Advertisement
E-Paper

ট্রেনের মডেলে উৎসাহ রেলশহরে

রেলের প্রায় সব বিভাগেই কাজ বন্ধ। ছোট-বড় কারখানাতেও পুজোর জাঁক। রাস্তায় রাস্তায় জনস্রোত। আর সাউন্ড-বক্সে তারস্বরে নানা ভাষার গান। বিশ্বকর্মা পুজো দিয়ে শারদোৎসবের সূচনা হয়ে গেল রেলশহর খড়্গপুরে।

দেবমাল্য বাগচী

শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০০:৪৩
পরিচিত গিরি ময়দান স্টেশনের মডেল। খুদেদের উৎসাহে যোগ দিয়েছেন বড়রাও। রামপ্রসাদ সাউয়ের তোলা ছবি।

পরিচিত গিরি ময়দান স্টেশনের মডেল। খুদেদের উৎসাহে যোগ দিয়েছেন বড়রাও। রামপ্রসাদ সাউয়ের তোলা ছবি।

রেলের প্রায় সব বিভাগেই কাজ বন্ধ। ছোট-বড় কারখানাতেও পুজোর জাঁক। রাস্তায় রাস্তায় জনস্রোত। আর সাউন্ড-বক্সে তারস্বরে নানা ভাষার গান। বিশ্বকর্মা পুজো দিয়ে শারদোৎসবের সূচনা হয়ে গেল রেলশহর খড়্গপুরে।

শনিবার সকাল থেকে চলছিল মেঘ-রোদের খেলা। সঙ্গে ভ্যাপসা গরম। তবে তা উপেক্ষা করেই ঢল নেমেছে মণ্ডপে মণ্ডপে। খড়্গপুরে প্রায় আড়াইশো বিশ্বকর্মা পুজো হয়। তবে সব থেকে বড় আকর্ষণ রেলের পুজো। রেল কারখানা এ দিন সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছিল। ইংরেজ আমলের পর থেকেই এখানকার রেল কারখানায় চলছে দেব-কারিগর বিশ্বকর্মার আরাধনা। পরে রেল কারখানার প্রতিটি বিভাগে আলাদা করে বিশ্বকর্মা পুজো শুরু হয়। এ দিন পুজোর পাশাপাশি প্রতিটি মণ্ডপে চলেছে ভোগ বিতরণ। তা ছাড়া, রেলের স্টেশন চত্বরে বোগদা, পুরাতনবাজারে রেলের একাধিক বিভাগে আলাদা করে ছোট-বড় পুজো হয়েছে। টেলিফোন বিভাগ, সাহাচকের শিল্পতালুক, বিদ্যাসাগর শিল্পতালুকের বিভিন্ন সংস্থা, ইন্দার বিভিন্ন গাড়ির গ্যারাজ-সহ পুজো হয়েছে শহরের আনাচে কানাচে সর্বত্রই।

রেলের পুজোর জৌলুস খুব বেশি না হলেও আবেগে খামতি ছিল না। রেলকর্মীরা ঢাকের বোলের সঙ্গে নাচের তালে পা মিলিয়েছেন। নানা জায়গায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়েছে। কোথাও রেলকর্মী পরিবারের মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণদের সংবর্ধনা, কোথাও আবার বসে আঁকো প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণও হয় এ দিন। উৎসবে মেতেছিলেন মহিলা কর্মীরাও। সিএমই প্রোডাকশন বিভাগের কর্মী স্বাতী মণ্ডল, হুইল শপের সুজাতা ভাণ্ডারি, লোকো পিওএইচ শপের পার্বতী টুডুরা বলছিলেন, “আমরা বিভিন্ন শপের মহিলা কর্মীরা প্রতিবার এভাবেই একসঙ্গে বিভিন্ন শপে পুজো দেখতে যাই। এ বছর দু’টি শপের একজন করে কর্মী মারা গিয়েছেন। তাই সেখানে পুজোর আড়ম্বর নেই। তবে
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে উৎসবের আমেজ অটুট রয়েছে।”

এ দিন রেল ওয়ার্কশপের বিশাল এলাকার ভিতরে ডিজেল পিওএইচ শপ, ইএমইউ মোটর কোচ পিওএইচ শপ, ডিজেল লোকোমোটিভ শপ, ইলেক্ট্রিক লোকোমোটিভ শপে পুজো দেখতে ভিড় জমিয়েছে মানুষ। অবশ্য রেল কারখানায় এ বছর আকর্ষণের কেন্দ্রে ছিল লোকো টুল বিভাগের শপ। নয়া প্রযুক্তির ট্রেনের মডেলের সঙ্গে ব্রিটিশ জমানায় চলা গ্যারাট ইঞ্জিন, স্টিম ইঞ্জিন ও ফেয়ারি ক্যুইন ইঞ্জিনের মডেল ছিল প্রদর্শনীতে। লাইনে থাকা ১২ভোল্টের পাওয়ারে চলছিল মডেল ট্রেন। এ সব দেখে বেজায় খুশি কচিকাঁচারা। পঞ্চম শ্রেণির পড়ুয়া বীরূপাক্ষ দে বলছিল, “আমার বাবা এসি শপের ইঞ্জিনিয়ার। বাবার সঙ্গে ঠাকুর দেখতে বেরিয়েছি। ছোট-ছোট ট্রেনের মডেল দেখে দারুণ লাগছে।” বোগদা স্টেশন চত্বরে রেলের ট্রাকশন ডিট্রিবিউশন রিপেয়ার ডিপোর পুজোতেও এ বার ট্রেনের মডেল ছিল। সিগন্যাল ওয়ার্কশপে পুজোয় ছিল দার্জিলিংয়ের ট্রয় ট্রেনের মডেল। সেই সঙ্গে কীভাবে রেলের ট্রেন চলাচলে সিগন্যাল কাজ করে সেই মডেলও তুলে ধরা হয়েছে।

পুজোয় তেমন থিম না থাকলেও মূর্তিতে অভিনবত্ব ছিল। কারখানার পেইন্ট শপে বিশ্বকর্মার মূর্তিতে ছিল দু’টি হস্তিশাবক। আর বিশ্বকর্মায় সরস্বতীর আদল। আবার ট্রিমিং শপের পুজোয় দেব কারিগরের মূর্তির পিছনে দেখা গিয়েছে দুর্গা, বালাজি-সহ বহু দেব-দেবীর মূর্তি। বোগদার বিশ্বকর্মায় বিশ্বকর্মার মাথার উপর কৃষ্ণ ও দুই ঊর্বশীর মূর্তি রয়েছে।

রেল, কারখানার বাইরেও খড়্গপুরের পাড়ায় পাড়ায় বিশ্বকর্মা পুজো হয়েছে এ দিন। খরিদা মন্দিরতলার ‘ড্রাইভারবৃন্দের পুজো’ এ বার সপ্তম বর্ষে পড়ল। কম বাজেটের এই পুজোয় প্রধান আকর্ষণ স্থানীয় মূর্তিশিল্পী নয়ন পালের তৈরি ‘সবচেয়ে বড় বিশ্বকর্মা’। প্রায় ২০ফুট উঁচু মূর্তি দেখতে ভিড় জমেছে ভালই। ট্রাকশন ওএইচই বিভাগের পুজোয় এ বার রিও অলিম্পিকের কিছু দৃশ্য ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এ নজর কেড়েছে উৎসাহী দর্শনার্থীদের।

biswarkarma Exhibition
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy