কর্মশালায় চলছে মাদুর তৈরি। সবংয়ের সার্তায়। নিজস্ব চিত্র
‘একহারা’, ‘দোহারা’ থেকে ‘মসলন্দ’!
কোনওটায় দড়ির বুনন, কোনওটা আবার তৈরি সুতোর সূক্ষ্ম বুননে। সরু গোলাকার চার হাত দৈর্ঘ্যের গাঁটহীন একটি কাঠি। সেই কাঠি দিয়েই মাঠের মাঝে বসে সনাতনী থেকে লুমের মাদুর বোনা হাতেকলমে শেখাচ্ছেন দক্ষ শিল্পীরা। পাশে দাঁড়িয়ে দেখছেন সকলে।
মাদুর শিল্পকে বাঁচাতে ‘পশ্চিম মেদিনীপুর সার্তা মাদুর বয়ণ শিল্পী কল্যাণ সমিতি’-র উদ্যোগে শুক্রবার থেকে সবংয়ের সার্তায় শুরু হয়েছে তিনদিনের ‘মাদুর উৎসব’। উৎসবে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পাশাপাশি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ খাদি ও গ্রামীণ শিল্প পর্ষদ।
মাদুর আর শুধু মেঝে বা বিছানায় পাতার জন্য নয়। মাদুর দিয়ে তৈরি হচ্ছে জানালার পর্দা, আসন, টেবিল ম্যাট-সহ নানা সামগ্রী। এমনকী মাদুরের জামাকাপড়ও তৈরি করেছেন প্রবীণ মাদুরশিল্পী বলাই দাস। মাদুর কেনাবেচার জন্য রয়েছে স্টল। পাশাপাশি রয়েছে কর্মশালার আয়োজনও। একইসঙ্গে চলছে ছৌ নাচ, পুতুল নাচ-সহ নানা লোক-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
সপ্তদশ শতকে দিল্লির মসনদে তখন বসেছেন মুঘল সম্রাট শাহজাহান। জানা যায়, সেই সময়ে বাংলার সবংয়ের দশগ্রাম এলাকায় এক প্রকার ‘মুঠা জাতীয়’ ঘাসের মতো কাঠি দিয়েই মাদুর বুননের শুরু। প্রথমে একহারা। তার পরে দোহারা মাদুর তৈরি করেন সবংয়ের শিল্পীরা। সবংয়ের পাশাপাশি পিংলা, নারায়ণগড়েও শুরু হয় মাদুর তৈরি। সবংয়ের সার্তায় দড়ির বদলে সুতো দিয়ে কাঠিকে আরও সূক্ষ্মভাবে দাঁত দিয়ে কেটে বুননে মসলন্দ মাদুরও তৈরি করেন শিল্পীরা।
সবংবাসীর অধিকাংশের মতেই মুঘল আমলে ‘মসনদ’ থেকে এসেছে মাদুরের ‘মসলন্দ’ নাম। ইতিমধ্যেই বহু মসলন্দ মাদুরের শিল্পীর শিল্পকর্মের কথা জেনেছেন দেশ-বিদেশের বহু লোক। আয়োজক কমিটির সদস্য শিল্পী অখিল জানা বলেন, “মাদুরের জনপ্রিয়তা রয়েছে। কিন্তু যোগ্য শিল্পী ও প্রচারের অভাবে এই শিল্প ধুঁকছে। আমরা তাই মাদুর শিল্পকে বাঁচিয়ে তুলতে এই উৎসবের আয়োজন করেছি। মাদুর দিয়ে যে এখন নানা রকমের জিনিসপত্র তৈরি হচ্ছে সেটাই আমরা এখানে তুলে ধরছি।”
২০১৬ সালে সবংয়ে শুরু হয় মাদুর উৎসব। গত বছর বিধানসভা উপ-নির্বাচন থাকায় এই উৎসব হয়নি। এ বার ফের মাদুর উৎসবের আয়োজন হল।
১৪ জন শিল্পী উৎসবে স্টল দিয়েছেন। পসরার সাধারণ মাদুরের পাশাপাশি বিকোচ্ছে মসলন্দ মাদুর থেকে লুমের তৈরি টেবিল ম্যাট, জানালার পর্দা-সহ নানা সামগ্রী। সঙ্গে চলছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আলোচনাসভা।
রয়েছে কর্মশালায় আয়োজনও। সেখানেই একটি ফ্রেম ও লুম নিয়ে শিল্পীরা মাদুর বোনা, রং করা, দাঁত দিয়ে খাঁচি কাটা শেখাচ্ছেন। কর্মশালায় মাদুর বোনা দেখছিলেন সবংয়ের ভেমুয়ার বাসিন্দা শিক্ষক সুমন দাস। তিনি বলেন, “যেহেতু সবংয়ে থাকি তাই আমি মাদুর বুনতে অল্পবিস্তর জানি। কিন্তু যে টুকু জানি না তা এখানে শিখে নিচ্ছি।” আবার চাঁদকুড়ির বাসিন্দা শিক্ষক শান্তনু অধিকারীর কথায়, “সবংয়ের মাদুর নিয়ে যে উৎসব হতে পারে সেটাই দেখতে এসেছি। সেই সঙ্গে কর্মশালার উদ্যোগ তো অসাধারণ। এ ভাবেই আমাদের মাদুর বিশ্বের দরবারে পৌঁছে যাবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy