Advertisement
০৩ মে ২০২৪

নিষেধ উড়িয়ে নিরঞ্জন, হতশ্রী পুকুর

শহরের পুকুরে প্রতিমা বিসর্জনের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। অবশ্য সেই নিষেধাজ্ঞা উড়িয়ে এ বারও মেদিনীপুরের একাধিক পুকুরে বিসর্জন হয়েছে। রবিবার পর্যন্ত পুকুরে পড়ে থাকা কাঠামো তোলার ব্যবস্থা হয়নি। শুধু কাঠামো নয়, পড়ে রয়েছে ফুল, বেলপাতা-সহ পুজোর নানা সামগ্রীও। ফলে, দূষিত হচ্ছে জল।

জলেই পচছে কাঠামোর খড়। মেদিনীপুরের জেল পুকুরে ।

জলেই পচছে কাঠামোর খড়। মেদিনীপুরের জেল পুকুরে ।

বরুণ দে
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০১৬ ০০:৫২
Share: Save:

শহরের পুকুরে প্রতিমা বিসর্জনের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। অবশ্য সেই নিষেধাজ্ঞা উড়িয়ে এ বারও মেদিনীপুরের একাধিক পুকুরে বিসর্জন হয়েছে। রবিবার পর্যন্ত পুকুরে পড়ে থাকা কাঠামো তোলার ব্যবস্থা হয়নি। শুধু কাঠামো নয়, পড়ে রয়েছে ফুল, বেলপাতা-সহ পুজোর নানা সামগ্রীও। ফলে, দূষিত হচ্ছে জল।

দশমীর দিন থেকে শহরে বারোয়ারি এবং বাড়ির পুজোর প্রতিমা বিসর্জন শুরু হয়েছিল। প্রতিমার সঙ্গে ফুল-বেলপাতাও পুকুরের জলে ভাসিয়ে দিয়েছেন একাংশ পুজো উদ্যোক্তা। পুকুর থেকে কাঠামো তুলে ফেলতে পুরসভা তৎপর হয়নি বলেও অভিযোগ। পুকুরে নিরঞ্জনের কথা মানছেন পুর-কর্তৃপক্ষও। মেদিনীপুরের উপ-পুরপ্রধান জিতেন্দ্রনাথ দাস বলেন, “নদীতেই বিসর্জন হওয়ার কথা। শহরের একাধিক পুকুরে বিসর্জন হয়েছে বলে শুনেছি। পুকুরে যে সব কাঠামো রয়েছে তা তুলে নেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।”

মেদিনীপুর শহরের পাশ দিয়েই বয়ে গিয়েছে কংসাবতী। কংসাবতীর একাধিক ঘাটে বিসর্জন হয়। এ বারও হয়েছে। জলদূষণ এড়াতে তাই শহরের পুকুরে প্রতিমা বিসর্জনের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করে পুরসভা। অবশ্য একাংশ পুজো উদ্যোক্তা তা মানেন না। নদীঘাট পর্যন্ত না গিয়ে তাঁরা আশপাশের পুকুরেই প্রতিমা বিসর্জন দেন। এ বারও তাই হয়েছে। একাংশ পুজো উদ্যোক্তার বক্তব্য, নদী রয়েছে শহরের একপাশে। তাই শোভাযাত্রা সহযোগে এতটা পথ অনেকে যেতে চান না। শোভাযাত্রা এলাকা ঘোরার পর কাছেপিঠের কোনও পুকুরেই প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। এ ভাবে নিষেধাজ্ঞা জারি করে পুকুরে বিসর্জন বন্ধ করা কঠিন। পুরসভার বরং উচিত, দ্রুত কাঠামো সহ নানা সামগ্রী সরিয়ে ফেলার ব্যবস্থা করা। দ্রুত এ সব সরিয়ে ফেলা হল আর সমস্যার কিছু থাকবে না! মেদিনীপুর শহরের মতিঝিল, জেলপুকুর সহ কিছু পুকুরে প্রতিমা বিসর্জন হয়েছে। শহরের দ্বারিবাঁধ এলাকায় রয়েছে মতিঝিল। রবিবার দুপুরে এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বেশ কয়েকটি কাঠামো পড়ে রয়েছে। নানা সামগ্রীও পড়ে রয়েছে। জলের রং ঘোলাটে হয়ে গিয়েছে। ভিজে খড় থেকে দুর্গন্ধ ছড়াতে শুরু করেছে। অথচ, আবর্জনা সাফাইয়ের ব্যবস্থা করা হয়নি। নোংরা জলেই স্নান করছেন অনেকে। দুপুরে পুকুরে স্নান করতে এসেছিলেন তপন বেহেরা। পেশায় রিক্সাচালক তপনের কথায়, “আশপাশে আর এত বড় পুকুর নেই। তাই এখানেই স্নান করি। দিন কয়েক হল কাঠামো পড়ে রয়েছে। দ্রুত এই সব কাঠামো তুলে না ফেলা হলে জল দূষণ হবেই।’’

পুজোর ফুল ও অন্যান্য উপকরণ পড়ে রয়েছে দ্বারিবাঁধের পুকুরে ।

রবিবার কিংশুক আইচের তোলা ছবি।

নদীঘাটও এখনও পুরোপুরি সাফাই হয়নি। তবে মেদিনীপুরের উপ-পুরপ্রধান জিতেন্দ্রনাথ দাসের আশ্বাস, “আর এক- দু’দিনের মধ্যে সব সাফাই হয়ে যাবে।’’

পাশাপাশি তাঁর দাবি, “নদীঘাটে তেমন সমস্যা নেই। ওখানে কাঠামো তোলার কাজ দ্রুতই হয়েছে। হয়তো এ দিকে-সে দিকে পুজোর কিছু সামগ্রী পড়ে থাকতে পারে। সবই সরিয়ে ফেলা হবে।”

দিনীপুর শহরে আগে বেশ কিছু বড় পুকুর বা জলাশয় ছিল। ধীরে ধীরে তা বেআইনি ভাবে বুজিয়ে ফেলা হয়েছে বলে অভিযোগ শহরবাসীর একাংশের। এখন বড় পুকুরের সংখ্যা হাতেগোনাই। ফি বছরই পুজোর আগে শহরের পুকুরে প্রতিমা বিসর্জনের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন পুর- কর্তারা। পুজো উদ্যোক্তাদের কাছে অনুরোধ জানানো হয় পুকুরে প্রতিমা বিসর্জন না- দেওয়ার। বিসর্জনের জন্য নদীঘাটে যাওয়ার। অবশ্য ফি বছরই এই নিষেধাজ্ঞা মানেন না একাংশ পুজো উদ্যোক্তা। ছবিটা এ বারও এক। সদর শহরে শতাধিক বারোয়ারি পুজো হয়। এক পুর-কর্তার কথায়, “মূলত দূষণ ঠেকাতেই পুজো কমিটিগুলোর কাছে এই অনুরোধ জানানো হয়। প্রতিমা বিসর্জন হলে পুকুরের জল দূষিত হবেই। ভিজে খড় থেকে দুর্গন্ধ ছড়াবে। এ নিয়ে পুজো কমিটিগুলোকে সচেতন হতে হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

ponds
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE