Advertisement
১১ মে ২০২৪

জবরদখল ঠেকাতে কড়া দুই জেলাই

ছবি এক: পূর্বের পূর্ত দফতরের অতিথিশালার খোঁজ করছেন? অথচ অতিথিশালার সামনে দাঁড়িয়ে থেকেও খুঁজে পাবেন না সেটা। ৪১ নম্বর জাতীয় সড়ক ও নন্দকুমার-দিঘা ১১৬ বি জাতীয় সড়কের সংযোগস্থল।

মেদিনীপুরে প্রাণিসম্পদ দফতরের জায়গায় ফেলা হচ্ছে জঞ্জাল (ডানদিকে)। জবরদখলে ঢাকা পড়েছে পাঁশকুড়া কৃষক বাজার।

মেদিনীপুরে প্রাণিসম্পদ দফতরের জায়গায় ফেলা হচ্ছে জঞ্জাল (ডানদিকে)। জবরদখলে ঢাকা পড়েছে পাঁশকুড়া কৃষক বাজার।

আনন্দ মণ্ডল ও বরুণ দে
তমলুক ও মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০১৬ ০১:৫০
Share: Save:

ছবি এক: পূর্বের পূর্ত দফতরের অতিথিশালার খোঁজ করছেন? অথচ অতিথিশালার সামনে দাঁড়িয়ে থেকেও খুঁজে পাবেন না সেটা। ৪১ নম্বর জাতীয় সড়ক ও নন্দকুমার-দিঘা ১১৬ বি জাতীয় সড়কের সংযোগস্থল। সেই সড়কের ধারেই রয়েছে পূর্ত দফতরের অতিথিশালা। ঢোকার পথে সরকারি জায়গা দখল করে সারি দিয়ে গড়ে ওঠেছে ঝুপড়ি ঘরের দোকান। এর মাঝে হদিসই মেলে না অতিথিশালার।

ছবি দুই: পাঁশকুড়ার মেচগ্রামের কাছে ঘাটাল-পাঁশকুড়া রাজ্য সড়কের পাশেই সরকারি কৃষি খামারের জায়গায় প্রায় ৮ কোটি টাকা খরচে গড়ে তোলা হয়েছে সরকারি কৃষক বাজার। কৃষক বাজারের দুই প্রবেশ পথের মধ্যে একটি প্রবেশ পথের সামনে সরকারি জায়গা দখল করে রয়েছে একাধিক ঘর । আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারি কৃষক চালু হলেও খোলেনি বাজারের ওই প্রবেশপথ।

ছবি তিন: খোদ তমলুক শহরের হাসপাতাল মোড়ের সংলগ্ন জেলা পূর্ত দফতরের (হাইওয়ে ডিভিশন) অফিসের সামনেই সড়কের দুই ধারে দফতরের জায়গা বেদখল করে গড়ে উঠেছে একাধিক ঘর ও নানা নির্মাণ। পূর্ত দফতর-প্রশাসন-পুরসভার তরফে কোনও পদক্ষেপই নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ।

দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুতে জবরদখলকারীদের প্রতি কড়া হওয়ার বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সাম্প্রতিক উত্তরবঙ্গ সফরের সময় তিনি জানিয়েছেন, সরকারি জমি নতুন ভাবে কেউ জবরদখল করে বসলে, তাকে তুলে দেওয়া হবে। পুরনো দখলকারীদের প্রতি সরকার কী অবস্থান নেবে, তা যদিও স্পষ্ট নয়। তবে জবরদখল নিয়ে কড়া হতে শুরু করেছে জেলাগুলি।

রাজ্য প্রশাসনের বার্তা পেয়ে নড়েচড়ে বসেছে পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনও। আর জবরদখল বরদাস্ত করা হবে না বলে বুঝিয়ে দিয়েছেন জেলার শীর্ষ প্রশাসনিক কর্তারা। প্রশাসনের এক সূত্রে খবর, সম্প্রতি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সব সরকারি অফিসে চিঠি পাঠানো হয়েছে। জেলা থেকে পাঠানো সেই চিঠিতে স্পষ্ট জানানো হয়েছে, সরকারি জায়গা আর ফাঁকা রাখা যাবে না। চিহ্নিত করে সীমানা পাঁচিল দিয়ে ঘিরে ফেলতে হবে। সামনে দফতরের সাইনবোর্ডও লাগাতে হবে।

প্রশাসনের এক সূত্রে খবর, সব মিলিয়ে ৫৯টি দফতরের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠি পাঠিয়েছেন পশ্চিমের জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা। ১৮ জুলাইয়ের মধ্যে জেলায় রিপোর্ট পাঠানোর কথা বলা হয়েছে। রিপোর্টে জানাতে হবে, কোন দফতরের অধীনে কত জমি রয়েছে। জমির মৌজা কী, প্লট নম্বর কত, কত একর জমি রয়েছে, জমিটি চিহ্নিত করা রয়েছে কি না, সীমানা পাঁচিল রয়েছে কি না, সামনে সাইনবোর্ড লাগানো হয়েছে কি না ইত্যাদি।

পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক রশ্মি কমলও বলেন, ‘‘সরকারি বিভিন্ন দফতরের জায়গা যেখানে যেখানে বেদখল হয়ে আছে সেগুলি চিহ্নিত করার পর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। নির্দিষ্ট পদ্ধতি মেনেই আমরা শীঘ্রই এই প্রক্রিয়া শুরু করব।’’

পশ্চিম মেদিনীপুরে জবরদখলের সমস্যা দীর্ঘ দিনের। সীমানা পাঁচিল না থাকায় সরকারি জমি বেহাত হয়েছে বহু ক্ষেত্রে। ডেবরায় সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল হচ্ছে। অথচ এখানে স্বাস্থ্য দফতরের জমির একাংশ দখল হয়ে গিয়েছে। মেদিনীপুরে প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতরের জমির একাংশ জবরদখল হয়েছে। পূর্ত দফতরের জমির একাংশে অবৈধ নির্মাণ হয়েছে। মেদিনীপুরে কারা দফতরের একাংশ জমিও বেহাত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আনন্দপুরে কৃষি দফতরের একাংশ জমি জবরদখল হয়ে গিয়েছে।

তবে সরকারিভাবে কড়া পদক্ষেপ নিলে যে সরকারি জায়গা বেদখল রোখা সম্ভব তার নজির রেখেছে পূর্ব মেদিনীপুর প্রশাসন ও সেচ দফতর।

কলকাতা থেকে মুম্বইগামী ৬ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে কোলাঘাট থেকে পাঁশকুড়া পর্যন্ত রয়েছে দেনান-দেহাটি খাল। কোলাঘাট, ডেবরা-সহ বিস্তীর্ণ এলাকার জল নিকাশি ও শীতে বোরো ধান চাষে সেচের জল ভরসা ওই খাল। কিন্তু কোলাঘাটের বড়দাবাড় এলাকায় জাতীয় সড়কের ধারে ওই খালের ভিতরের দিকের একাংশ ভরাট করে সেখানে পাকা ঘর নির্মাণ শুরু করেছিলেন স্থানীয় এক ধাবা-হোটেল মালিক। মহকুমা, জেলা সেচ দফতর ও জেলা প্রশাসনের কাছে নালিশ করা হয়েছিল। অভিযোগ পেয়ে জেলা প্রশাসনের তরফে ওই অবৈধ নির্মাণ বন্ধ করতে সেচ দফতরকে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। সেচ দফতরের তরফে প্রথমে ওই অবৈধ নির্মাণ সরিয়ে ফেলার জন্য হোটেল মালিককে নোটিস দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে হোটেলের মালিক ওই নির্মাণ সরিয়ে নেয়নি। এরপরই সেচ দফতরের তরফে ওই অবৈধ নির্মাণ ভেঙে দিয়ে খালের জায়গা জবর দখল মুক্ত করা হয়েছিল।

জবরদখল উচ্ছেদ করতে গিয়ে প্রশাসনকে নানা সমস্যার মধ্যেও পড়তে হয়। ভোট রাজনীতির স্বার্থে এ নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের নিষ্ক্রিয় থাকার ছবিও নতুন নয়। রাজ্য প্রশাসন কড়া না হওয়ায় জেলা প্রশাসনও এত দিন তেমন কড়া হতে পারেনি। তবে ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তনের পরে তৃণমূল সরকারের মনোভাবে পরিবর্তন এসেছে। জবরদখল নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কড়া বার্তা সেই কথাই বলছে। সম্প্রতি এক প্রশাসনিক সভায় জবরদখল নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন মমতা। তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘যে খুশি এসে সরকারি জায়গা দখল করে বসে পড়বে আর সেই জবরদখলের জন্য উন্নয়নের কাজ থেমে যাবে, এমনটা চলবে না।’ এ ক্ষেত্রে কোনও রাজনৈতিক রং না দেখে প্রশাসনকে কড়া পদক্ষেপ করার নির্দেশও দেন মুখ্যমন্ত্রী। নির্দেশ পেয়ে প্রশাসন পদক্ষেপ শুরু করে।

জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা স্পষ্ট। এ বার থেকে জবরদখল নিয়ে কড়া পদক্ষেপই করা হবে।” আশ্বাস মতো কাজ হয় কি না, সেটাই দেখার!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

initiatives forcible occupation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE