Advertisement
E-Paper

‘চিপকো’য় চমৎকার: ইতিহাস না জেনেই জড়িয়ে ধরে গাছ বাঁচাল খুদেরা

গাছ কাটা বন্ধ করতে বাধ্য হল করাত কলের লোকজন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০১৯ ০১:৩৬
একজোটে: গাছ বাঁচাতে। শুক্রবার এগরার বর্তনা গ্রামে। নিজস্ব চিত্র

একজোটে: গাছ বাঁচাতে। শুক্রবার এগরার বর্তনা গ্রামে। নিজস্ব চিত্র

সবুজ বাঁচাতে পাঁচ দশক আগে উত্তরাখণ্ডে গাছের গুঁড়ি জড়িয়ে ধরেছিলেন স্থানীয় মহিলারা। সেই ‘চিপকো আন্দোলন’ পরে ঠাঁই পায় ইতিহাসে।

‘চিপকো’র সেই ইতিহাস জানে না এগরার বর্তনার প্রথামিক স্কুলের খুদে পড়ুয়া। কিন্তু গাছ বাঁচাতে শুক্রবার তারাও জড়িয়ে ধরল গাছের গুঁড়ি। তাতে গাছ কাটা বন্ধ করতে বাধ্য হল করাত কলের লোকজন।

এগরা-১ ব্লকের বর্তনা গ্রামে প্রথামিক বিদ্যালয়ের কাছেই একটি খাস জায়গা রয়েছে। ১৯৮৫ সালে তৎকালীন বামফ্রন্ট পরিচালিত বরিদা গ্রাম পঞ্চায়েতের সহযোগিতায় স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা ওই জায়গায় বৃক্ষরোপণ করে। তাদের পরিচর্যা, রক্ষণাবেক্ষণে চারাগাছগুলি বর্তমানে বড় হয়েছে। স্থানীয় সূত্রের খবর, চারারোপণের কয়েক বছর পরে ওই খাস জায়গায় ৪৩০১ দাগের মালিকানা নিয়ে স্থানীয় দেবত্র সম্পত্তির মালিকেরা আদালতে মামলা করেন। তাতে ২০ ডেসিমাল জায়গাটি তাদের মালিকানাধীন হয় বলে দাবি।

কয়েকদিন আগে ওই ব্যক্তিরা ওই জায়গায় থাকা আকাশমণি গাছগুলি কাটতে শুরু করে এবং তা বেশ কয়েক লক্ষ টাকায় বিক্রিও করে দেওযা হয়। অভিযোগ, এর জন্য বন দফতর বা স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি নেওয়া হয়নি। গাছ কাটা আটকাতে গ্রামবাসী এবং স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা একজোট হন। তাঁরা এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানের কাছে লিখিত আবেদন করেন। অভিযোগ, পঞ্চায়েতের বাধা উপেক্ষা শুক্রবার সকালে ফের জোর করে গাছ কাটা শুরু হয়। প্রাথমিক ভাবে বেশ কয়েকটা গাছ করাত কলের শ্রমিকেরা কেটেও ফেলেন। খবর পেয়ে গ্রামবাসীরা এবং স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা ছুটে এসে বাধা দেন। কিন্তু তাতেও গাছ কাটা বন্ধ না হওয়ায় ছাত্রছাত্রীরা গাছগুলিকে জড়িয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।

শিশুদের আলিঙ্গনের আগেই কেটে দেওয়া হয়েছে গাছ। —নিজস্ব চিত্র

পরিবেশরক্ষার্থে স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের এই অহিংস প্রতিবাদে পিছু হটেন শ্রমিকরা। গাছ কাটা বন্ধ রেখে তাঁরা ফিরে যান। স্কুলের প্রধান শিক্ষক মনোজকুমার মিদ্যা বলেন, ‘‘চিপকো আন্দোলন কী, ছাত্ররা জানে না। এ দিন পরিস্থিতি দেখে স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের সবুজ বাঁচানোর লড়াইয়ে গাছ জড়িয়ে ধরেছে। আমরাও প্রতিবাদে সামিল হতে বাধ্য হয়েছি।’’ স্থানীয় এক গ্রামবাসী মধুসূদন পুলাই বলেন, ‘‘ওই ব্যক্তিরা বেআইনি ভাবে জায়গাটি নিজেরা দখল করেছে। এখনও স্কুলের নামে এই জায়গা রয়েছে। আমরা চাই পরিবেশের স্বার্থে গাছকাটা বন্ধ করা হোক।’’

চিপকো আন্দোলন

ঠিকাদারদের হাত থেকে হিমালয় পাদদেশে অরণ্য বাঁচাতে সত্তরের দশকে উত্তরাখণ্ডের চামেলি জেলায় (তৎকালীন উত্তরপ্রদেশ) গাছকে জড়িয়ে শুরু হয়েছিল চিপকো আন্দোলন। ১৯৭০ সালে শুরু হলেও তা চরম আকার নেয় ১৯৭৩ সালে। ১৯৩০ সালেও রাজস্থানের প্রত্যন্ত গ্রাম কার্তিকেয় কাম্বোজ গ্রামে চিপকো’র মতো আন্দোলন হয়েছিল। সে সময় খেজরি গাছ বাঁচাতে বৈষ্ণোই সম্প্রদায়ের ৩৬৩ জন মহিলা আত্মবলিদান করেছিলেন।

কেন আন্দোলন

করাত কল মালিকদের গাছ কাটার অনুমতি দেয় সরকার। কিন্তু ওই বনাঞ্চলের অধিবাসীদের জীবন ধারণের জন্য বছরে ১০টি গাছও কাটার অনুমতি দেয়নি বন বিভাগ। অভিযোগ, অধিবাসীদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে গাছ কাটার সুযোগ করে দিয়েছিল সরকার

নেতৃত্বে

আন্দোলনে যোগদানকারীদের মধ্যে অধিকাংশই মহিলা। গৌরী দেবী, সুদেশা দেবী, বাচ্চনী দেবী, সুন্দরলাল বহুগুণা, গোবিন্দ সিং রাওয়াত, চণ্ডীপ্রসাদ ভট্ট

গাছ কাটার জন্য কি অনুমতি নেওয়া হয়েছিল? দেবত্র সম্পত্তির এক মালিক দুলাল দাস মহাপাত্রকে এই নিয়ে ফোন করা হয়। কিন্তু তিনি ফোন তোলেননি। গাছ কাটার জন্য কোনও অনুমতি নেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন বরিদা গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান সিদ্ধেশ্বর বেরা। তিনি বলেন, ‘‘ওই খাস জায়গায় তৎকালীন পঞ্চায়েতের সহযোগিতায় পড়ুয়ারা গাছ লাগিয়েছিল। সেই নথি আমাদের কাছে রয়েছে। যাঁরা আইনগতভাবে জায়গার মালিক বলে দাবি করেছেন, তাঁদের গাছ কাটার কোনও অনুমতি দেওয়া হয়নি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

Egra Save Tree Chipko Chipko Movement
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy