Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

Durga Puja 2021: বরাত পেয়েও ফিরছে না বরাত

পুজোর মুখে কেলেঘাই নদীর বাঁধ ভাঙা জলে সকলেরই রুজি-রুটিতে টান পড়েছে।

তেমন কাজ নেই। হতাশ বাদ্যযন্ত্র মেরামত শিল্পীরা।

তেমন কাজ নেই। হতাশ বাদ্যযন্ত্র মেরামত শিল্পীরা। নিজস্ব চিত্র।

গোপাল পাত্র
পটাশপুর শেষ আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০২১ ০৬:৫০
Share: Save:

কারও ডাক পড়ত জেলার বাইরে— ঢাক বাজাতে বা মণ্ডপ সজ্জার কাজে। কেউ তৈরি করেন প্রতিমা সজ্জার সামগ্রী। আবার ঢাকের মেরামতির কাজ করেন কেউ।

পটাশপুর, ভগবানপুর এলাকায় এই সব পেশার সঙ্গে বহু বাসিন্দাই যুক্ত। পুজোর মুখে কেলেঘাই নদীর বাঁধ ভাঙা জলে সকলেরই রুজি-রুটিতে টান পড়েছে। পুজোর তোড়জোড়ের বদলে অধিকাংশেরই দিন কাটছে ত্রাণ শিবিরে বসে।

মহালয়ার বহু আগে থেকেই ঢাকিরা নিজেদের ঢাক মেরামতির কাজ শুরু করেন। অনেকে ঢাকে নতুন চামড়াও লাগান। তাতে এলাকার চর্মশিল্পীদের ভালই উপার্জন হয়। কিন্তু পটাশপুরের সিংদা বাজারের চর্মশিল্পীদের হাতে এবার কোনও কাজ নেই। ঢাক, মৃদঙ্গের মতো বাদ্যযন্ত্র কেউ দিয়ে গেলেও বন্যার ফলে সেগুলি দোকান থেকে নিয়ে যেতে পারছেন না। ফলে চর্ম শিল্পীদের হাতে টাকাও আসছে না। পটাশপুরে চর্ম শিল্পী বাদলচন্দ্র ঘোড়াই বলেন, ‘‘আগে যাঁরা ঢাক এবং অন্য বাদ্যযন্ত্র মেরামতির জন্য দিয়েছিলেন, তাঁরা এখন বন্যার জন্য আসতে পারছে না। সবারই তো ঘরবাড়ি ডুবে রয়েছে। আর নতুন করেও কেউ বাদ্যযন্ত্র সারাতে আসছেনা। পুজোর মরসুমেও মন্দার বাজার।’’

দুর্গা পুজোয় মণ্ডপে মণ্ডপে ঢাকি এবং ব্যান্ড পার্টির চাহিদা থাকে। ষষ্ঠীতে দেবীর বোধনে ঘটোত্তোলন থেকে শুরু করে অন্য রীতিতে কীর্তন সম্প্রদায়ের মানুষের প্রয়োজন হয়। পুজোর কয়েক মাস আগে থেকেই তাই এঁদের বরাত দেওয়া হয়। অক্টোবরে দুর্গা পুজো থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত পুজোর মরসুম। বছরের উপার্জনের জন্য ঢাকিরাও এই কয়েক মাসের জন্য তাকিয়ে থাকে। কিন্তু এবার জলবন্দি দশা থাকায় বেশ কয়েকটি পুজো কমিটি ইতিমধ্যে পুজো বন্ধ করেছে। এই পেরিয়ে বাইরে যাওয়ারও উপায় নেই। পটাশপুর ঢাকি সুবল ঘড়াই বলেন, ‘‘বন্যায় ঘরবাড়ি এখনো ডুবে রয়েছে। পুজোর ঢাক বাজানোর বরাত থাকলেও মণ্ডপে যাওয়ার কোনও উপায় নেই। বন্যায় আমাদের এ বছরের উপার্জনের পথ বন্ধ হয়ে গেল।’’

একই অবস্থা মণ্ডপ সজ্জা এবং প্রতিমার অলঙ্কার তৈরি শিল্পীদেরও। পটাশপুর এবং ভগবানপুরের অধিকাংশ বারোয়ারি পুজোর মণ্ডপ জলে ডুবে রয়েছে। কয়েকটি জায়াগায় পুজো অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে গেলেও সেখানে পুজো হচ্ছে নামমাত্র। ফলে মণ্ডপ সজ্জায় কাজের বরাত বাতিল হয়েছে। ফলে এই কাজের বরাত পাওয়া শিল্পীরা বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। কারও কারও বন্যার জলে সাজের সরঞ্জামও নষ্ট হয়েছে। পটাশপুরে মণ্ডপ সজ্জা শিল্পী মানিক দাস বলেন, ‘‘কয়েক লক্ষ টাকার বাজেটের পুজো মণ্ডপ তৈরির বরাত এসেছিল। বন্যায় সেই কাজের বেশির ভাগ বাতিল হয়েছে। অন্য শহরের দিকে কিছুটা কাজ হচ্ছে। তবে বেশি কাজ না থাকায় কর্মীদের ছুটি দিতে হয়েছে।’’

পটাশপুরের বিভিন্ন এলাকায় ডাকের সাজ এবং প্রতিমার অলঙ্কার তৈরি হয়। এখানের শিল্পীরা জানাচ্ছেন, কলকাতা-সহ যে কয়েকটি বড়ো বারোয়ারি পুজোয় অলঙ্কার সরবরাহের বরাত এসেছিল, সেগুলির বেশিরভাগেই বন্যার আগে অলঙ্কার পাঠানো হয়েছে। কিন্তু জেলার বারোয়ারি পুজো মণ্ডপগুলির বরাত সময় মতো গিয়ে গিয়ে সমস্যায় পড়ছেন তাঁরা। তবে জল অল্প নেমে যেতেই ঝুরিয়া, মানপুর, কেকুউ গ্রামের ডাকের শিল্পীরা এখন অলঙ্কার তৈরি কাজ করছেন। ডাক শিল্পী জয়দেব বেরার কথায়, ‘‘বন্যায় কারণে অনেক মণ্ডপের ডাকের অলঙ্কারের বরাত বাতিল হয়েছে। কলকাতায় যে বরাত এসেছিল সেই কাজ হচ্ছে। কাজের বেশ মন্দা দেখা দিয়েছে।’’

দেবীর আগমণে যে লোকগুলির মুখে সবচেয়ে বেশি হাসি দেখা যেত, সেই ঢাকি বা মণ্ডপ শিল্পীরা এখন তাকিয়ে কালীপুজোর দিকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE