নয়াদিল্লির মসনদ খুইয়েছেন অরবিন্দ কেজরীওয়াল। এক সময় তাঁর মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার সাফল্যে উচ্ছ্বাসে ভেসেছিল তাঁর পুরনো প্রতিষ্ঠান খড়্গপুর আইআইটি। শনিবার ‘মাফলার ম্যান’-এর হারে কার্যত চুপ সে ক্যাম্পাস। যেটুকু শোনা গেল, তা স্বচ্ছতার পক্ষে সওয়াল, যা এক সময় অরবিন্দের ‘ট্রেড মার্ক’ ছিল।
খড়্গপুর আইআইটির মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৯৮৯ সালের প্রাক্তনী কেজরীওয়াল। ২০১৩ থেকে ২০২০ তিনি আম আদমি পার্টির শীর্ষ নেতা হিসাবে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে খুশির মেজাজ ছিল প্রযুক্তিবিদ্যার অন্যতম সেরা এই প্রতিষ্ঠানে। এ দিন দিল্লিতে আপের হারের পরে প্রতিক্রিয়া জানাতে মুখে প্রায় কুলুপ প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশ পড়ুয়া থেকে অধ্যাপকের।
অরবিন্দকে পড়িয়েছেন এমন শিক্ষক এখন আইআইটিতে প্রায় নেই। তবে কেজরীওয়ালের ছাত্রাবস্থায় নিযুক্ত হওয়া তাঁরই মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রবীণ অধ্যাপক প্রশান্তকুমার দাস বলেন, “আমি সদ্য তখন আইআইটিতে এসেছি। সরাসরি ওঁকে চিনতাম না।” ২০০৯ সালে তথ্য জানার অধিকার আইন নিয়ে লড়াই চালানো কেজরীওয়ালকে ‘বিশেষ প্রাক্তনী’ হিসেবে সম্মানিত করেছিল আইআইটি। সে স্মৃতিও এ দিন মনে করতে চাননি অনেকেই। মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক সূর্যকান্ত পাল বলেন, “এ বিষয়ে কথা বলব না।” ওই বিভাগের চূড়ান্ত বর্ষের পড়ুয়া দীপ্তেন্দু সরকারও বলেন, “রাজনীতি নিয়ে কথা বলব না।”
দিল্লিতে মুখ্যমন্ত্রীর আবাস সংস্কারে কোটি কোটি টাকা খরচের বিতর্ক, তার পরে আবগারি-দুর্নীতিতে অভিযুক্ত হয়ে জেল-যাত্রা। নানা কাণ্ডে নাম জড়ানোই কি কাল হল কেজরীওয়ালের? আইআইটি খড়্গপুরের মেকানিক্যাল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের এক ছাত্রের মতে, “কেজরীওয়ালের বিভাগে ভর্তি হয়ে গর্ব অনুভব করতাম। কিন্তু ওঁর বিরুদ্ধে যখন একের পরে এক দুর্নীতির অভিযোগ সামনে এল, সেটা বেদনাদায়ক ছিল।” ওই বিভাগেরই অধ্যাপক দিলীপকুমার প্রতিহার আবার বলছেন, “মনে করি, শিক্ষিত মানুষ যদি পরিশ্রমী, স্বচ্ছ ও অল্পে সন্তুষ্ট হন, তা হলে তিনি যে কোনও ক্ষেত্রে সাফল্য পাবেন।”
আইআইটিতে অরবিন্দের সহপাঠী অঞ্জন রায় বর্তমানে দিল্লি আইআইটির মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক। আইআইটিতে পর পর রোল-নম্বর ছিল তাঁর এবং কেজরীওয়ালের। এ বার ভোট দেওয়া হয়নি অঞ্জনের। তবে তাঁর দাবি, ‘‘শিক্ষিত মানুষ রাজনীতিতে এলে, তাঁর থেকে মানুষের প্রত্যাশা অনেক বেশি থাকে। বরাবর রাজনীতিতে থাকা মানুষের কাছে অতটা প্রত্যাশা থাকে না। তাই শিক্ষিত মানুষ ভুল করলে, মানুষ দ্রুত তাঁর থেকে ছিটকে যান। মনে করি, ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে কেজরীর ঘুরে দাঁড়ানো উচিত।”
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)