Advertisement
E-Paper

৬০ বছরেও বদলায়নি জঞ্জাল-চিত্র

পুরসভার বয়স ৬০ বছর অতিক্রম করলেও পরিষেবা তিমিরেই। ৩৫টি ওয়ার্ড বিশিষ্ট খড়্গপুর পুরসভা এলাকার আবর্জনা ফেলার কোনও ধাপা নেই। বিভিন্ন ওয়ার্ডে রাস্তার ধারে স্তূপীকৃত হয়ে পড়ে থাকে জঞ্জাল। নিয়মিত সাফাই না হওয়ায় দুর্গন্ধে পথ চলাই কষ্টদায়ক। শহরের বাসিন্দাদের অভিযোগ, আগের কংগ্রেস পুরবোর্ড শহরের আবর্জনা থেকে ছড়ানো দূষণ সমস্যা মোকাবিলায় আইআইটি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা শুরু করে।

দেবমাল্য বাগচী

শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০১:১২
রাস্তার ধারে স্তূপীকৃত জঞ্জাল থেকে ছড়াচ্ছে দূষণ। খড়্গপুরের পাঁচবেড়িয়ায়। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।

রাস্তার ধারে স্তূপীকৃত জঞ্জাল থেকে ছড়াচ্ছে দূষণ। খড়্গপুরের পাঁচবেড়িয়ায়। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।

পুরসভার বয়স ৬০ বছর অতিক্রম করলেও পরিষেবা তিমিরেই। ৩৫টি ওয়ার্ড বিশিষ্ট খড়্গপুর পুরসভা এলাকার আবর্জনা ফেলার কোনও ধাপা নেই। বিভিন্ন ওয়ার্ডে রাস্তার ধারে স্তূপীকৃত হয়ে পড়ে থাকে জঞ্জাল। নিয়মিত সাফাই না হওয়ায় দুর্গন্ধে পথ চলাই কষ্টদায়ক।
শহরের বাসিন্দাদের অভিযোগ, আগের কংগ্রেস পুরবোর্ড শহরের আবর্জনা থেকে ছড়ানো দূষণ সমস্যা মোকাবিলায় আইআইটি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা শুরু করে। মাস তিনেক আগেও পুরসভায় ক্ষমতায় এসেছে তৃণমূল। বর্তমান পুরবোর্ডও আবর্জনা ব্যবস্থাপনা নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করেছে।
১৯৫৪ সালে গঠিত হয় খড়্গপুর পুরসভা। ২০১০ সালে শহরের রেল এলাকাও পুরসভার অন্তর্ভুক্ত হয়। শহরের ওয়ার্ড সংখ্যাও ৩০ থেকে বেড়ে ৩৫ হয়। ক্রমে আড়়ে বহরে বেড়েছে শহর। শুধু জেলার নানা প্রান্তের নয়, বিভিন্ন রাজ্যের বহু লোকও খড়্গপুর শহরে বসবাস করেন। পুর এলাকার জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে আবর্জনার পরিমাণও। শহরের বাসিন্দাদের অভিযোগ, শহরের জনসংখ্যা বাড়লেও সেই অনুযায়ী পরিকাঠামোর উন্নতি হয়নি। কাউন্সিলরদের উদাসীনতায় সমস্যা আরও গ্রাস করেছে রেলশহরে। এক সময়ে শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে রাস্তার ধারে ফাঁকা জায়গায় ভ্যাট তৈরি করা হয়েছিল। শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডের আবর্জনা একটি নির্দিষ্ট স্থানে ফেলার জন্য বাম পরিচালিত পুরসভা গোকুলপুরের কাছে একটি জমিও কেনে। সেই জমিতেই আবর্জনা ফেলা হত। ফলে গোকুলপুর এলাকায় শকুন, চিলের উপদ্রব বাড়ে। তার জেরে কলাইকুণ্ডার বায়ুসেনার বিমান চলাচল ব্যাহত হওয়ায় অভিযোগ ওঠে। তার জেরে ওই এলাকায় আবর্জনা ফেলার কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়।

তারপর থেকেই শহরের আবর্জনা ফেলার কোনও জায়গা আর গড়ে তোলা যায়নি। আবর্জনা ফেলার নির্দিষ্ট জায়গা না থাকায় শহরের অধিকাংশ ভ্যাটেও জমে থাকে আবর্জনা। সমস্যা বেশি পুর এলাকার ৩, ৪, ৫, ৬, ৯, ১০, ১৪, ১৭, ১৯, ২৪, ২৯, ৩৪, ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডে।

রেল এলাকার আটটি ওয়ার্ডেও আবর্জনা নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে গোলমালের ঘটনাও ঘটেছে। দিন কয়েক আগেই ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের আবর্জনা ২০ নম্বর ওয়ার্ডের একটি এলাকায় ফেলতে গেলে বাধা দেয় ২০ নম্বর ওয়ার্ডের একাংশ বাসিন্দা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হস্তক্ষেপ করতে হয় পুরপ্রধানকে। ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম কাউন্সিলর নাফিসা খাতুন বলেন, “আমাদের ঘিঞ্জি এলাকায় আবর্জনা বেশি। স্তূপীকৃত আবর্জনা থেকে ছড়াচ্ছে দূষণও। তাই ২০ নম্বর ওয়ার্ডের একটি আবর্জনা ফেলার জায়গায় আমাদের ওয়ার্ডের আবর্জনা ফেলা হয়। এখন তা নিয়ে অশান্তি হলে কোথায় আবর্জনা ফেলা হবে? শহরে একটা আবর্জনা ফেলার নির্দিষ্ট জায়গা হওয়া প্রয়োজন।”

৪ নম্বর ওয়ার্ডের শেখ কৌসর, ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের রাজেশ গুপ্ত বলেন, “কুকুর, গরু রাস্তার ধারে স্তূপীকৃত আবর্জনা ছড়িয়ে আরও নোংরা করে। বর্ষাকালে সাফাইকর্মীরা নিয়মিত না আসায় দুর্ভোগ চরমে পৌঁছয়।’’

শহরের আবর্জনা ব্যবস্থাপনা নিয়ে ২০১৫ সালের গোড়ায় খড়্গপুর আইআইটি-র ‘সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি আন্ত্রেপ্রেনিওর পার্ক’ (স্টেপ)-এর সঙ্গে আলোচনা শুরু করে কংগ্রেস পরিচালিত পুরসভা। ঠিক হয়, শহরের আবর্জনা কাজে লাগিয়ে বায়ো গ্যাস, সার তৈরি করবে আইআইটি। প্রকল্প থেকে প্রাপ্ত লাভের একটা অংশ পুরসভাকেও দেওয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। সেই মর্মে একটি মউও সাক্ষরিত হয়। তবে পুরভোট চলে আসায় কাজ আর বিশেষ এগোয়নি। শহরে প্রাক্তন পুরপ্রধান রবিশঙ্কর পাণ্ডে বলেন, “আবর্জনা যে কোনও শহরের একটা বড় সমস্যা। এ জন্য আবর্জনা পুনর্ব্যবহারযোগ্য করে তুলতে হবে। আমরা তাই আইআইটি-র সঙ্গে মউ সাক্ষর করেছিলাম। সেই প্রকল্প পুরসভা নিলে আবর্জনা সমস্যার সমাধান হবে বলে মনে হয়।”

বর্তমান তৃণমূল পরিচালিত পুর-কর্তৃপক্ষ খড়্গপুরের মহকুমাশাসকের কাছে শহরের অদূরে গ্রামীণ এলাকা গোপালির কাছে আবর্জনা ফেলার জন্য জমি চেয়ে চিঠি দিয়েছেন। খড়্গপুরের পুরপ্রধান প্রদীপ সরকারের কথায়, “আমরা শহরের আবর্জনা সমস্যা নিয়ে চিন্তিত। খড়্গপুরে একটি কেন্দ্রীয় ধাপা নেই। এটা দীর্ঘদিনের সমস্যা। প্রয়োজন বুঝে আমি মহকুমাশাসকের কাছে আবর্জনা ফেলার জন্য জমি চেয়েছি। জমি পেলেই সমস্যার সমাধান হবে।’’

তিনি আরও বলেন, ‘‘প্রতিটি ওয়ার্ডে নির্দিষ্ট সাফাইকর্মী ছাড়াও একশো দিনের কাজের জন্য শ্রমিকও দেওয়া হয়েছে । তারপরেও ওয়ার্ডগুলিতে সাফাই হচ্ছে না কেন খোঁজ নিয়ে দেখব।” বিগত পুরবোর্ড আইআইটির সঙ্গে যে মউ সাক্ষর করেছিল সেই কাজ স্মপূর্ণ করা হচ্ছে না কেন? পুরপ্রধানের জবাব, “আমি বিষয়টি জানিনা। খোঁজ নিয়ে দেখব।” কেন্দ্রীয় ধাপা তৈরির জন্য পুরসভার জমি চাওয়ার বিষয়ে খড়্গপুরের মহকুমাশাসক সঞ্জয় ভট্টাচার্য বলেন, “গোপালিতে একটা জমি দেখেছি। তবে সেই জমির দলিল খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সব নথি পরীক্ষার কাজ শেষ হলে পুরসভাকে জমি দেওয়া হবে।”

Kharagpur Garbage municipality
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy