জমি ঘিরেই বিবাদের সূত্রপাত। তার জেরেই তৃণমূলের প্রাক্তন বুথ সভাপতিকে খুনের অভিযোগ উঠল দলেরই নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে।
গত মঙ্গলবার সন্ধেয় পিংলার জামনা গ্রাম পঞ্চায়েতের পশ্চিম ডাঙরা গ্রামের তৃণমূলের প্রাক্তন বুথ সভাপতি অলোক শীটের (৪৫) মৃত্যু হয়। বুধবার মৃতের দাদা গুরুপদ শীট তৃণমূলের প্রাক্তন ব্লক সভাপতি গৌতম জানা, অঞ্চল সভাপতি গোবিন্দ দাস-সহ ২২ জন নেতা-কর্মীর নামে ভাইকে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন। ঘটনায় এখনও কাউকে গ্রেফতার করেনি পুলিশ।
খুনের অভিযোগ হওয়ার পরে কাউকে গ্রেফতার করা হল না কেন? খড়্গপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অভিষেক গুপ্ত বলেন, “ওই ঘটনায় খুনের মামলা রুজু করেছি। তদন্ত চলছে। কয়েকজনকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। সবদিক দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে বুথ সভাপতির পদ থেকে অলোকবাবুকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মৃতের পরিজনেদের অভিযোগ, এরপর থেকেই প্রাক্তন ব্লক সভাপতি ও অঞ্চল সভাপতির লোকেরা অলোকবাবুর উপর অত্যাচার চালাচ্ছিলেন। ঘটনার কথা দলীয় নেতৃত্বকে জানানো হলেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। গত শুক্রবার ডাঙরা বাজার এলাকায় অলোকবাবুকে দলেরই একাংশ কর্মী মারধর করে বলে অভিযোগ। জখম অবস্থায় অলোকবাবুকে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত সোমবার তিনি হাসপাতাল থেকে বাড়িও ফেরেন। মঙ্গলবার সন্ধেয় ফের অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। অলোকবাবুকে পিংলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালেই তাঁর মৃত্যু হয়। এরপর পরিবারের পক্ষ থেকে পুলিশে অভিযোগ দায়ের হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ডাঙরা মৌজায় পূর্ত দফতরের রাস্তার ধারে ৩৭ ডেসিমেল জমি নিয়েই বিবাদ। ব্লক নেতা গৌতম জানা ও অঞ্চল সভাপতি গোবিন্দ দাস-সহ চার জনের দাবি, ২০১৪ সালের গোড়ায় তাঁরা ওই জমি কিনেছেন। মৃতের পরিজনেদের পাল্টা দাবি, ২০১৪ সালের শেষ দিকে ওই জমির ২২ ডেসিমেল অংশ অলোকবাবু কিনেছিলেন। দু’পক্ষই ওই জমি নিজেদের বলে দাবি করায় সমস্যা তৈরি হয়। দু’পক্ষের বচসার সেই শুরু। পরবর্তী কালে অলোক জমিতে চাষাবাদ শুরু করায় বিরোধ বাড়ে। আগেও দু’পক্ষ একে অপরের বিরুদ্ধে মারধর, পাল্টা মারধরের অভিযোগে সরব হয়। জল গড়ায় আদালতে। জমির মালিকানা নিয়ে মামলা এখনও চলছে।
মৃতের ভাই স্বপন শীটের অভিযোগ, “গৌতম জানা, গোবিন্দ দাসেরা ওই জমির জাল দলিল তৈরি করেছে। আদতে জমির মালিক বিহারের পটনায় থাকেন। দাদা তাঁর থেকে থেকে জমি কিনেছিল।’’ তাঁর আরও অভিযোগ, ‘‘এ নিয়ে গৌতম জানারা দাদাকে প্রায়ই মারধর করত। পুলিশে ও দলীয় স্তরে অভিযোগ জানিয়েও দাদা সুফল পায়নি।” অভিযুক্ত গৌতম জানার পাল্টা দাবি, “২০১৪ সালের জানুয়ারি মাস নাগাদ আমরা চার জন মিলে ওই জমিটি কিনেছিলাম। ওই একই দাগের জমি অলোক ২০১৪ সালের ডিসেম্বর মাসে কিনেছিল বলে দাবি করে। এই নিয়ে আইনি লড়াই চলছে।” দু’পক্ষেরই দাবি, তাঁদের কাছে জমি কেনার নথিপত্র রয়েছে।
মৃতের ভাই স্বপনবাবু বলেন, “মেজদাকে গত শুক্রবার গৌতম জানা, গুরুপদ শীটের মদতে বাজারে মারধর করা হয়। বুকে আঘাত লাগায় দাদার শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। তাই ওঁর এ ভাবে মৃত্যু হল। আমরা খুনি গৌতম জানা, গোবিন্দ দাসের চরম শাস্তি চাই।” যদিও অভিযুক্ত গৌতম জানার দাবি, “মারধরের ঘটনা জানা নেই। হৃদ্রোগের সমস্যায় অলোকের মৃত্যু হয়েছে। এখন ওর পরিবারের লোকেরা মিথ্যা অভিযোগ তুলে দলকে বদনাম করতে চাইছে।”
এ নিয়ে তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি অজিত মাইতি বলেন, “এটা দলীয় বিষয় নয়। জমি নিয়ে গ্রাম্য বিবাদের জেরে ঘটনাটি ঘটেছে। যদি এতে দলের কেউ যুক্ত থাকে তবে পার পাবে না। আমি পুলিশকে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy