বিগত কয়েক বছরে ঝাড়গ্রাম জেলায় সরকারি ভাবে ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। তবে ২০২৪-’২৫ অর্থবর্ষে দেখা যাচ্ছে উল্টো ছবি। বোরো ধান এখনও বিক্রি করতে পারেননি চাষিরা। তার আগেই সরকারি ভাবে ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে জেলায়। ফলে বিপাকে পড়ছেন চাষিদের একাংশ।
চাষিদের সমস্যা আরও বাড়ছে সময় মতো যোগাযোগের অভাবে। অভিযোগ, চাষিদের একাংশ ধান বিক্রির তোড়জোড় শুরু করছেন। অথচ ধান কেনার কেন্দ্র থেকে একেবারে শেষ মুহূর্তে চাষিদের জানানো হচ্ছে, নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ইতিমধ্যে পূরণ হয়েছে। সুতরাং আর ধান কেনা সম্ভব নয়। লালগড় গ্রাম পঞ্চায়েতের দুর্লভপুর গ্রামের বাসিন্দা অজিত মণ্ডল বলেন, ‘‘দিনকয়েক আগে ধান বস্তায় পুরতে শুরু করেছিলাম। ৩০ কুইন্টাল ধান নিয়ে যাওয়ার জন্য ১৫০০ টাকা দিয়ে গাড়ি ভাড়াও করেছিলাম। কিন্তু সে দিন বিকেলেই কিসান মান্ডি থেকে ফোন করে জানিয়ে দেওয়া হয় ধান কেনা হবে না। গাড়ি ভাড়াও গেল। এখন কী করব এতো ধান!’’ অজিত অরাও বলছেন, ‘‘খোলা বাজারে ধান ১৩০০ টাকা প্রতি কুইন্টাল। অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে। নভেম্বর মাস পর্যন্ত রাখাও মুশকিল। ধানে পোকা ধরে যাবে।’’
খাদ্য দফতর সূত্রে খবর, ২০২৪-’২৫ বর্ষে জেলায় ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৬৩০৭০ মেট্রিক টন। ইতিমধ্যে মোট ৫৪৬৮৮ জন চাষির থেকে কেনা হয়েছে ১৬২৫৭০.৭৯১ মেট্রিক টন ধান। অর্থাৎ নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা প্রায় পূরণ হয়ে গিয়েছে। জেলায় ধান কেনার দায়িত্বে থাকা ৫১টি স্বসহায়ক দল ২৭৯১৭.৮১৩ মেট্রিক টন ধান কিনেছে। জেলায় মোট ১৪টি স্থায়ী ধান কেনার কেন্দ্র (সিপিসি) রয়েছে। রয়েছে ৬টি মোবাইল সিপিসিও। গত অর্থবর্ষে সরকারি ভাবে কুইন্টাল প্রতি ধানের দাম ছিল ২৩০০ টাকা। একইসঙ্গে, স্থায়ী ধান কেনার কেন্দ্রে গিয়ে ফসল বিক্রি করলে চাষিদের কুইন্টাল প্রতি ২০ টাকা উৎসাহ ভাতাও দেওয়া হত।
প্রশাসন সূত্রের খবর, সার্বিক ভাবে ধান বিক্রির পরিমাণ ভাল থাকায় গত ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয় মোবাইল সিপিসিতে ধান কেনা। শুধুমাত্র ১৪টি সিপিসির মাধ্যমে ধান কেনা হয়েছিল। বোরো ধান মোবাইল সিপিসির মাধ্যমে কেনাই হয়নি। ফলে প্রত্যন্ত এলাকার চাষিদের কাছে এখনও রয়ে গিয়েছে ধান। নেপুরা গ্রাম পঞ্চায়েতের রাধামোহনপুর গ্রামের বাসিন্দা বার্সা মান্ডিও বলছেন, ‘‘ধান বিক্রি করার কথা থাকলেও বারণ করে দেওয়ায় সমস্যায় পড়েছি। বাইরে বিক্রি করলে তো দামই পাব না।’’ জেলা খাদ্য নিয়ামক সুজয় দাস বলেন, ‘‘বিগত কোনও বছর ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। এ বার প্রথম লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে। তাই ধান কেনা বন্ধ করা হয়েছে।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)