Advertisement
০৪ মে ২০২৪

চাপ কাটাতে কেউ মন্দিরে, কেউ খেললেন পোষ্যের সঙ্গে

পরীক্ষা হয়ে গিয়েছে। ফল বেরোবে আজ, মঙ্গলবার। খড়্গপুরে পুরভোটের ফলপ্রকাশের আগে স্বভাবতই টেনশনে প্রার্থীরা। কিন্তু প্রকাশ্যে তাঁরা তা মানছেন না। তবে চাপমুক্ত থাকতে চেষ্টার কসুরও করছেন না। সোমবার কেউ গেলেন মন্দিরে পুজো দিতে। কেউ খেললেন পোষ্যের সঙ্গে। কেউ হেঁশেলে ব্যস্ত। কেউ ব্যস্ত থাকলেন দলের কর্মীদের সঙ্গে।

বিদায়ী পুরপ্রধান কংগ্রেসের রবিশঙ্কর পাণ্ডে কাজ করলেন নিজের অফিসে।

বিদায়ী পুরপ্রধান কংগ্রেসের রবিশঙ্কর পাণ্ডে কাজ করলেন নিজের অফিসে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০১৫ ০০:৩৯
Share: Save:

পরীক্ষা হয়ে গিয়েছে। ফল বেরোবে আজ, মঙ্গলবার।

খড়্গপুরে পুরভোটের ফলপ্রকাশের আগে স্বভাবতই টেনশনে প্রার্থীরা। কিন্তু প্রকাশ্যে তাঁরা তা মানছেন না। তবে চাপমুক্ত থাকতে চেষ্টার কসুরও করছেন না। সোমবার কেউ গেলেন মন্দিরে পুজো দিতে। কেউ খেললেন পোষ্যের সঙ্গে। কেউ হেঁশেলে ব্যস্ত। কেউ ব্যস্ত থাকলেন দলের কর্মীদের সঙ্গে। সোমবার সকালে ঘুম থেকে উঠে রোজকার মতো চা খেয়েছেন রেলশহরের প্রাক্তন পুরপ্রধান জহরলাল পাল। দুধ-চা, সঙ্গে দু’টো বিস্কুট। চা খেতে খেতেই খবরের কাগজে চোখ রেখেছেন। বাড়িতে দেখা করতে আসা দলের কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। একটু বেলা গড়াতে পাড়ার শিব মন্দিরে গিয়ে পুজো দিয়েছেন। কী প্রার্থনা করলেন? জহরবাবু বলছেন, “সকলের মঙ্গল কামনাই করেছি।” গণনা কেন্দ্রের অদূরে দলের ক্যাম্প অফিস হয়েছে। বিকেলে সেই ক্যাম্প অফিসে আসেন প্রাক্তন পুরপ্রধান। গত পুরভোটে ১৩২ ভোটের ব্যবধানে জেতেন জহরবাবু। টেনশন হচ্ছে কি? হেসে তৃণমূলের এই হেভিওয়েট প্রার্থীর জবাব, “দূর! সকাল থেকে তো বেশ ফূর্তিতেই আছি!”

রেলশহরে তৃণমূলের আর এক হেভিওয়েট প্রার্থী দেবাশিস চৌধুরী আবার দিনের বেশিরভাগ সময়টাই দলের কর্মীদের সঙ্গে কাটালেন। দেবাশিসবাবু দলের খড়্গপুর শহর সভাপতি। সকালে বাড়ি থেকে বেরিয়ে তৃণমূলের শহর কার্যালয়ে চলে আসেন। খবর কাগজে চোখ বুলিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি টিভিতে চোখ রাখেন। ফোনে কথা বলেন দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে। গত পুরভোটে ৮২২ ভোটের ব্যবধানে হেরেছিলেন। এ বার কি জয় নিশ্চিত? তৃণমূলের শহর সভাপতি বলছেন, “মানুষের উপর আমার বিশ্বাস আছে।”

রেলশহরের প্রাক্তন উপপুরপ্রধান তৃণমূলের তুষার চৌধুরী দিনের অনেকটা সময় কাটিয়েছেন নিজের পোষ্যের সঙ্গে। সকালে ঘুম থেকে উঠে রোজকার মতো চা খেয়েছেন। দুধ- চা। সঙ্গে দু’টো বিস্কুট। একই সময় বিস্কুট খেয়েছে তাঁর পোষ্যও। পশুপ্রেমী হিসেবে পরিচিত তুষারবাবুর কথায়, “আমার পাশের খাটেই ও ঘুমোয়। আমি যখন চা- বিস্কুট খাই, ও তখনই খায়। আমার দু’টো বিস্কুট হলেই চলে, ওর অবশ্য ছ’টা। নাম রিকি, আমি অবশ্য ওকে মাম্মা বলেই ডাকি।” গত পুরভোটে তুষারবাবুর জয়ের ব্যবধান ৫৬৭। এ বার মার্জিন বাড়বে না কমবে? জবাব আসে, “এই নিয়ে তিনটা পুরভোট হয়ে গেল। মার্জিন নিয়ে ভাবছি না। জানি এলাকার মানুষ সঙ্গেই আছেন।”

দলীয় কার্যালয়ে ব্যস্ত সিপিএমের অনিতবরণ মণ্ডল।

রেলশহরের বিদায়ী পুরপ্রধান কংগ্রেসের রবিশঙ্কর পাণ্ডেরও এ দিন সকাল ছ’টা নাগাদ ঘুম ভেঙেছে। লিকার-চা আর বিস্কুট খেয়ে রওনা দিয়েছেন দলের ওয়ার্ড কার্যালয়ে। সেখান থেকে ‘চাচা’র বাড়ি। প্রবীণ কংগ্রেস বিধায়ক জ্ঞানসিংহ সোহন পাল মানে ‘চাচা’র হাতেই খড়্গপুর পুরভোটে দলের কাজকর্ম দেখভালের গুরুদায়িত্ব সঁপেছিল কংগ্রেস। দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত অবশ্য পুরসভাতেই ছিলেন রবিশঙ্করবাবু। গত পুরভোটে ১,৪৫৯ ভোটে জিতেছিলেন। এ বার? বিদায়ী পুরপ্রধানের জবাব, “দেখাই যাক না কী হয়!”

বিজেপির বেলারানি অধিকারী এ দিন রান্নাঘরেই ব্যস্ত ছিলেন। নিজে হাতে সব রান্না করেছেন। বিদায়ী কাউন্সিলর বেলারানিদেবী জয় নিয়ে বেশি ভাবছেন না। গত পুরভোটে সর্বাধিক ভোটে জিতেছিলেন তিনি। ব্যবধান ছিল ১,৪৯৬। এ বার কী হবে? বিজেপির এই হেভিওয়েট প্রার্থী বলছেন, “বিজেপিই যে বিকল্প, তা মানুষ বুঝে গিয়েছেন।” রান্না-খাওয়ার ফাঁকে দলের কার্যালয়ে গিয়ে কর্মীদের সঙ্গে কথাও বলে এসেছেন বেলাদেবী।

পোষ্যের সঙ্গে খোশমেজাজে তৃণমূল প্রার্থী তুষার চৌধুরী।

সিপিএমের বিদায়ী কাউন্সিলর অনিতবরণ মণ্ডল এ দিন দলের কর্মীদের সঙ্গেই ব্যস্ত ছিলেন। অনিতবাবু দলের শহর জোনাল সম্পাদক। গত পুরভোটে ১,১০২ ভোটের ব্যবধানে জেতেন। চা-প্রাতরাশের মাঝে খবরের কাগজ, টিভিতে চোখ রেখেছেন। সিপিএমের এই হেভিওয়েট প্রার্থী বলছেন, “আশা করি, এ বার দলের ফল ভালই হবে।” রেলশহরের বিদায়ী উপ-পুরপ্রধান চিত্তরঞ্জন মণ্ডল রোজকার মতো এ দিনও ভোর পাঁচটায় ঘুম থেকে ওঠেন। হাত-মুখ ধোয়ার পর বাড়ির গাছ থেকে ফুল তোলেন। পরে নিজেই পুজো সারেন। বাড়ি থেকে বেরিয়ে দলের ওয়ার্ড কার্যালয়ে যান। গত পুরভোটে ৫৭১ ভোটে জেতেন চিত্তরঞ্জনবাবু। এ বার? এই কংগ্রেস প্রার্থী বলছেন, “মার্জিন নিয়ে ভাবছি না।”

রেলশহর খড়্গপুরের পুরভোটে এ বার চতুর্মুখী লড়াইয়ের জটিল অঙ্ক কাজ করছে। এ দিন দিনভর চা দোকান থেকে পাড়ার আড্ডা, সবর্ত্র শুধু হার-জিত নিয়ে জল্পনা। বন্ধুদের মধ্যে বাজি ধরাধরিও চলেছে। এই জল্পনা আর উত্‌কন্ঠার মধ্যে সব দলের প্রার্থীরাই মোটের উপর একমত, চতুর্মুখী লড়াইয়ে জয়-পরাজয়ের মীমাংসা হবে অল্প ব্যবধানেই। তবে শেষ পর্যন্ত কী হয় এখন তারই অপেক্ষা।

ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE