েতগুলি নূন্যতম দায়িত্ব পালন না করায় পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল হচ্ছে।”
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, গত বছর পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন ৬১২ জন। চলতি বছর নভেম্বরের শুরুতে সংখ্যটা দাঁড়িয়েছে ৪০৮। এটি সরকারি হিসাবে। বেসরকারি মতে সংখ্যাটা কয়েকগুণ।
এ বছর এখনই ম্যালোরিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ২৫২। গত বছর ম্যালোরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন ৩৫১জন। এ দিকে বছর শেষ হতে এখনও প্রায় দেড় মাস বাকি। স্বাস্থ্য দফতরই বলছে, ডেঙ্গির এডিস এবং ম্যালোরিয়ার অ্যানোফিলিস (স্ত্রী) মশাকে সাধারণত শীতকালে দেখা যায় না। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ওই প্রজাতিরা অভিযোজিত হয়ে গিয়েছে। বিপদ বেড়েছে সেখানেই।
এখানেই প্রশ্ন উঠছে স্বাস্থ্য দফতর ও প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রশাসন কিংবা স্বাস্থ্য দফতর সারা বছর অভিযান চালালে এমন সঙ্কট হওয়ার কথা নয়।
এডিস মশার আয়ু সাকুল্যে ২১দিন। এই সময়কালেই তারা ৩-৪ বার ডিম পাড়ে। সেই ডিম পাড়া রুখতে গেলে নিয়মিত এলাকা সাফাই জরুরি। কোনও ভাবেই কোথায় জল জমতে দেওয়া যাবে না। কিন্তু বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রশাসনের সাফাই অভিযান নামমাত্র। তাতে মশা নির্মূল করা সম্ভব কিনা প্রশ্ন উঠছে তা নিয়েও।
স্বাস্থ্য দফতরের পরিসংখ্যান বলছে, জেলার বিভিন্ন মহকুমা, গ্রামীণ হাসপাতালগুলিতে প্রতিদিন গড়ে ৮০-৯০ জন করে জ্বরের রোগী ভর্তি হচ্ছেন। এ ছাড়া রয়েছে বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোম। জেলার মেদিনীপুর সদর ব্লকের রামনগর, হাতিহল্কা, ঘাটাল মহকুমার রানিচক, কুমারচক, খড়্গপুর-২ ব্লকের শিমুলিয়া, কেশিয়াড়ির ঢলবেলুনজ-সহ বিভিন্ন গ্রামেও জ্বরের প্রকোপ রয়েছে। এখনও খড়্গপুর শহরে ডেঙ্গির রেশ কাটেনি। এ বার রেলশহরে দু’জনের মৃত্যুও হয়েছে ডেঙ্গিতে।
সমস্যা রয়েছে রোগ নির্ণয় নিয়েও। গোটা জেলায় একমাত্র মেদিনীপুর মেডিক্যালে ম্যাক অ্যালাইজা পরীক্ষা সম্ভব। ফেল রোগ নির্ণয়ে অনেক ক্ষেত্রেই দেরি হয়ে যাচ্ছে। ঘাটাল হাসপাতালের এক চিকিৎসক বললেন, “পরিস্থিতি যে দিকে এগোচ্ছে, তাতে ম্যাক অ্যালাইজা পরীক্ষার পর চিকিৎসা শুরু সম্ভব নয়। তাতে রোগীর বিপদ ঘটতে পারে। তাই উপসর্গ দেখা মাত্রই আমরা ডেঙ্গির চিকিৎসাই করে যাচ্ছি।”
জেলার উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রবীন্দ্রনাথ প্রধান বলেন, “ফের পঞ্চায়েত এবং পুরসভাগুলিকে লিখিত নির্দেশ দেওয়া হবে, যাতে সচেতনতা শিবির করা হয়। পরিচ্ছন্নতা ছাড়া এ থেকে নিষ্কৃতি নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy