Advertisement
E-Paper

ডাক্তারের ওষুধ ফেল

রাতে শান্তির ঘুম তো দূর অস্ত। প্রার্থী হিসেবে নাম ঘোষণার পর নাওয়া খাওয়াও ঠিকমতো হয়নি সবংয়ের ডাক্তারবাবুর।

হতাশ মানস। নিজস্ব চিত্র

হতাশ মানস। নিজস্ব চিত্র

বরুণ দে

শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০১৯ ০৫:১৯
Share
Save

গণনা চলছে। ফল দেখে ঘোর লাগার জোগাড়। এগরার তৃণমূল বিধায়ক সমরেশ দাসকে ফোন করলেন মানস ভুঁইয়া। তাঁকে বলতে শোনা গেল, ‘‘আপনার এলাকা তো আমাকে ডুবিয়ে দিচ্ছে!’’

মিনিট পাঁচেকের ব্যবধান। ফের মোবাইল হাতে নিলেন সবংয়ে ভূমিপুত্র। এ বার ফোন করলেন কেশিয়াড়ির দলীয় বিধায়ক পরেশ মুর্মুকে। তখন কেশিয়াড়ি থেকে ১৫ হাজার ব্যবধানে পিছিয়ে মানস। ফোন করে পরেশকে বললেন, ‘‘তোমার এলাকা তো আমাকে শুইয়ে দিচ্ছে!’’ ফোনের অপর প্রান্ত থেকে কী জবাব এল বোঝা না গেলেও মানসকে বলতে শোনা গেল, ‘‘তা হলে আর কী। খেয়েদেয়ে আপনিও ঘুমিয়ে পড়ুন। আমিও ঘুমিয়ে পড়ি।’’

রাতে শান্তির ঘুম তো দূর অস্ত। প্রার্থী হিসেবে নাম ঘোষণার পর নাওয়া খাওয়াও ঠিকমতো হয়নি সবংয়ের ডাক্তারবাবুর। ছুটে বেড়িয়েছেন লোকসভা কেন্দ্রের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্ত। কাঁধে স্নেহের হাত রেখে বুকে জড়িয়েছেন, দলের যুযুধান নেতাদের। অথচ শেষরক্ষা হল না। মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে জয়ী হলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। ৮৭,১৬৮ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হলেন তৃণমূলের মানস। তাঁর প্রাপ্ত ভোট ৫,৯৪,৭৬৭। সিপিআই প্রার্থী বিপ্লব ভট্টের ঝুলিতে এসেছে ৬২,১৬৬ ভোট, কংগ্রেস প্রার্থী শম্ভুনাথ চট্টোপাধ্যায়ের ঝুলিতে এসেছে ২০,৭৫৩ ভোট। কেন পারলেন না মানস? এক তৃণমূল নেতার মন্তব্য, ‘‘ডাক্তার রোগ বুঝতে পেরেছিলেন। ওষুধও দিয়েছিলেন। কিন্তু গণনাকেন্দ্রে বসে তাঁকে দেখতে হল ওষুধ কাজ করেনি।’’

মেদিনীপুর লোকসভার অন্তর্গত সাতটি বিধানসভা এলাকার মধ্যে ছ’টিতেই পিছিয়ে থেকেছেন তৃণমূল প্রার্থী। এমনকি, পূর্ব মেদিনীপুরের এগরাতেও। যা বিস্মিত করেছে মানসকে। কেশিয়াড়ি থেকে দিলীপ ‘লিড’ পেয়েছেন ১০,৭৬১ ভোটের। নারায়ণগড়ে ৮,৭৫০ ভোটের। এগরায় থেকে ৮,৫৮৭ ভোটের। দাঁতন থেকে ৬,৬৫১ ভোটের। মেদিনীপুর থেকে ১৬,৫২৩ ভোটের। বিজেপি প্রার্থী সব চেয়ে বেশি ‘লিড’ পেয়েছেন খড়্গপুর সদর থেকে, ৪৫,১৩২ ভোটের। দিলীপ খড়্গপুর সদরের বিধায়কও। একমাত্র খড়্গপুর থেকে ‘লিড’ পাননি দিলীপ। এখানে তিনি ৯,৩৮৯ ভোটে পিছিয়ে রয়েছেন। খড়্গপুরের বিধায়ক তৃণমূলের দীনেন রায়।

দিলীপ এবং মানস জেতার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসে ছিলেন দু’জনেই। পরিশ্রমও কম করেননি কেউ। মানসকে প্রার্থী করে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, মানসদা রাজ্যসভার সাংসদ। কিন্তু মানসদার মতো লড়াকু মানুষকে লোকসভায় প্রয়োজন। প্রচারে গিয়ে দিলীপ বলেছিলেন, ‘‘মানসবাবু তো সাংসদ আছেন। আমাকে জেতালে ভূমিপুত্র হিসেবে আমিও সংসদে যাব। মেদিনীপুরের উন্নয়ন হবে।’’ দিনের শেষে চওড়া হাসি দিলীপের মুখে। গণনাকেন্দ্রের বাইরে দিলীপকে ঘিরে স্লোগান উঠছে, ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান। এক কর্মীর মোবাইলে গান বাজছে, ‘রং দে তু মোহে গেরুয়া...।’ দিলীপ বললেন, ‘‘মেদিনীপুরে দাঁড়ানোর আগে আমাকে অনেকে বলেছিলেন, ওখানে কেন দাঁড়াচ্ছেন। ওখানে মানসবাবু দাঁড়াচ্ছেন। উনি অনেক ম্যাজিক জানেন। আপনাকে হারিয়ে দেবেন। আমি তাঁদের বলেছিলাম, আমিও ম্যাজিক কম জানি না!’’

এই পরাজয়ের ব্যাখ্যা কী? মানস বলেন, ‘‘বামেদের ভোট বিজেপিতে গিয়েছে। এটাই পরাজয়ের মূল কারণ।’’ দলের কোনও দুর্বলতা নেই? এ বার তৃণমূল প্রার্থীর জবাব, ‘‘নেত্রী যে নির্দেশ দেন তা পালন করার দায়িত্ব জেলা এবং ব্লকের। কোথাও সমন্বয়ের অভাব ছিল কি না দেখতে হবে। আমরা আরও বেশি করে মানুষের কাছে পৌঁছতে পারলাম না, রাজ্যের প্রকল্পগুলোর সুবিধের কথা জানাতে পারলাম না তা দেখতে হবে। নিশ্চিতভাবে আমাদের আত্মবিশ্লেষণ করতে হবে।’’

ভোট প্রচারে ডাক্তারবাবু সঙ্গে রাখতেন মাথা ব্যথার বাম। বামে আর আরাম মিলল কই!

Election Results 2019 Lok Sabha Election 2019 লোকসভা ভোট ২০১৯ Manas Bhunia TMC BJP Dilip Ghosh

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}