Advertisement
E-Paper

জিএসটি কাঁটা বিঁধেছে সরস্বতীকেও

হলদিয়ার দুর্গাচকের ‘রামকিঙ্কর বেইজ মৃৎশিল্পী’ কর্মশালায় এবার ৫০০-র বেশি সরস্বতী তৈরি হচ্ছে। এ ছাড়া মাখনবাবুর বাজার, মহিষাদলের দেউলপোতাতেও বেশ কিছু সরস্বতী তৈরি হচ্ছে।

আরিফ ইকবাল খান ও শান্তনু বেরা

শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০১৮ ০১:২১
কাঁথির পটুয়াপাড়ায় ব্যস্ত শিল্পী। নিজস্ব চিত্র

কাঁথির পটুয়াপাড়ায় ব্যস্ত শিল্পী। নিজস্ব চিত্র

জিএসটি যে বড় বালাই, তা ভালই টের পাচ্ছেন কৃষ্ণপ্রসাদ, সমীরণ, ঝন্টুর মতো মৃৎশিল্পীরা।

প্রায় ৭ মাস হল এই ব্যবস্থা চালু হলেও তা নিয়ে বিশেষ মাথা ঘামাননি তাঁরা। কিন্তু এ বার সরস্বতী প্রতিমা গড়তে গিয়ে তার আঁচ যে ভাবে গায়ে লাগছে তাতে কপালে ভাঁজ পড়েছে মৃৎশিল্পীদের। জিএসটি কাঁটায় কার্যত বিদ্ধ পূর্ব মেদিনীপুরের হলদিয়া, কাঁথি মহকুমার পটুয়াপাড়া।

হলদিয়ার দুর্গাচকের ‘রামকিঙ্কর বেইজ মৃৎশিল্পী’ কর্মশালায় এবার ৫০০-র বেশি সরস্বতী তৈরি হচ্ছে। এ ছাড়া মাখনবাবুর বাজার, মহিষাদলের দেউলপোতাতেও বেশ কিছু সরস্বতী তৈরি হচ্ছে। কিন্তু এত ঠাকুর তৈরি হলেও তা বিক্রি করে লাভের কড়ি ঘরে উঠবে কি না সেই আশঙ্কা চেপে বসেছে মৃৎশিল্পীদের মনে। হলদিয়া, কাঁথির মৃৎশিল্পীদের অভিযোগ, ঠাকুর তৈরি ও তার সাজসজ্জার যে কাঁচামাল, সবকিছুর উপরেই জিএসটি-র খাঁড়া নেমে আসায় দাম বেড়়েছে। ফলে ঠাকুর তৈরির খরচ অনেকটাই বেড়েছে। অথচ যাঁরা ঠাকুর আগে থেকে বায়না করেছেন তাঁরা অতিরিক্ত দাম দিতে রাজি নন। তার উপর পাছে বিক্রিতে ভাটা পড়ে তাই তাঁরাও ঠাকুরের দাম বেশি বাড়াতে পারছেন না। ফলে দুইয়ের সাঁড়াশি চাপে লাভের কড়ি দূর, খরচ উঠবে কি না তা নিয়েই সংশয়ে প্রতিমাশিল্পীরা।

শিল্পী কৃষ্ণপ্রসাদ পাল বলেন, ‘‘জিএসটির জন্য মৃৎশিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব কিছুর দাম বেড়েছে। কাপড়ের দাম মিটারে বেড়েছে ৩০ টাকা। রঙের দাম লিটারে ৩০০ থেকে বেড়ে হয়েছে ৫০০ টাকা। খড়ের দাম কাহনে বেড়েছে ২০০ টাকা। হাজার টাকার খড় কিনতে হয়েছে ১২০০ টাকায়। সুতো থেকে ঠাকুরের কৃত্রিম অলঙ্কার সবকিছুরই অনেক দাম বেড়েছে।’’ তাঁর আক্ষেপ, তবু তাঁরা প্রতিমার দাম বাড়াতে পারছেন না। কারণ গত বছর খদ্দেররা যে দামে কিনেছেন তার চেয়ে বেশি হলেই অন্য জায়গা থেকে কেনার হুমকি দিচ্ছেন। ফলে সব ঠাকুর বিক্রি হওয়া নিয়েও আশঙ্কা হচ্ছে। আর এক শিল্পী সমীরণ দাসের কথায়, ‘‘বেশিদূর লেখাপড়া করিনি। জিএসটি-র ব্যাপারটাও ঠিক বুঝি না। কিন্তু তার চাপ পড়েছে ঘাড়ে। ঠাকুর বিক্রি করে যে লাভ হতো তা প্রায় তলানিতে ঠেকেছে।’’

কাঁথির অন্যতম মৃৎশিল্পী ঝন্টু গিরি বলেন, ‘‘প্রতিমার শাড়ি, ডাকের ও শোলার গয়না এবং রঙের দাম অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে জিএসটির জন্য। ফলে আমরাও প্রতিমার দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছি। কিন্তু অনেকেই বেশি দাম দিতে রাজি হচ্ছেন না। এ ভাবে আমাদের চলবে কী করে?’’ তিনি জানান, গত বছর যে প্রতিমা পাঁচশ টাকায় বিক্রি হয়েছে, এ বার জিএসটি-র জন্য তার দাম সাতশ টাকা। কিন্তু ক্রেতারা বলছেন এত দাম কেন! অনেকেই অন্যত্র চলে যাচ্ছেন। যা অবস্থা তাতে সব ঠাকুর বিক্রি হবে কি না কে জানে।

হলদিয়ার একটি পুজো কমিটির কর্মকর্তা আকাশ দাস জানান, ইচ্ছে থাকলেও প্রতিমার জন্য বাজেট বেশি রাখা যায় না। কারণ পুজোর পাশাপাশি তাঁরা কিছু সামাজিক কাজ করেন। তবে জিএসটির জন্য ঠাকুরের দাম বাড়ার যুক্তি অস্বীকার করেননি তিনি। কাঁথির এক পুজো কমিটির কর্তা জানান, পুজোর খরচ দিন দিন বাড়ছে। পটুয়ারা দাম বেশি চাইলে বাধ্য হয়ে প্রতিমার সাইজ ছোট করে দিতে হবে।

জিএসটি কাঁটার খোঁচা ভালই টের পাচ্ছেন বাগদেবী।

GST Saraswati Puja জিএসটি
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy