Advertisement
E-Paper

ধুম লেগেছে শিলান্যাসে

জেলার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটছে গাড়ি। কখনও সে গাড়িতে থাকছেন একাধিক নেতা-নেত্রী। কখনওবা একজন।

কিংশুক গুপ্ত

শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০১৯ ০৬:৩১
দিন কয়েক আগে সাঁকরাইল ব্লকের একটি রাস্তার শিলান্যাস করেন জেলা সভাধিপতি মাধবী বিশ্বাস। নিজস্ব চিত্র

দিন কয়েক আগে সাঁকরাইল ব্লকের একটি রাস্তার শিলান্যাস করেন জেলা সভাধিপতি মাধবী বিশ্বাস। নিজস্ব চিত্র

জেলার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটছে গাড়ি। কখনও সে গাড়িতে থাকছেন একাধিক নেতা-নেত্রী। কখনওবা একজন।

স্থানীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সামান্য কথাবার্তা। স্থানীয় বাসিন্দাদের কেউ উপস্থিত থাকলে হাসি মুখে কুশল বিনিময়। এরপর শিলান্যাস পর্ব মিটিয়ে গ্রুপ ফোটো। আর সময় নষ্টের সুযোগ নেই। অন্য জায়গায় যে আরেকটি শিলান্যাসের সময় দেওয়া আছে। তাই ধুলো উড়িয়ে নেতার গাড়ি ছুটল সেই রাস্তায়। ভোট ঘোষণা হতে পারে যে কোনও সময়। তাই তার আগে ফিরে এসেছে নেতা নেত্রীদের শিলান্যাস-ব্যস্ততার চেনা ছবিটা।

নয়াগ্রামের বিধায়ক দুলাল মুর্মু শুক্রবার পৌঁছে গিয়েছিলেন ডাহি ঘাটে। সেখানে আদিবাসীদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানের পরিকাঠামো নির্মাণের শিলান্যাস করেন তিনি। নয়াগ্রামে চাঁদাবিলা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রাচীর তৈরি হবে। শিলান্যাস করেন তারও। জামবনি ব্লকের শালিকাতকে ইন্টিগ্রেটেড হাইস্কুলের হস্টেল বিল্ডিংয়ের উদ্বোধনে ব্যস্ত ছিলেন বিনপুরের বিধায়ক খগেন্দ্রনাথ হেমব্রম। লালগড়ে শাখাখুল্যা এবং ভুলাগাড়াতে স্কুলের হস্টেলের উদ্বোধন করেন লালগড় পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি পরিতোষ মণ্ডল।

এ শুধু একদিনের ছবি নয়। এখন এমন দৃশ্য চোখে পড়ছে প্রতিদিনিই। বিধায়কদের মতো ছুটে বেড়াচ্ছেন জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষেরা। সুযোগ পেলে দল বেঁধে। না হলে একা। সকাল থেকে সন্ধ্যে চলছে বিরামহীন শিলা পোঁতার কাজ। জনস্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ উজ্জ্বল দত্ত, পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ শুভ্রা মাহাতো, সভাধিপতি মাধবী বিশ্বাসও রয়েছেন উদ্বোধন-সফরে। ছাত্রাবাস হোক বা অঙ্গনওয়াড়ির নতুন ভবন, কিছু না হলে প্রাচীর—বাদ থাকছে না কিছুই।

প্রতি বছর সাংসদ ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত এলাকার উন্নয়নে খরচ করতে পারেন। সেই হিসেবে পাঁচ বছরে ২৫ কোটি টাকা খরচ করার সুযোগ রয়েছে। ঝাড়গ্রামে গত পাঁচ বছরে সাংসদ তহবিল থেকে খরচ হয়েছে নামমাত্র টাকা। নবান্ন থেকেও নির্দেশ রয়েছে, ঝাড়গ্রাম জেলায় যত বেশি সম্ভব বকেয়া প্রকল্পের রূপায়ণ করে চালু করতে হবে। গত ২২ ফেব্রুয়ারি তারকেশ্বর থেকে ঝাড়গ্রাম মেডিক্যাল কলেজের শিলান্যাস করেন মুখ্যমন্ত্রী। গত ৬ মার্চ হাওড়া থেকে ঝাড়গ্রামের বাঁদরভোলায় মহিলা স্বসহায়ক দলগুলির জন্য শাল পাতা ও সাবাই ঘাসের উৎকর্ষকেন্দ্রের উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী। ওই দিনই গোপীবল্লভপুর-১ ব্লকের জগন্নাথপুরে মসলিনের সুতো ও কাপড় তৈরির কেন্দ্রটির উদ্বোধন করেছেন তিনি। এ ছাড়া ওই দিন হাওড়া থেকে মুখ্যমন্ত্রী নয়াগ্রামের খড়িকা থেকে ধুমসাই পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার রাস্তারও উদ্বোধন করেন। এ ছাড়া ঝাড়গ্রাম জে‌লা পরিষদের উদ্যোগে ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ৮ মার্চ পর্যন্ত জেলার ১৬ টি রাস্তার উদ্বোধন হয়েছে। জেলার ৪০টি রাস্তার শিলান্যাস হয়েছে। এ ছাড়া জেলার বিভিন্ন স্কুলের গ্রন্থাগার, পাঁচিল, অতিরিক্ত ভবন তৈরির জন্য প্রায় ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়ে গিয়েছে। লোধা-শবরদের স্বনির্ভর করার জন্য এবং লোধাগ্রামের পানীয় জল সহ বিভিন্ন পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য প্রায় ১১ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। জেলাশাসক আয়েষা রানি বলেন, ‘‘ঝাড়গ্রাম নতুন জেলা। সেই জেলার পরিকাঠামো উন্নয়ন ও মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে উন্নয়নের কাজ চলেছে। মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশে গরিব মানুষের কাছে উন্নয়নের বিভিন্ন পরিষেবা দেওয়া হচ্ছে।’’

সিপিএমের ঝাড়গ্রাম জেলা সম্পাদক পুলিনবিহারী বাস্কে বলেন, ‘‘গত পাঁচ বছরে সাংসদ তহবিলের মাত্র ৬ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। তাই এখন লোকসভা ভোটের আগে লোক দেখানো উন্নয়ন হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে মানুষের কাজ কিছুই হচ্ছে না।’’ বিজেপির ঝাড়গ্রাম জেলা সভাপতি সুখময় শতপথী বলেন, ‘‘ভোটে মানুষের মন পেতে লোক দেখানো উন্নয়ন হচ্ছে। মানুষ এসব ফাঁকিবাজি ধরে ফেলেছেন।’’ তৃণমূলের ঝাড়গ্রাম জেলার আহ্বায়ক উজ্জ্বল দত্ত বলেন, ‘‘মানুষ উন্নয়ন প্রত্যাশা করেন। ঝাড়গ্রামে অভূতপূর্ব উন্নয়ন চলছে। সেই উন্নয়ন দিয়েই মানুষ লোকসভা ভোটে আমাদের মূল্যায়ন করবেন।’’

কেউ বলছেন, শিলার টানে যে গতিতে গাড়ি ছুটছে, তাতেও কোনও পরিচালক ধুম ৪ এ উৎসাহী হতেই পারেন।

Lok Sabha Election 2019 Inauguration TMC BJP
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy