অস্তিত্ব রক্ষায় মানুষের সঙ্গে লড়াই ছিলই। এ বার কি তবে ‘গৃহযুদ্ধ’— পরপর হাতির মৃত্যুর ঘটনায় বন দফতরের কর্তাদের মাথায় এমন চিন্তাই ঘুরপাক খাচ্ছে। গত দশ মাসে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় ১০টি হাতির মৃত্যু হয়েছে। বন কর্তারা মনে করছেন, শুধু তড়িদাহত বা অসুস্থ হয়ে নয়, অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে নিজেদের দলে লড়াইও হাতির মৃত্যুর অন্যতম কারণ। হাতির দলকে দলমায় না পাঠানো গেলে এর থেকে নিষ্কৃতি মিলবে না বলেই বন দফতরের মত।
কেন এমন আশঙ্কা? বন দফতরের মতে, জেলার জঙ্গল এলাকায় ২৫-৩০টি হাতি একসঙ্গে থাকতে পারে। সেখানে গত একবছর জেলায় প্রায় ৫০টি হাতি একাধিক দলে ভাগ হয়ে ঘুরছে। এতদিন ধান খেত, সব্জি খেতে নেমে সাবাড় করছিল দাঁতালের দল। এখন মাঠ ফাঁকা হয়ে যাওয়ায় সমস্যা বেড়েছে।
একটি পূর্ণ বয়স্ক হাতির দিনে ৩ কুইন্ট্যাল খাবার প্রয়োজন। এখন মাঠে ধান না থাকায় ওই পরিমাণ খাবার মিলছে না। আধপেটা খেয়ে থাকতে হচ্ছে। হঠাৎ কোথাও সামান্য খাবার দেখলে দলের সব হাতি ছুটে যাচ্ছে। তখনই লড়াই শুরু হচ্ছে।
দিনে দিনে এই লড়াই আরও বাড়বে বলেই আশঙ্কা বন বিভাগের মেদিনীপুর ডিভিশনের ডিএফও রবীন্দ্রনাথ সাহার। তিনি বলেন, “এটা তো দুশ্চিন্তার। মাঠ থেকে ধান ওঠার পরেই হাতির দলে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়ে গিয়েছে। যতদিন যাবে ততই অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই জোরদার হবে। তখন কী ভাবে হাতির মৃত্যু ঠেকানো যাবে বুঝতে পারছি না।”
গত ১১ অগস্ট লালগড়ের কাছে একটি বাচ্চা হাতির মৃত্যু ঘটনায় উদ্বেগ আরও বেড়েছে। তদন্তে নেমে বন দফতর জানতে পারে, জলাধারে বাচ্চা হাতিটির মৃত্যু হয়। জলাধারে জল কম ছিল। তৃষ্ণা নিবারণের জন্য বড়দের সঙ্গে বাচ্চটিও জলাধারে নামে। বড়রা ভাগ দিতে রাজি হয়নি। সব জল শুষে পান করে নেয়। বাচ্চাটি একটু জলের আশায় কাদা ভেঙে এগিয়ে যায় জলাধারের মাঝে। জল মেলেনি। কাদা ভেঙে ডাঙাতেও উঠতে পারেনি। তাতেই মৃত্যু হয় হাতিটির।
বন দফতরের এক কর্তার কথায়, ‘‘সাধারণভাবে দলের বিপদগ্রস্ত সদস্যকে ফেলে হাতির দল এলাকা ছাড়ে না। সেখানে এমন ঘটনা সত্যিই বিরল।’’ রবীন্দ্রনাথবাবুর কথায়, “মৃত হাতির শরীরে বিভিন্ন ক্ষত থেকে স্পষ্ট নিজেদের মধ্যে লড়াই চলছে। লালগড়ে মৃত বাচ্চা হাতিটি তো অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ের চূড়ান্ত উদাহরণ।” এই লড়াই থেকে হাতিকে বাঁচানোই চ্যালেঞ্জ বন দফতরের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy