এই পুকুরের জলই ব্যবহার করেন চন্দ্রকোনার বেলাদণ্ড গ্রামের বাসিন্দারা (বাঁ দিকে)। আর নলকূপের থেকে পাওয়া যায় এমন হলুদ জল। পানীয়র জন্য তাই ভরসা (ডান দিকে)। কৌশিক সাঁতরার তোলা ছবি।
আন্ত্রিকের প্রকোপে শতাধিক মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়লেন। গত শনিবার থেকে চন্দ্রকোনা-১ ব্লকের বেলাদণ্ড গ্রামের বাসিন্দারা একে একে অসুস্থ হয়ে পড়েন। সোমবার পর্যন্ত গ্রামের মোট ৬৫টি পরিবারের ১০৩ জন আন্ত্রিকে আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে ১২ জন শিশুও রয়েছে। অসুস্থরা স্থানীয় ক্ষীরপাই ও বীরসিংহ গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি। অসুস্থদের দু’জন ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। জল থেকেই সংক্রমণ ছড়িয়েছে বলে প্রাথমিক ভাবে অনুমান।
রবিবার ভোরেই এলাকায় মেডিক্যাল টিম পৌঁছে যায়। জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা বলেন, “জল থেকেই দূষণ ছড়িয়েছে। পুকুরের জল ব্যবহার না করার জন্য মাইকে প্রচার চালানো হচ্ছে। রবিবার সকাল থেকেই এলাকায় মেডিক্যাল ক্যাম্প খোলা হয়েছে। এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে।”
স্বাস্থ্য দফতর ও স্থানীয় সূত্রে খবর, এলাকায় সজলধারা প্রকল্পে পানীয় জলের সংযোগ রয়েছে। কিন্তু বেশ কয়েকমাস ধরেই ওই পরিষেবা বন্ধ। বাসিন্দারা বাধ্য হয়ে গ্রামের নলকূপের জলই পানীয় হিসেবে ব্যবহার করছিলেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘদিন গ্রামের নলকূপগুলির সংস্কার হয়নি। নলকূপের জলে লোহার পরিমাণ বেশি। এমনকী মাঝেমধ্যে নলকূপ থেকে হাল্কা হলুদ রঙের জলও ওঠে বলে অভিযোগ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসকের কথায়, “নলকূপের জল খেয়েই ডায়েরিয়া ছড়িয়েছে। নলকূপগুলি সংস্কার না করা হলে সমস্যা বাড়বে।”
বেলাদণ্ড গ্রামের শালপাড়া, মণ্ডলপাড়া, গায়েন ও খাঁ পাড়ায় প্রায় দেড়শো পরিবার বাস করেন। গ্রামে একাধিক পুকুর রয়েছে। যদিও গ্রামে কোনও নিকাশি ব্যবস্থা না থাকায় নোংরা জল-সহ আবর্জনা পুকুরে গিয়েই পড়ে। স্নান করা-সহ দৈনন্দিন কাজে ওই সব পুকুরের জলই ব্যবহার করেন গ্রামের অধিকাংশ বাসিন্দা। পুকুরের জল থেকেও সংক্রমণ ছড়াতে পারে বলে অনুমান। চন্দ্রকোনা-১ ব্লকের বিডিও সুরজিৎ ভড় বলেন, “গ্রামে কোনও নিকাশি নালা নেই। একশো দিনের প্রকল্পে গ্রামের নিকাশি নালাগুলি সংস্কারের কাজ শুরু হবে।”
বিডিও আরও বলেন, “বিদ্যুতের বিল না দেওয়ায় সজলধারা প্রকল্পে পানীয় জল সরবরাহ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ফেটে গিয়েছে জলের পাইপ-ও।’’ তিনি বলেন, ‘‘দ্রুত সজলধারা প্রকল্প চালু করা হবে। পুকুরের জল ব্যবহার কমাতে গ্রামে শিবিরও করা হচ্ছে।” আপাতত জলের সমস্যা মেটাতে গ্রামে পানীয় জলের পাউচ বিলি করা হয়েছে। এলাকায় ছড়ানো হয় ব্লিচিং পাউডারও।