Advertisement
০৬ মে ২০২৪

উৎসবের মুখে পুড়ে ছাই দোকান

বাগরি মার্কেটের অগ্নিকাণ্ড থেকেও যে শিক্ষা নেয়নি বাজারগুলি তা প্রমাণ হয়ে গেল আরও একবার। আগুনে ভস্মীভূত হল পাঁশকুড়ার যশোড়া কালিবাজারের একটি বড় কাপড়ের দোকান।

দাউ দাউ করে জ্বলছে দোকান। রবিবার সকালে পাঁশকুড়ার যশোড়া বাজারে। ছবি: কৌশিক সাঁতরা।

দাউ দাউ করে জ্বলছে দোকান। রবিবার সকালে পাঁশকুড়ার যশোড়া বাজারে। ছবি: কৌশিক সাঁতরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
পাঁশকুড়া শেষ আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০১৮ ০৭:৩০
Share: Save:

বাগরি মার্কেটের অগ্নিকাণ্ড থেকেও যে শিক্ষা নেয়নি বাজারগুলি তা প্রমাণ হয়ে গেল আরও একবার। আগুনে ভস্মীভূত হল পাঁশকুড়ার যশোড়া কালিবাজারের একটি বড় কাপড়ের দোকান।

রবিবার সকাল ৬টা। আর পাঁচটা দিনের মতোই পাঁশকুড়ার যশোড়া কালিবাজারের আনাজ বাজারে তখন জোর কেনাবেচা চলছে। হঠাৎই বাজারের বিদ্যুতের খুঁটিতে তাঁরা আগুনের ফুলকি দেখতে পান বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। মুহূর্তে সেই আগুন বিদ্যুতের তার বরাবর ছড়িয়ে পড়ে পাশের একটি বড় কাপড়ের দোকানে। দোকানের বাইরে কোনও অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা না থাকায় লোকজন খবর দেন দমকলে। প্রায় আধঘণ্টা পর ঘাটাল থেকে দমকলের দুটি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। পরে তমলুক থেকে পৌঁছয় আরও দুটি ইঞ্জিন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, যশোড়া বাজারের জনপ্রিয় ওই দোকানটির মালিক যশোড়া গ্রামের দিলীপ শাসমল। দোতলা দোকানটির ওপরে ছিল একটি লম্বা হল ঘর। পুজোর সময় বলে পুরো দোকানটিই ছিল পোশাকে ঠাসা। কিন্তু দোকানটির ভিতরে বা বাইরে কোনও অগ্নি নির্বাপণ যন্ত্র ছিল না বলে অভিযোগ। মুহূর্তে গোটা দোকান দাউ দাউ করে জ্বলতে শুরু করে। আগুন ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় পাশের দোকানগুলি দ্রুত খালি করে দেন দোকানদাররা। প্রায় তিন ঘণ্টায় চেষ্টায় দমকলের চারটি ইঞ্জিন আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়।

থমকে: অগ্নিকাণ্ডের জেরে ঘাঁটাল-পাঁশকুড়া সড়কে যানজট।

প্রত্যক্ষদর্শী সুব্রত অধিকারী বলেন, ‘‘দোকানটির বিদ্যুৎ সংযোগের কেবল ফেটে আগুন লাগে। আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে আমরা দোকানটির তালা ভেঙে ঢোকার চেষ্টা করি। কিন্তু পারিনি।’’

দোকানটি ঘাটাল-পাঁশকুড়া রাজ্য সড়কের পাশে হওয়ায় এ দিন ঘটনার জেরে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। রাস্তার দুই দিকেই গাড়ির লম্বা লাইন পড়ে যায়। যান চলাচল স্বাভাবিক করতে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পাঁশকুড়া থানার পুলিশ।

কলকাতার বাগরি মার্কেটে অগিনকাণ্ডের পরে কলকাতার অন্য বাজারগুলি তো বটেই জেলার বাজারগুলির অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা কেমন তা নিয়ে প্রশ্ন ছিল। সেই প্রশ্নকে আরও উসকে দিল যশোড়া কালিবাজারের এই আগুন। পাঁশকুড়া ব্লকের অন্যতম ব্যস্ত এই বাজারে প্রায় সাড়ে তিনশো স্থায়ী দোকান রয়েছে। রয়েছে মাছের আড়ত ও আনাজের বাজার। কিন্তু বাজারে নজরে পড়ল না কোথাও কোনও অগ্নিসুরক্ষা ব্যবস্থা। বাজার কমিটির সম্পাদক ফণিভূষণ মণ্ডল বলেন, ‘‘এই বাজারে হাতে গোনা কয়েকটি দোকানে আগে অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু এখন কোনও দোকানেই আর অগ্নিবিধি মানা হয় না।’’ এ দিন ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান কেশাপাট গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান দিলীপ সাঁতরা ও পাঁশকুড়া-১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মনোরঞ্জন মালিক। মনোরঞ্জনবাবু বলেন, ‘‘পঞ্চায়েতের মাধ্যমে দোকানগুলিকে ট্রেড লাইসেন্স দেওয়া হয়। কিন্তু অগ্নিসুরক্ষার বিষয়ে কোনও নজরদারি নেই। এই ঘটনার পর এ বার থেকে লাইসেন্সের সঙ্গে অগ্নিসুরক্ষা বিধির বিষয়টিও গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে।’’

ঘাটালের দমকল বিভাগের ও সি স্বপন কুমার পাত্র বলেন, ‘‘প্রাথমিক ভাবে শর্ট সার্কিট থেকেই এই অগ্নিকান্ড বলে মনে হচ্ছে।’’ ক্ষতিগ্রস্ত দোকানের মালিক দিলীপ শাসমল বলেন, ‘‘সামনে পুজো। তাই দোকানে প্রচুর পোশাক মজুত করা ছিল। প্রায় এক কোটি টাকার জিনিস ছিল। আগুনে সব শেষ হয়ে গেল।’’

যদিও শর্ট সার্কিট থেকে অগ্নিকাণ্ডের তত্ত্ব মানতে নারাজ তিনি। তাঁর দাবি, এর পিছনে অন্তর্ঘাত রয়েছে। তবে এই বিষয়ে নির্দিষ্ট কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাননি তিনি।

বিদ্যুতের কেবল ফেটে আগুন লাগার প্রশ্নে পাঁশকুড়া বিদ্যুৎ দফতরের স্টেশন ম্যানেজার এস পি সিংহ বলেন, ‘‘আমি ছুটিতে রয়েছি। তবে অভিযোগ যখন উঠেছে তখন বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE