জলের জন্য অপেক্ষা। মেদিনীপুরের দেওয়াননগরে।— রামপ্রসাদ সাউ
সকাল সকালই লম্বা লাইন। মানুষের থেকে সংখ্যায় বেশি বালতি-গামলা। লাইন আর এগোয় না। কল দিয়ে যে সুতোর মতো জল পড়ছে। একটা বালতি ভরতেই আধ ঘন্টা লাগছে।
লোডশেডিং হলে সেটুকু জলও মিলবে না। লাইনে দাঁড়ানোই সার। নতুন গড়ে ওঠা বসতিগুলিতে আবার অনেক এলাকায় এখনও পুরসভা জলের লাইন পৌঁছয়। সেখানে পানীয় জলের ভরসা নলকূপ।
গ্রীষ্মের মেদিনীপুরে জলসঙ্কটের ছবিটা এমনই। শহরবাসীর প্রশ্ন, চারদিকে নীল সাদা রং হচ্ছে, ডিভাইডার ভেঙে নতুন করে গড়া হচ্ছে, ফুটপাথ হচ্ছে, রাস্তার ধারে বসছে ত্রিফলা, অথচ পানীয় জলের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ত অবহেলা কেন? পুরপ্রধান প্রণব বসু অবশ্য বলছেন, “পানীয় জলের সার্বিক উন্নয়ন ঘটাতে পরিকল্পনা তৈরি হচ্ছে। তা রূপায়িত হয়ে গেলেই শহরে পানীয় জলের সঙ্কট থাকবে না।’’
মেদিনীপুর শহরে বর্তমানে ২৫টি ওয়ার্ড। জলের জন্য ভরসা সেই কমসাবতী। তবে কাঁসাইয়ে রয়েছে মাত্র দু’টি পাম্প। আর পাম্প হাউসকে ‘নো লোডশেডিং জোন’-এর আওতায় আনা যায়নি। ফলে বিদ্যুৎ না থাকলেই জল তোলা বন্ধ থাকে। তার জেরে শহরের বহু এলাকার মানুষ জল পান না। অরবিন্দনগর, কুমোরপাড়া এলাকার বাসিন্দা সুজন রায়, কাকলী পালদের কথায়, “আমাদের এলাকায় নিত্যদিন জলের সমস্যা। জল এলেও সরু সুতোর মতো পড়ে। এক বালতি জল পেতেই হিমশিম অবস্থা।’’ রাজাবাজারের বাসিন্দা জগবন্ধু ঘোষ আবার বলেন, “মাসের অর্ধেক দিন জল মেলে না।”হবিবপুরের শ্যামল চন্দ্রের বক্তব্য, “এমনিতেই জল পড়ে কম। তার উপর বেশিরভাগ দিন আধঘন্টা থেকে পঁয়তাল্লিশ মিনিটের বেশি জল থাকে না। দু’বেলা অন্তত দু’ঘন্টা জল না দিলে কি হয়!”
মেদিনীপুর পুর এলাকায় দিনে ২৪ মিলিয়ন গ্যালন জলের প্রয়োজন। কিন্তু বর্তমান পরিকাঠামোয় দিনে ৭-১০ মিলিয়ন গ্যালন লিটারের বেশি জল তুলতে পারে না পুরসভা। ঘাটতির অঙ্কেই স্পষ্ট জল-সঙ্কট কতখানি। বাধ্য হয়ে অনেকেই বাড়িতে গভীর নলকূপ বসিয়েছেন। তবে সেখানেও রয়েছে সমস্যা। বাড়িতে নলকূপ বসাতে হলেও পুরসভাকে ৩০ হাজার টাকা দিতে হয়, যা দেওয়ার সাধ্য অনেকেরই থাকে না। পানীয় জলের সমস্যা মেটাতে পুর-কর্তৃপক্ষও বিভিন্ন ওয়ার্ডে গভীর নলকূপ বসিয়েছে। কিন্তু তাতেও সমস্যা মেটেনি।
তাহলে উপায়টা কী? পুর-পারিষদ (জল) মৌ রায় বলেন, “আপাতত সমস্যা মেটাতে পাম্প হাউসগুলিকে নো লোডশেডিং জোনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য বিদ্যুৎ দফতরের কাছে আবেদন জানিয়েছি। আর শহরবাসীর কাছে আবেদন, যাতে তাঁরা জলের অপচয় বন্ধ করেন।’’
শহরে পানীয় জলের নতুন প্রকল্পের জন্য অবশ্য ২০০ কোটি টাকা মঞ্জুর করেছে সরকার। নির্বাচনের আগে ৬০ কোটি টাকা এসেও গিয়েছে। পুরসভা সূত্রে খবর, বরাদ্দ টাকায় শহরের সব পুরনো জলের লাইন নতুন করে তৈরি করা হবে। যে সব নতুন এলাকায় এখনও জলের পাইপ লাইন করা যায়নি সেখানে তা-ও করা হবে। ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে সমীক্ষা। তাছাড়া ১০-১২টি জলাধার তৈরি করা হবে। কোথায় সেই জলাধার তৈরি করলে এক সঙ্গে অন্তত দু’টি ওয়ার্ডের পানীয় জল সরবরাহের সুবিধে মেলে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যাতে জলাধারটি দীর্ঘস্থায়ী হয় সে জন্য সংশ্লিষ্ট এলাকার মাটি পরীক্ষার কাজও শুরু হয়েছে। বসানো হবে আরও দু’টি পাম্প। মৌদেবী বলেন, ‘‘ভূগর্ভস্থ জলের স্তর নেমে যাচ্ছে। তাই আমরা পুরো জলটাই কাঁসাই থেকে তুলব। সে জন্য সেচ দফতরকে দ্রুত অ্যানিকেত তৈরির কাজ শেষ করতে চিঠি দিয়েছি।’’ নির্বাচন-পর্ব মিটলেই কাজ শুরুর আশ্বাস দিয়েছেন পুর-কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy