E-Paper

ভিন্ রাজ্যে হেনস্থা, শঙ্কার মেঘ স্বর্ণশিল্পে

কোথাও দু-চার মাস কিংবা তারও আগে নথি জমা নেওয়ার কাজ শুরু হয়েছিল। আবার কোথাও কোথাও সেই কাজ সবে শুরু হয়েছে।

অভিজিৎ চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০২৫ ০৬:২৫
—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

বাঙালিদের ‘বাংলাদেশি’ বলে দাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে দেশের নানা প্রান্তে। পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে বাংলাদেশেও। এই আবহে চিন্তা বাড়ছে বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে থাকা ঘাটাল, দাসপুরের পরিযায়ী শ্রমিকদের মধ্যে। তাঁদের অনেকেই বলছেন, জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে নথি জমা দিতে কোনও আপত্তি নেই। তবে বাঙালি বলে অহেতুক হেনস্থা করা বন্ধ হোক।

দিল্লি, মুম্বই, গুজরাত, ইন্দোর-সহ দেশের নানা প্রান্তে যাবতীয় তথ্যপঞ্জী আদায়ে প্রশাসনের তৎপরতা বেড়েছে সম্প্রতি। জানা গিয়েছে, নথি আদায়ের কাজ সব রাজ্যে যে একযোগে চলছে এমনটা নয়। কোথাও দু-চার মাস কিংবা তারও আগে নথি জমা নেওয়ার কাজ শুরু হয়েছিল। আবার কোথাও কোথাও সেই কাজ সবে শুরু হয়েছে। অনেক জায়গায় স্থানীয় প্রশাসন নির্দিষ্ট ছাপানো ফর্ম দিচ্ছে। তা পূরণ করে জমা দিতে হচ্ছে। কোনও কোনও রাজ্যে আবার পঞ্চায়েত কিংবা পুরসভার প্রতিনিধিদের মাধ্যমে শংসাপত্র-সহ নানা তথ্য নথিভুক্ত করা হচ্ছে।

ইতিমধ্যেই রাজস্থান ও ছত্তীসগঢ়ে বাঙালি স্বর্ণকারদের হেনস্থার অভিযোগ সামনে এসেছে। পেশায় স্বর্ণকার ঘাটালের যুবক মানিক মণ্ডল কর্মসূত্রে রাজস্থানে থাকেন। তাঁর অভিযোগ, ‘‘নথির নাম করে থানায় ডেকে হয়রানি করা হচ্ছে। আমরা দেশের নাগরিক কি না প্রমাণ করতে হচ্ছে। ভিডিয়ো কলে বাড়ির ছবি দেখাতে হচ্ছে।’’ দাসপুরের চাঁইপাটের যুবক গণেশ মাইতি বলছিলেন, “দশ বছর ধরে সুরাতে কাজ করছি। এতদিন কাগজপত্র নিয়ে কিছুই ঝামেলা হয়নি। কেউ চাইত না। এখন তো আমরা কোথাকার বাসিন্দা, কেন এখানে এসেছি, কতদিন ধরে রয়েছি-সহ নানা তথ্য জমা দিতে হয়েছে। এটা বাড়তি বিড়ম্বনা তো বটেই।”

আশির দশকের গোড়া থেকে ঘাটাল, দাসপুর-সহ পশ্চিম মেদিনীপুরের নানা জায়গা থেকে সোনার কারিগরেরা ভিন্ রাজ্যে যাতায়াত বাড়ান। শুরুতে দিল্লি, মুম্বই-সহ বাছাই বাছাই কয়েকটি শহরে যেতেন তাঁরা। নয়ের দশকের শুরু থেকে কাজের খোঁজে দেশের অন্যান্য শহরেও যান এই জেলার সোনার কারিগরেরা। দিল্লি, মহারাষ্ট্র ছাড়াও গুজরাত, মধ্যপ্রদেশ, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলঙ্গানা, ওড়িশা, হরিয়ানা, অসম-সহ নানা রাজ্যে ছড়িয়ে রয়েছেন পশ্চিম মেদিনীপুরের সোনার কারিগরেরা। এতদিন পরে নিজেদের ভারতীয় প্রমাণ করতে হবে ভেবে তাঁদের অনেকেই অবাক। নথি আদায়ের ঘটনার তাল কাটছে তাঁদের কাজেও।

ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান জুয়েলারি আর্টিস্ট অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তা প্রশান্ত বসু ও সুশীল মণ্ডল বলছিলেন, “দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে স্বর্ণশিল্পের সঙ্গে যুক্ত সকলের নথিপত্র জমা নেওয়া যেতেই পারে। স্বর্ণশিল্পীদের সংগঠনগুলি স্থানীয় থানা কিংবা প্রশাসনকে এই কাজে সাহায্যও করছে। কিন্তু তার জন্য কোনও কোনও রাজ্যে আটকে রাখা ও হয়রানির যে সব ঘটনা ঘটছে, সেটা কাম্য নয়।” সুরাত বাঙালি জুয়েলারি ম্যানুফ্যাকচারার ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক বাসুদেব অধিকারী জানান, বাঙালি ও বাংলাদেশি নিয়ে দু’মাস আগে একটা ঝামেলা হয়েছিল। সংগঠনের হস্তক্ষপে সমস্যা অনেকটা মিটেছে। কর্মচারীদের নথিপত্র থানায় জমা দেওয়া হয়েছে। এখনও সেই কাজ চলছে। মধ্যপ্রদেশের ইন্দোর বাঙালি স্বর্ণকার লোকসেবা সমিতির সভাপতি কমলেশ বেরার কথায়, “পুলিশ-প্রশাসনের নির্দেশে স্বর্ণশিল্পীদের আধার, প্যান-সহ যাবতীয় তথ্য পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়-সহ স্থানীয় থানাগুলিতে জমা দেওয়া হয়েছে।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

ghatal Gold Jewellery

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy