জখম গাড়ির চালক শেখ শাহিনুর। (ডানদিকে) চিকিৎসক প্রভাকর সাহু।
রাস্তায় গাড়ি আটকে কালীপুজোর চাঁদা চেয়েছিল ক্লাবের একদল ছেলে। ১০ টাকা দিয়ে গাড়ি নিয়ে এগিয়ে যান চালক। তারই জেরে দুর্ঘটনার গুজব রটিয়ে সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের এক চিকিৎসক ও ভাড়া গাড়ির চালককে মারধরের অভিযোগ উঠল পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতনে।
মোহনপুরের বাসিন্দা প্রভাকর সাহু দাঁতনের ভুরঙ্গি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক। এ দিন ভাড়ার গাড়িতে দাঁতন ব্লকের বামুনদায় এক অনুষ্ঠানে যাচ্ছিলেন তিনি। গাড়ি চালাচ্ছিলেন শেখ শাহিনুর আলম। অভিযোগ, দাঁতনের চকইসমাইলপুর পঞ্চায়েতের বৈচা বাহারদা গ্রামে কয়েকজন যুবক গাড়ি আটকে কালীপুজোর চাঁদা চায়। চালক শাহিনুর ১০ টাকা দিলেও সন্তুষ্ট হয়নি চাঁদা আদায়কারীরা। আরও টাকা চায় তারা। শাহিনুর তখন কোনওমতে গাড়ি নিয়ে এলাকা ছাড়েন। দাঁতনের ষড়রংয়ের কাছে মোটরসাইকেলে ধাওয়া করে আসা কিছু যুবক ও সেখানকার গ্রামবাসীরা ফের গাড়িটিকে আটকায়। এরপরই গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। মারধর করা হয় শাহিনুরকেও। চিকিৎসক প্রভাকরবাবুকেও হেনস্থা করা হয়। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি সামলায়। থানায় অভিযোগ দায়ের করেন শাহিনুর। দুই যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে দু’টি মোটরসাইকেল।
দাঁতনের বৈচা-বাহারদার একটি ক্লাবের ছেলেরা কালীপুজোর জন্য কয়েকদিন ধরেই রাস্তায় গাড়ি আটকে চাঁদা আদায় করছে। এ দিনও দুপুরে তারা চিকিৎসকের গাড়িটি আটকায়। চিকিৎসক প্রভাকরবাবু বলেন, “চালক ১০ টাকা দিয়েছিলেন। কিন্তু ওরা খুশি হয়নি। তারপরই রটিয়ে দেয় আমাদের গাড়ি দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে। এই গুজবের জেরে ষড়রং গ্রামে ঢুকতেই আমাদের গাড়ি ঘিরে ভাঙচুর, মারধর শুরু হয়।” সাহিনুরেরও বক্তব্য, “দুর্ঘটনার গুজব রটিয়েই আমাদের উপর হামলা চালানো হয়েছে।”
পুজোর মরসুমে চাঁদার জুলুম পশ্চিম মেদিনীপুরে চেনা ঘটনা। বিশেষ করে কালীপুজোর আগে সমস্যা বাড়ে। মূলত জাতীয় সড়ক, রাজ্য সড়কগুলোয় বাস, লরি, ছোট গাড়ি দাঁড় করিয়ে চলে চাঁদার জন্য জোর-জুলুম। এ বারও মেদিনীপুরের ধর্মা-কেশপুর, কুইকোটা-ভাদুতলা, ধর্মা-মোহনপুর রাস্তায় এ ভাবে চাঁদা আদায় চলছে। মেদিনীপুর শহরেও পথ আটকে চাঁদা আদায় হচ্ছে। ছড়াচ্ছে ক্ষোভ। বাস মালিকদের সংগঠন ‘বাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর জেলা সম্পাদক মৃগাঙ্ক মাইতির কথায়, “চাঁদার জুলুম বন্ধের জন্য বহুবার বলা হয়েছে। তবে কাজের কাজ হয়নি।’’
দাঁতনের ঘটনায় যে ক্লাবের বিরুদ্ধে চাঁদার জুলুমের অভিযোগ, তার সম্পাদক নরনারায়ণ দাস অবশ্য একেবারে অন্য কথা বলছেন। তাঁর দাবি, “আমাদের ক্লাবের সদস্যদের দেওয়া টাকাতেই সাত বছর ধরে কালীপুজো করছি। গাড়ি থামিয়ে চাঁদার জুলুমের কথা ঠিক নয়।’’
তাহলে এ দিনের ঘটনা কী করে ঘটল? ওই ক্লাব সম্পাদকের দাবি, ‘‘আমাদের ক্লাবের কিছু ছেলে স্থানীয় পান দোকানে দাঁড়িয়ে ছিল। গাড়িটি সেখান দিয়ে এমনভাবে যায় যে গ্রামের একটি ছেলে মুখ থুবড়ে পড়ে যায়। তারপরই পাশের গ্রামের লোকেরা গাড়িটিকে আটকায়।” দাঁতনের বিধায়ক বিক্রম প্রধান অবশ্য বলেন, “এ ভাবে চাঁদার জুলুম, মারধরের ঘটনা বরদাস্ত করা হবে না। পুলিশকে বলেছি ব্যবস্থা নিতে।”
খড়্গপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অভিষেক গুপ্তের বক্তব্য, “ঘটনার পরেই আমরা মামলা রুজু করেছি। দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। চাঁদার জুলুম বন্ধে সব জায়গায় অভিযান চলছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy