Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

অবাঙালি প্রার্থীর হিড়িক, প্রচারেও হিন্দি, তেলুগু

মিনি-ইন্ডিয়ায় পুরভোট। খড়্গপুর শহরের মিশ্র ভাষাভাষি ভোটারদের মন জয় তাই রাজনৈতিক দলগুলির অন্যতম লক্ষ্য। তাই এ বার সব দলের প্রার্থী তালিকাতেই প্রাদেশিক মুখের ছড়াছড়ি। কিন্তু শুধু তো প্রার্থী বাছলেই হবে না, ভোটার বুঝতে পারে এমন ভাষায় প্রচারও করতে হবে। তাই বাংলা, হিন্দির পাশাপাশি ওড়িয়া, তেলুগুতেও প্রচারে জোর দিচ্ছেন বিভিন্ন দলের নেতৃত্ব। দেওয়াল লিখনে দেখা যাচ্ছে নানা ভাষার প্রয়োগ।

বাম প্রার্থীর সমর্থনে তেলুগুতে দেওয়াল লিখন ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে।

বাম প্রার্থীর সমর্থনে তেলুগুতে দেওয়াল লিখন ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে।

দেবমাল্য বাগচি
খড়্গপুর শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০১৫ ০২:১২
Share: Save:

মিনি-ইন্ডিয়ায় পুরভোট। খড়্গপুর শহরের মিশ্র ভাষাভাষি ভোটারদের মন জয় তাই রাজনৈতিক দলগুলির অন্যতম লক্ষ্য। তাই এ বার সব দলের প্রার্থী তালিকাতেই প্রাদেশিক মুখের ছড়াছড়ি। কিন্তু শুধু তো প্রার্থী বাছলেই হবে না, ভোটার বুঝতে পারে এমন ভাষায় প্রচারও করতে হবে। তাই বাংলা, হিন্দির পাশাপাশি ওড়িয়া, তেলুগুতেও প্রচারে জোর দিচ্ছেন বিভিন্ন দলের নেতৃত্ব। দেওয়াল লিখনে দেখা যাচ্ছে নানা ভাষার প্রয়োগ।

সেই ১৮৯৮ সালে রেলের কারখানা স্থাপনের সঙ্গেই শহর খড়্গপুরে বেড়েছে জনবসতি। কর্মসূত্রেই হিন্দি, তেলুগু, ওড়িয়া, উর্দু, গুজরাতি, মারাঠি ভাষাভাষি মানুষজনের স্থায়ী ঠিকানা হয়ে উঠেছে এই রেলশহর। একটা সময় খড়্গপুরে সকলের মধ্যে সেতুবন্ধে হিন্দি ভাষার চল ছিল সব থেকে বেশি। কারণ, হিসেব বলছে শহরের ২,০৪,১৯৪ জন ভোটারের প্রায় ৫২ শতাংশই অবাঙালি। ২০১০ সালে পুর এলাকার সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছে রেল এলাকাও। বেড়েছে ভোটার। রেল এলাকার ৭২টি বুথের ৫৩,২৬০ জন ভোটারের একটা বড় অংশ তেলুগু ও বিহারি। তাই ওই সব এলাকার অবাঙালি ভোট টানতে রাজনৈতিক নেতারাও বাড়তি সতর্কতা নিচ্ছেন। তেলেগু, বিহারি, ওড়িয়া প্রার্থীর সঙ্গে পাঞ্জাবি প্রার্থীও দাঁড় করিয়েছে কংগ্রেস, তৃণমূলের মতো দলগুলি। ৩, ৪, ১০, ১২, ১৩, ১৬, ১৭, ১৮, ২০, ২১, ২৬, ২৮-সহ প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডেই অবাঙালি ভোটারের সংখ্যা বাড়ছে। তাই এখানে চলছে প্রাদেশিক বিভিন্ন ভাষায় প্রচার।

প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, মূলত রেল এলাকার ৮টি ওয়ার্ডে বিভিন্ন ভাষায় প্রচারে জোর দিচ্ছে সব দলই। পুর এলাকার অন্য ওয়ার্ডে যেখানে অবাঙালি ভোটার বেশি সেখানে প্রচার চলবে হিন্দি ও তেলুগুতে। এ ক্ষেত্রে আপাতত স্থানীয় নেতাদের উপরেই ভরসা রাখছে কংগ্রেস, তৃণমূল, সিপিএম। কংগ্রেস ব্যবহার করবে শহর (রেল) কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক সুন্দর রাওকে। কারণ তিনি দলের নেতা হওয়ার পাশাপাশি শহরের পিএনকে পর্ষদের নাট্যদলের নায়ক হিসেবে জনপ্রিয়। কংগ্রেসের বিদায়ী পুরপ্রধান রবিশঙ্কর পাণ্ডে বলেন, ‘‘প্রচারের জন্য এখনও প্রদেশ নেতৃত্বের কাছে বড় নেতার দাবি জানাইনি। আমাদের মনে হয়েছে পুরভোটের প্রচারের জন্য আমাদের স্থানীয় নেতৃত্ব যথেষ্ট। তাঁরাই এখানকার সংস্কৃতির সঙ্গে মিলেমিশে বক্তব্য রাখতে পারবেন। স্থানীয় অবাঙালি নেতারাই আপাতত অবাঙালি এলাকায় প্রচার করবেন।’’ সিপিএমও প্রচারে স্থানীয় নেতৃত্বেই ভরসা রাখছে। তাঁদের ভরসা রেল সেটলমেন্ট এলাকার লোকাল কমিটির সম্পাদক পি রামবাবু ও লোকাল কমিটির সদস্য বাবু রাও। সিপিএমের শহর জোনাল সম্পাদক অনিতবরণ মণ্ডল বলেন, ‘‘এই শহরে যেহেতু প্রচুর অবাঙালি মানুষ রয়েছেন, তাই আমরা বিভিন্ন ভাষায় দেওয়াল লিখছি। এরপর তেলুগু ও অন্য প্রাদেশিক ভাষায় কথা বলতে পারে এমন স্থানীয় নেতাকে প্রচারে নামানো হবে। তাঁরাই পথসভা সামলাবেন। তাছাড়া মহম্মদ সেলিমকে আনার চেষ্টা চলছে।’’ আগামী ১০ এপ্রিল সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র ও সিপিআইয়ের রাজ্য সম্পাদক প্রবোধ পাণ্ডার উপস্থিতিতে বামফ্রন্টের জনসভার জন্যও মাইকে বিভিন্ন ভাষায় প্রচার চলবে বলে জানিয়েছেন অনিতবাবু।

১৭ নম্বর ওয়ার্ডে হিন্দিতে দেওয়াল প্রচার কংগ্রেস ও তৃণমূলের।

অবাঙালি ভোটার টানতে হাত গুটিয়ে বসে নেই তৃণমূলও। বিভিন্ন এলাকায় হিন্দি, ইংরেজিতে দেওয়াল লেখা হয়েছে। তৃণমূল সূত্রে খবর, তেলুগু ভোট টানতে দলের যুব নেতা বিদায়ী কাউন্সিলর শিবাজী রাওকে প্রচারে নামানো হবে। শিবাজী নিজে ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী। ফলে নিজের ওয়ার্ড সামলে তিনি অন্যত্র প্রচারে কতটা সময় দিতে পারবেন সংশয় রয়েছে। যদিও শহর তৃণমূল সভাপতি দেবাশিস চৌধুরী বলেন, ‘‘এই পুরভোটে আমাদের স্থানীয় নেতাদের দিয়েই মূলত প্রচার চালানো হবে। শিবাজী রাও ছাড়াও আমাদের অনেক তেলুগু নেতা আছেন। তাঁরা অবাঙালি ওয়ার্ডে প্রচার করবেন।’’

আপাতত এই তিনটি দলই বাড়ি বাড়ি প্রচার চালাচ্ছে। এর পরে শুরু হবে পথসভা। এ ক্ষেত্রে একটু এগিয়ে রয়েছে বিজেপি। মিশ্রভাষাভাষির শহর হওয়ায় তাঁরা আগেভাগেই প্রচারের প্রস্তুতি বৈঠক সেরে ফেলেছে। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, আপাতত পথসভা ও বাড়ি বাড়ি প্রচারে জোর দেওয়া হচ্ছে। অবাঙালি এলাকায় অবাঙালি নেতাদের প্রচারের দায়িত্ব দেওয়ার পাশাপাশি অবাঙালি তারকাদের আনার কথাও ভাবছেন বিজেপি নেতৃত্ব। দলের জেলা সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এই শহরে তেলুগুদের বসবাস বেশি। তাই প্রচারে তাঁদের মাতৃভাষাকে সম্মান দিতে চাইছি। সে জন্য তেলুগু এলাকাগুলিতে দক্ষিণী তারকাদের আনার চেষ্টা চলছে। এ ছাড়াও বিভিন্ন ওয়ার্ডে রাজ্য স্তরের ও কেন্দ্রের অবাঙালি নেতারা আসবেন। এমনকী রেলমন্ত্রীকে আনারও চেষ্টা করছি আমরা।’’

ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE