Advertisement
E-Paper

সন্তান হারিয়ে মারমুখী মা

শুক্রবার সকালে ঝাড়গ্রাম জেলার লালগড়ের আজনাশুলি গ্রামের লাগোয়া পাখিবাঁধ এলাকায় অত্যুৎসাহী লোকের হট্টগোলের মধ্যেই সদ্যোজাতকে নিরাপদ জায়গায় সরানোর চেষ্টা করেছিল মা হাতটি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০১৯ ০০:৩৯
অসহায়: মা ও সদ্যোজাত। নিজস্ব চিত্র

অসহায়: মা ও সদ্যোজাত। নিজস্ব চিত্র

ধান খেতে সদ্য জন্মানো শাবকটি পড়ে আছে। তাকে শুঁড়ে টেনে জঙ্গলের দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে মা হাতি। মোবাইলে সেই ছবি তুলতে কয়েকশো লোক ছুটে আসছে। কেউ ভিডিয়ো তুলছে, কেউ আবার মা ও শাবক হাতিকে ফ্রেমে রেখে নিজস্বী তুলতে ব্যস্ত। সন্ত্রস্ত মা বার বার চেষ্টা করেও সদ্যোজাতকে জঙ্গলে নিয়ে যেতে পারছে না। কাঁপা কাঁপা পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেও পড়ে যাচ্ছে হস্তিশাবকটি।

শুক্রবার সকালে ঝাড়গ্রাম জেলার লালগড়ের আজনাশুলি গ্রামের লাগোয়া পাখিবাঁধ এলাকায় অত্যুৎসাহী লোকের হট্টগোলের মধ্যেই সদ্যোজাতকে নিরাপদ জায়গায় সরানোর চেষ্টা করেছিল মা হাতটি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সদ্যোজাত শাবকটির মৃত্যু হয়। এরপর সন্তানহারা মা হাতিটি তাড়া করে মেরে ফেলল এক জনকে। মৃতের নাম শৈলেন মাহাতো (৩৩)। বাড়ি লালগড়ের ধরমপুর অঞ্চলের বাঁধগোড়া গ্রামে। বন দফতর ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, স্থানীয় কয়েকজন যুবক মোবাইল ফোনে মৃত শাবকটির ছবি তুলছিলেন। শৈলেনও ছিলেন তাঁদের সঙ্গে।

বন দফতর ও স্থানীয় সূত্রে খবর, লালগড় রেঞ্জের ভাউদি বিটের জঙ্গলে ৩৫-৪০টি হাতির দল রয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে হাতির দলটি আজনাশুলি গ্রামের লাগোয়া ধান খেতে নেমেছিল। মাঠে এখন ধান রয়েছে। গভীর রাতে একটি হাতি ধান খেতেই শাবক প্রসব করে। তারপর লোকজনের তাড়া খেয়ে হাতির দলটি জঙ্গলে ঢুকে গেলেও সদ্যোজাত সন্তানকে ছেড়ে যেতে পারেনি মা হাতি। শুক্রবার দিনের আলো ফুটতেই স্থানীয় আজনাশুলি, মধ্যমকুমারী, কাঁকড়াদাঁড়া, ভাউদি, ধরমপুর, বনিশোল, ডুমুরকোটা, আঁধারজোড়া গ্রাম থেকে শয়ে শয়ে লোকজন শাবকটির ছবি তোলার জন্য ভিড় করেন। খবর পেয়ে এলাকায় যান বনকর্মী ও পুলিশ কর্মীরা। আসেন স্থানীয় পঞ্চায়েত-প্রশাসনের লোকজন। হাতিটি তার শাবককে সরানোর চেষ্টা করতে থাকে। সেই দৃশ্য ভিডিয়ো করতে শুরু করেন উপস্থিত লোকজন। শাবকটিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য মা হাতিটি আর্তনাদও করতে থাকে। হাজার খানেক লোকের ভিড় দেখে জঙ্গলের বাকি হাতিরাও সাহায্য করতে এগিয়ে আসেনি। এরমধ্যে কয়েকটা কুকুরও শাবকটিকে উত্যক্ত করতে থাকে।

যেখানে হাতিটা শাবক প্রসব করেছিল, সেখান থেকে জঙ্গলের দূরত্ব আধ কিলোমিটার। শাবকটিকে প্রায় জঙ্গলের কাছে ঠেলে নিয়ে গিয়েছিল হাতিটি। পাখিবাঁধের কাছে জঙ্গলে যাওয়ার বনপথটি উঁচুনিচু। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ধান খেত থেকে প্রায় ৫০০ মিটার দূরে এবড়ো খেবড়ো জমিতে গড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার ফলে চোট পাচ্ছিল শাবকটি। কিছুক্ষণের মধ্যেই শাবকটির মৃত্যু হয়। তারপর কিছুক্ষণ শাবকটির কাছে দাঁড়িয়ে আর্তনাদ করছিল মা হাতিটি। চোখে ছিল জল। এরপর হাতিটি জঙ্গলে ঢুকে যায়। বার কয়েক বেরিয়ে আসে শাবকের কাছে। শুঁড় দিয়ে স্পর্শ করে। ফের জঙ্গলে চলে যায়। তারপর আচমকা হাতিটি জঙ্গল থেকে ছুটে বেরিয়ে আসে। ওই সময় শৈলেনের কাছে চলে আসে হাতিটি। তখন শৈলেনের হাত থেকে তাঁর মোবাইল ফোনটি পড়ে যায়। তিনি ফোনটি কুড়োতে গেলে শৈলেনকে নাগালে পেয়ে আছড়ে পিষে মারে মা হাতিটি।

পরে মা হাতিটিকে জঙ্গলের দিকে খেদিয়ে দিয়ে শাবকের দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যান বনকর্মীরা। দুপুরে ময়নাতদন্তের পরে লালগড়ের ঝিটকার জঙ্গলে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী শাবকটির দেহ পুড়িয়ে দেওয়া হয়। মেদিনীপুরের ডিএফও সন্দীপকুমার বেড়োয়াল বলেন, ‘‘হাতি দেখার জন্য লোকজন জড়ো হয়েছিলেন। শাবরকটির মৃত্যুর ফলে মা হাতিটি ক্ষিপ্ত হয়ে গিয়েছিল। ওই হাতির হামলায় এক গ্রামবাসীর মৃত্যু হয়েছে।’’

দীর্ঘদিন হাতি নিয়ে গবেষণা করেছেন অবসরপ্রাপ্ত বনকর্তা সমীর মজুমদার। সমীর বলেন, ‘‘এলাকাবাসী অযথা হাতিকে উত্যক্ত করেন বলেই এমন ঘটনা ঘটে। হাতিকে নিয়ে নিজস্বী তোলা, হাতির সামনে গিয়ে ছবি তোলা কার্যত মৃত্যুকে ডেকে আনা। এ দিন এলাকাবাসীর কাণ্ডজ্ঞানহীন আচরণের জন্যই হাতি শাবক ও এক গ্রামবাসীর মৃত্যু হয়েছে।’’

Jhargram Elephant Social Media Viral
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy