কৃষ্ণপ্রসাদের দেহ ঘিরে বাবার হাহাকার। ফাইল চিত্র।
এক বছর আগে বাড়ির ছোট ছেলে কলেজে গিয়ে খুন হয়েছিল। উত্তাল হয়েছিল রাজ্য রাজনীতি। সাত জন গ্রেফতারও হয়। কিন্তু ছ’জনই জামিনে মুক্তি পেয়েছে। আর অনেকে পলাতক। তাই এক বছর পরেও সেই বিচারের আশায় সবংয়ের দণ্ডরা গ্রাম পঞ্চায়েতের দাঁতরদা বাটিটাকি গ্রামের জানা পরিবার।
সবং সজনীকান্ত কলেজ চত্বরে কৃষ্ণপ্রসাদ জানা নামে ওই ছাত্র খুনের এক বছর পেরোবে আজ, রবিবার। ছেলে হারানোর যন্ত্রণা এখনও কুড়ে কুড়ে খায় ভানুভূষণ জানাকে। মা যমুনাদেবীর চোখেও জল। তিন ভাই কাজে ডুবে থাকেন। কিন্তু ভাইয়ের মৃত্যুর দিনটা বাড়িতে কাটাতে গুজরাত থেকে এসেছেন বড়দা নারায়ণ জানা। শনিবার তিনি বলছিলেন, ‘‘এখনও ভাইয়ের মৃত্যুর বিচার পেলাম না। যাঁদের পুলিশ ধরেছিল তাঁদের মধ্যে এক জন বাদে সকলেই ছাড়া পেয়ে গিয়েছে। নতুন করে কেউ গ্রেফতার হয়নি। আমাদের একটাই দাবি, আসল অপরাধীকে পুলিশ গ্রেফতার করুক।’’ এই মামলায় ধৃত ছাত্র পরিষদ কর্মীদের আইনজীবী হরিসাধন ভট্টাচার্যও বলছেন, “এক বছর হয়ে গেল। কিন্তু মামলা সে ভাবে এগোলো না।”
গত বছর ৭ অগস্ট সবং কলেজ চত্বরে ছাত্র পরিষদ (সিপি) কর্মী কৃষ্ণপ্রসাদকে পিটিয়ে খুনের অভিযোগ ওঠে। সিপির অভিযোগের ভিত্তিতে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (টিএমসিপি)-এর শেখ মুন্না, শেখ সানোয়ার ও অসীম মাইতিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে তদন্তে নেমে কলেজের সাধারণ সম্পাদক সৌমেন গঙ্গোপাধ্যায়, ছাত্র পরিষদ সদস্য পল্টু ওঝা-সহ আরও চারজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তেতে ওঠে রাজ্য রাজনীতি। সবংয়ের কংগ্রেস বিধায়ক মানস ভুঁইয়া অনশনে বসেন। সিপি কর্মীদের মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ ওঠে।
পুলিশ গত ১৭ সেপ্টেম্বর জেলা আদালতে সিপি-র ১৯ জন-সহ ২১জনের নামে চার্জশিট জমা দেয়। এই মামলায় ৭ জন গ্রেফতার হয়েছে। এর মধ্যে টিএমসিপি-র ৩ জন। সিপি-র ৪ জন। ধৃতদের মধ্যে এখন ৬ জন জামিনে মুক্ত। সিপি-র পল্টু ওঝা জেলে রয়েছে। মূল মামলাটি চলছে মেদিনীপুর সিজেএমের এজলাসে। অবশ্য সিবিআই তদন্ত চেয়ে কলকাতা হাইকোর্টেও মামলা দায়ের হয়েছে। সেই মামলা বিচারাধীন। চার্জশিটের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে মেদিনীপুর জেলা আদালতেও মামলা ঠুকেছেন অভিযুক্তপক্ষের একাংশ।
এই সব টানাপড়েনের মধ্যেই আজ, রবিবার সকালে সবং কলেজের গেটের বাইরে স্মরণসভা করবে ছাত্র পরিষদ। কৃষ্ণপ্রসাদের ছবিতে মালা দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হবে। তবে ওই অনুষ্ঠানে কৃষ্ণপ্রসাদের পরিবারকে ডাকা হয়নি বলেই সিপি সূত্রে খবর।
রবিবার দুপুরে কৃষ্ণপ্রসাদের বাড়ির কাছে চাঁদখুড়ি হাইস্কুলের ময়দানে তৃণমূল যে স্মরণসভা করছে, তাতে অবশ্য জানা পরিবারের সদস্যরা থাকবেন। নিহতের বড়দা নারায়ণ বলেন, “তৃণমূলের পক্ষ থেকে আমাদের ডাকা হয়েছে। সেখানে সকলে যাব।’’ তৃণমূল সূত্রে খবর, ওই অনুষ্ঠানে কৃষ্ণপ্রসাদের সেজ ভাই হরিপদ জানাকে অধিকার প্রকল্পে ৭৫ হাজার টাকার চেক দেওয়া হবে। তৃণমূলের জেলা কর্মাধ্যক্ষ অমূল্য মাইতি বলেন, “কৃষ্ণপ্রসাদের বাকি ভাইরা আগেই নানা আর্থিক সাহায্য পেয়েছেন। তাই ওঁর বাবার পরামর্শে এ বার হরিপদকে সাহায্য করা হবে।’’ বিধানসভা ভোটের আগে কৃষ্ণপ্রসাদের বাবা-সহ অন্য পরিজনেরা তৃণমূলের মিছিলে হেঁটেছিলেন।
এর পিছনে আর্থিক প্রলোভন কাজ করেছে বলে কংগ্রেসের দাবি। সিপি-র রাজ্য নেতা মহম্মদ সইফুলের বক্তব্য, “তৃণমূল নোংরা রাজনীতি করছে। ওঁর (কৃষ্ণপ্রসাদের) পরিজনদের হয়তো প্রলোভন দেখানো হয়েছে।” আজ সবংয়ে আসছেন না বিধায়ক মানসবাবু। তবে তিনি বলেন, “আমি কৃষ্ণপ্রসাদকে দূর থেকে স্মরণ করব। তবে দুর্ভাগ্য হল, কৃষ্ণপ্রসাদের পরিবার ওঁকে ভুলে গিয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy