Advertisement
E-Paper

ডেঙ্গির থাবা কি পূর্বেও? ছড়াল বিভ্রান্তি

ডেঙ্গি আক্রান্তদের সঙ্গেই ভর্তি ছিলেন জেলা হাসপাতালে। মৃত্যুর পরেই তমলুক জেলা হাসপাতালের সুপার জানিয়েছিলেন, বিনোদ পড়ুয়া নামে ওই বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে ডেঙ্গিতেই। তাঁর রক্ত পরীক্ষায় ডেঙ্গির জীবাণু ধরা প়ড়েছিল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০১৬ ০১:০৫

ডেঙ্গি আক্রান্তদের সঙ্গেই ভর্তি ছিলেন জেলা হাসপাতালে। মৃত্যুর পরেই তমলুক জেলা হাসপাতালের সুপার জানিয়েছিলেন, বিনোদ পড়ুয়া নামে ওই বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে ডেঙ্গিতেই। তাঁর রক্ত পরীক্ষায় ডেঙ্গির জীবাণু ধরা প়ড়েছিল। কিন্তু তার কিছুক্ষণ পরেই জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিতাইচন্দ্র মণ্ডল দাবি করেন, ‘‘জেলায় কোনও ডেঙ্গি মৃত্যুর খবর নেই। বিনোদ পড়ুয়ার মৃত্যু হয়েছে বার্ধক্য জনিত কারণে।’’

গত ১৭ অগস্ট বিনোদ পড়ুয়া জ্বর নিয়ে তমলুক জেলা হাসপাতালে ভর্তি হন। প্রথমে হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছিল, জেলা হাসপাতালেই তাঁর রক্ত পরীক্ষা করে ডেঙ্গির জীবাণু পাওয়া যায়। রবিবার দুপুরে হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। বিনোদবাবুর বাড়ি ভগবানপুর থানার তেঠিবাড়ি গ্রামে। হাসপাতাল সুপার গোপাল দাস বলেন, ‘‘টাইফয়েডে আক্রান্ত ওই বৃদ্ধের রক্ত পরীক্ষায় ধরা পড়ে তিনি ডেঙ্গিতেও আক্রান্ত। রবিবার দুপুরে তাঁর মৃত্যু হয়।’’

কিন্তু বিকেলেই ভিন্ন দাবি করেন জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক। সে খবর পেয়েই মত বদলে ফেলেন হাসপাতাল সুপারও। তখন তিনি বলেন, ‘‘ওই ব্যক্তির রক্ত পরীক্ষা জেলা হাসপাতালে হয়নি। বাইরে থেকে করানো পরীক্ষায় ডেঙ্গির জীবাণু মেলেনি।’’ স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, জেলায় এখনও পর্যন্ত ২৩ জনের রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছে। ১২ জন ডেঙ্গি আক্রান্ত জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

পশ্চিম মেদিনীপুরের এক প্রৌঢ়ারও মৃত্যু হয়েছে ডেঙ্গিতে। তবে তিনি মারা গিয়েছেন উত্তর ২৪ পরগনার ব্যারাকপুরে, মেয়ের বাড়িতে। শনিবার ব্যারাকপুরের বেসরকারি হাসপাতালে সন্ধ্যা নাগ (৬৫) নামে দাসপুর-২ ব্লকের খেপুত গ্রামের ওই বাসিন্দা মারা যান। এই ঘটনায় স্বাস্থ্য দফতরের বিরুদ্ধে উদাসীনতার অভিযোগে সরব মৃতার ভাইপো ওই গ্রামেরই বাসিন্দা অমিয় নাগ। তাঁর অভিযোগ, “কাকিমা ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হওয়ার পরই স্বাস্থ্য দফতরে জানিয়েছিলাম। কিন্তু প্রশাসনের কেউ গ্রামে আসেননি।”

সন্ধ্যাদেবীর বড় মেয়ে শম্পা রায়ের বাড়ি ব্যারাকপুরে। জ্বর-সহ ডেঙ্গির নানা উপসর্গ দেখা দেওয়ায় মাকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যান মেয়ে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা বলেন, “সন্ধ্যা নাগ নামে এক মহিলার মৃত্যু হয়েছে। তবে ব্যারাকপুরে ওঁনার চিকিৎসা চলছিল।” গিরীশচন্দ্রবাবু আরও বলেন, “সন্ধ্যাদেবী ক্যানসারে ভুগছিলেন। ফলে তাঁর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এমনিতেই কমে গিয়েছিল। ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হওয়ার পর প্লেটলেটও কমে যাওয়ায় তাঁর মৃত্যু হয়েছে।”

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা জুড়ে ডেঙ্গিতে আক্রান্তের সংখ্যা দেড়শো ছুঁইছুঁই। সরকারি হিসেবে জেলায় এখন ডেঙ্গি আক্রান্ত ১৪৭ জন। যদিও জেলায় ডেঙ্গিতে এখনও কোনও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। জেলার বাসিন্দা ওই মহিলার মৃত্যুর ঘটনার পরই নড়ে উদ্বেগ বেড়েছে স্বাস্থ্য দফতরের।

রবিবার খেপুত গ্রাম ঘুরেই ডেঙ্গি রোধে উদাসীনতার প্রমাণ মিলল। খেপুত ছাড়াও সংলগ্ন মহিষঘাটা, মানিকদীপা, উত্তরবাড়-সহ বিভিন্ন গ্রামের একাধিক জায়গায় নোংরা জল জমে রয়েছে। বিভিন্ন বাড়ির উঠানেও জমে রয়েছে জল। একাধিক জায়গায় আগাছার জঙ্গল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, “শহরের মতো গ্রামে ডেঙ্গি নিয়ে প্রচার শুরুই হয়নি। ফলে গ্রামে-গ্রামে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। গ্রামাঞ্চলেও আরও তৎপর হওয়া প্রয়োজন। তবে ডেঙ্গি রোধে সাধারণ মানুষকেও এগিয়ে আসতে হবে।”

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, ডেঙ্গি থেকে রেহাই পেতে সচেতনতা যেমন জরুরি, তেমনই বাড়ির চারিদিক পরিষ্কারও রাখতে হবে। এ দিন জেলা উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য রবীন্দ্রনাথ প্রধান খেপুত গ্রামের বিভিন্ন এলাকায় যান। এলাকার বাসিন্দাদের জানানো হয়, বাড়ির চারপাশে ব্লিচিং পাউডার ছড়ান। রাতে মশারি লাগিয়ে শোওয়ার কথাও বলা হয়। পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অরুণ মুখোপাধ্যায় বলেন, “পঞ্চায়েতগুলিতে প্রচার শুরু হয়েছে। এ বার মশানাশক তেল স্প্রে করা ও ব্লিচিং পাউডার ছড়ানো হবে।”

স্থানীয়দেরও বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ডেঙ্গি নিয়ে সচেতনতা বাড়ানোর কাজ করতে আহ্বান করা হয়। রবীন্দ্রনাথবাবু বলেন, ‘‘সরকারি ভাবে প্রচার তো হচ্ছেই। আপনারাও পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে ডেঙ্গি নিয়ে সচেতনতা বাড়ানোর কাজে এগিয়ে আসুন। একযোগে এই কাজ করতেই হবে।”

Dengue Spreading Illusion
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy