E-Paper

ধান কেনায় লক্ষ্য পূরণ নিয়ে সংশয় থাকছেই

গতবার পশ্চিম মেদিনীপুরে ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লক্ষ ৭ হাজার মেট্রিক টন। সেখানে এ বার রাখা হয়েছে ৩ লক্ষ ৬০ হাজার মেট্রিক টন।

বরুণ দে

শেষ আপডেট: ১৭ মার্চ ২০২৫ ০৯:৩৪
—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

সহায়কমূল্যে ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত রয়েছে। তবে পশ্চিম মেদিনীপুরে ওই লক্ষ্যমাত্রা এ বার পূরণ হবে কি না, সংশয় রয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার নিরিখে এ জেলায় এখনও পর্যন্ত প্রায় ৬০ শতাংশ ধান কেনা হয়েছে। বাকি রয়েছে প্রায় ৪০ শতাংশ কেনা। জেলার খাদ্য নিয়ামক অরবিন্দ সরকার অবশ্য বলছেন, ‘‘লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছনোর ব্যাপারে আমরা আশাবাদী।’’

গতবার পশ্চিম মেদিনীপুরে ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লক্ষ ৭ হাজার মেট্রিক টন। সেখানে এ বার রাখা হয়েছে ৩ লক্ষ ৬০ হাজার মেট্রিক টন। রাজ্য থেকেই এই লক্ষ্যমাত্রা স্থির করে দেওয়া হয়েছে। কয়েক মাস আগে ঘাটাল-সহ জেলার একাংশে পিঠোপিঠি দু’বার বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। তার জেরে ধান চাষ নষ্ট হয়েছিল। ফলে, ফলনও কমেছিল। তাই এই লক্ষ্যমাত্রা কমানো হয়েছে বলেই অনেকের অনুমান।

গত নভেম্বর মাস থেকে শুরু হয়েছে সহায়কমূল্যে ধান কেনা। জেলায় ধান ক্রয়কেন্দ্র (সিপিসি) চালু রয়েছে ৩৪টি। পাশাপাশি, ধান কেনার ভ্রাম্যমাণ শিবিরও (মোবাইল ক্যাম্প) চালু রয়েছে বলে দাবি। পাশাপাশি, বেশ কিছু কৃষি সমবায় সমিতি, স্বনির্ভর গোষ্ঠীও শিবির করে ধান কিনছে।

উল্লেখ্য, পশ্চিম মেদিনীপুরে গতবারও ধান কেনার লক্ষ্যপূরণ হয়নি। কেনা হয়েছিল প্রায় ২ লক্ষ ৩৮ হাজার মেট্রিক টন ধান। অর্থাৎ, লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৫৮ শতাংশ ধান কেনা হয়েছিল। বাকি থেকে গিয়েছিল ৪২ শতাংশ কেনা। এ বারও পরিস্থিতি তেমনই। এ বার অবশ্য ধানের সহায়কমূল্য বেড়েছে। গতবার সহায়কমূল্য ছিল কুইন্টালপিছু ২,১৮৩ টাকা। সেখানে এ বার ১১৭ টাকা বেড়ে হয়েছে ২,৩০০ টাকা। চাষি সরাসরি ধান ক্রয়কেন্দ্রে (সিপিসি) এসে ধান বিক্রি করলে, সে ক্ষেত্রে তিনি কুইন্টালপিছু অতিরিক্ত ২০ টাকা উৎসাহভাতা পান। অর্থাৎ, সে ক্ষেত্রে কুইন্টালপিছু তিনি পান ২,৩২০ টাকা। ’

আমন মরসুমের ধান ওঠার পর প্রতি বছর নভেম্বর থেকে শুরু হয় সহায়কমূল্যে ধান কেনা। এ বারও তাই হয়েছে। মূলত, অভাবি বিক্রি ঠেকাতে সহায়কমূল্যে ধান কেনা হয়। সহায়কমূল্যে ধান কেনা পর্বে অনিয়ম-বেনিয়মের অভিযোগও ওঠে। ফড়েদের একাংশ ‘চাষি’ সেজে সহায়কমূল্যে ধান বিক্রি করে, মুনাফা লোটে বলে অভিযোগ। এই পর্বে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে এ বার বাড়তি সতর্কতা নিয়েছে প্রশাসন। জেলার খাদ্য নিয়ামক বলেন, ‘‘জেলায় সবমিলিয়ে ৪১টি সিপিসি রয়েছে। এরমধ্যে ৭টি মোবাইল- সিপিসি। বিভিন্ন ব্লকের সিপিসি’তে নিয়মিত পরিদর্শন হচ্ছে।’’

এ জেলায় ফি বছর গড়ে ধান উৎপাদন হয় ১৫-১৬ লক্ষ মেট্রিক টন। সেখানে সহায়কমূল্যে কেনার লক্ষ্যমাত্রা থাকে গড়ে সাড়ে ৩ থেকে ৪ লক্ষ মেট্রিক টন। অর্থাৎ, উৎপাদনের প্রায় চারভাগের একভাগ। একাধিক মহল মনে করাচ্ছে, জেলায় যে পরিমাণ ধান উৎপাদন হয়, তার সবটা কখনও সহায়কমূল্যে কেনা সম্ভবও নয় সরকারের। উৎপাদিত ফসলের কিছুটাই কেনে। এর পিছনে নির্দিষ্ট কারণও রয়েছে। জেলায় শিবির করে সহায়কমূল্যে ধান কেনা শুরু হলে, খোলাবাজারে ধানের দাম সে ভাবে পড়ে না। ফলে, ফসলের ন্যায্য মূল্যটুকু মেলে। অন্তত, ধান বিক্রি করে বড় ধরনের ক্ষতির মুখ দেখতে হয় না চাষিদের।

চাষিদের একাংশ মনে করাচ্ছেন, সহায়কমূল্যে ধান কেনায় গতি থাকলে ধান ব্যবসায়ীদের (একাংশ ফড়ে) সঙ্গে দরদাম করাও তুলনায় সহজ হয়। পাশাপাশি, গণবন্টন ব্যবস্থায় চাল সংগ্রহের জন্যও সহায়কমূল্যে ধান কেনে সরকার। এ বার এখনও পর্যন্ত জেলায় ২ লক্ষ ১৩ হাজার ২২৮ মেট্রিক টন ধান সহায়কমূল্যে কেনা হয়েছে। শতাংশের নিরিখে যা ৫৯.২৩ শতাংশ। জেলা খাদ্য দফতরের এক আধিকারিকের দাবি, ‘‘খোলাবাজারে ধানের দাম এ বার সে ভাবে পড়েনি। এ বার জেলার কোথাও কিন্তু ধানের অভাবি বিক্রি হচ্ছে না।’’

এই পরিস্থিতিতে ওই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে যেন হিমশিম অবস্থা।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

midnapore

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy