Advertisement
E-Paper

২ মাসের মধ্যে ৩ বার ঘাটালে বন্যা পরিস্থিতি! জলে ডুবে মৃত্যু তিন জনের, জলমগ্ন বিস্তীর্ণ এলাকা

গত রবিবার বিকেল থেকে নদীর জলস্তর নতুন করে বাড়েনি। তবে ঘাটাল পুরএলাকা-সহ ঘাটাল ব্লকের সবক’টি গ্রামপঞ্চায়েত এলাকা এবং দাসপুরের বেশ কিছু এলাকায় জমা জলের উচ্চতা বাড়ছে।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০২৫ ১৮:০৮
Waterlogged In Ghatal

আবার জলমগ্ন ঘাটাল। —নিজস্ব চিত্র।

দু’মাসের মধ্যে তৃতীয় বার বন্যার কবলে পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল। বস্তুত, গত কয়েক দিনে টানা বৃষ্টিতে বিস্তীর্ণ এলাকা জলযন্ত্রণার সৃষ্টি হয়েছে। জুন মাস থেকে এই নিয়ে তৃতীয় দফা বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হল ঘাটালে। এই দফায় এ পর্যন্ত মৃত্যু হল মোট তিন জনের।

স্থানীয় সূত্রে খবর, গত রবিবার বিকেল থেকে নদীর জলস্তর নতুন করে বাড়েনি। তবে ঘাটাল পুরএলাকা-সহ ঘাটাল ব্লকের সবক’টি গ্রামপঞ্চায়েত এলাকা এবং দাসপুরের বেশ কিছু এলাকায় জমা জলের উচ্চতা বাড়ছে। তার উপর মাঝেমধ্যেই বৃষ্টি হচ্ছে। ফলে আবার বন্যা পরিস্থিতির মোকাবিলায় নেমেছে ঘাটাল মহকুমা প্রশাসন। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলিতে দুপুরের খাবার এবং ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছেন মহকুমাশাসক সুমন বিশ্বাস নিজেই। তাঁর সঙ্গে দেখা যাচ্ছে ঘাটাল ব্লকের বিডিও থেকে ব্লক প্রশাসনের আধিকারিকদের। বন্যা কবলিত এলাকায় খিচুড়ি বিলি করছেন প্রশাসনের কর্তারা।

ঘাটালের পুরনো কাঁসাই নদীর কলমিজোর, শিলাবতী নদীর বাঁকা, রূপনারায়ণ নদীর বান্দার, রানিচক এবং গোপীগঞ্জ পয়েন্টে প্রতিনিয়ত জলস্তরের পরিসংখ্যান নেওয়া হচ্ছে। এসডিও সুমন বলেন, ‘‘কেঠিয়া ব্রিজের বাঁকা পয়েন্টে জলস্তর বাড়ছে। সেই জল নামবে ঘাটাল শহরের দিকে। অতিবৃষ্টির কারণে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে ঘাটাল মহকুমার চন্দ্রকোনা, দাসপুর, ঘাটাল ব্লক এবং পুরসভা এলাকা। সরকারি ও বেসরকারি নৌকা নেমেছে এলাকায়। মোট ১২টি ত্রাণশিবিরে ৫০০-র বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন।’’ তিনি আরও জানান, ঘাটাল পুরসভার জলমগ্ন এলাকাগুলিতে রান্না করা খাবার পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। অন্তত ১০ হাজার মানুষকে দুপুরের খাবার দেওয়া হয়েছে। তবে জলস্তর বৃদ্ধিই এখন চিন্তার কারণ।

এই পরিস্থিতিতে জলমগ্ন এলাকার বাসিন্দাদের জানানো হচ্ছে, প্রয়োজনে তাঁরা যেন আশ্রয়শিবিরে যান। গবাদি পশুদেরও চিকিৎসা এবং খাদ্যের ব্যবস্থা করেছে প্রশাসন। নৌকা অথবা পুরসভার ট্যাঙ্কারে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে পানীয় জল।

অন্য দিকে, ঘাটলে বাড়ছে সর্প-আতঙ্কও। জমা জলে বিষাক্ত সাপ ঘুরে বেড়াচ্ছে। সাপে কামড়ালে সময় নষ্ট না-করে তড়িঘড়ি রোগীদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। প্রসূতি এবং গুরুতর অসুস্থদের হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজনে প্রশাসন উদ্ধারকারী দল পাঠাবে।

তবে জলমগ্ন ঘাটালে গত কয়েক দিন ধরে কিছু করুণ দৃশ্য দেখা গিয়েছে। যেমন ঘাটাল পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা গোপাল শাসমল (৮২) মারা যান বাড়িতে। কিন্তু কী ভাবে দাহকার্য সম্পন্ন হবে তা নিয়ে চিন্তায় পড়ে যান পরিজনেরা। কারণ, গোটা এলাকা জলের তলায়। শেষ পর্যন্ত ডিঙিতে চড়িয়ে দেহ নিয়ে যাওয়া হয় ঘাটাল পুরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের আড়গোড় এলাকায়। সেখানে যে শ্মশানটি রয়েছে, তা বন্যার কথা মাথায় রেখে উঁচু জায়গায় তৈরি করা হয়েছে। শ্মশানের চতুর্দিকে জল থাকলেও শ্মশানে জল ওঠেনি।

প্রশাসন সূত্রে পাওয়া খবর অনুযায়ী, টানা বৃষ্টি এবং ডিভিসি-সহ বিভিন্ন জলাধার থেকে ছাড়া জলে গত শনিবার থেকে প্লাবিত ঘাটাল মহকুমার ৮টি অঞ্চল (গ্রাম পঞ্চায়েত) এবং ১২টি ওয়ার্ড। রবিবার পর্যন্ত এক শিশু-সহ ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার সকালে স্কুলে যাওয়ার আগে স্নান করতে গিয়ে তলিয়ে যায় ঘাটাল ব্লকের দেওয়ানচক-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের কিশমত কোতুলপুর গ্রামের ৬ বছরের মেয়ে সুলতানা খাতুনের। শনিবার বিকেলেই মৃত্যু হয় ঘাটাল ব্লকের অজবনগর-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দা ৪০ বছরের নিমাই ডগরা ওরফে শিবার। দাসপুর থানার রাজনগর পশ্চিমপাড়া এলাকার বাসিন্দা ঝড়ু জানা বাজারে যাওয়ার পথে বন্যার জলে তলিয়ে যান। রবিবার বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী ৫৯ বছরের ঝড়ুর দেহ উদ্ধার করেছে। দেহ পাঠানো হয়েছে ময়নাতদন্তের জন্য। এর আগে জুন মাসের শেষে ঘাটালে বন্যায় প্রাণ হারিয়েছেন দু’জন।

Flood Situation Flood Situation In Bengal ghatal Waterlogged Deaths
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy