Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

স্কুলের দাদাকে বাঁচাতে পথে খুদে পড়ুয়ারা

দোকানে দোকানে ঘুরে বেড়াচ্ছে এক দল স্কুলছাত্র। অর্থ সাহায্য চেয়ে হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে। যে যেমন পারেন দিচ্ছেনও। ওই সব কচিকাঁচাদের লক্ষ্য একটাই— ‘শুভেন্দুদাকে সারিয়ে তুলতেই হবে’। সে জন্য সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে বিশেষ ‘পেজ’ তৈরির তোড়জোরও চলছে।

শুভেন্দু রাণা। নিজস্ব চিত্র।

শুভেন্দু রাণা। নিজস্ব চিত্র।

আনন্দ মণ্ডল
তমলুক শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০১৬ ০০:৫৯
Share: Save:

দোকানে দোকানে ঘুরে বেড়াচ্ছে এক দল স্কুলছাত্র। অর্থ সাহায্য চেয়ে হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে। যে যেমন পারেন দিচ্ছেনও। ওই সব কচিকাঁচাদের লক্ষ্য একটাই— ‘শুভেন্দুদাকে সারিয়ে তুলতেই হবে’। সে জন্য সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে বিশেষ ‘পেজ’ তৈরির তোড়জোরও চলছে।

মাধ্যমিক ও উচ্চ-মাধ্যমিকে কৃতী শুভেন্দু রাণা এখন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইলেকট্রনিক্স ও টেলিকমিউনিকেশনের ছাত্র। আগামী ২৭ এপ্রিল থেকে দ্বিতীয় সেমেস্টার পরীক্ষা দেওয়ার কথা তাঁর। কিন্তু গত দু’সপ্তাহে বদলে গিয়েছে কোলাঘাট শহর লাগোয়া বাড়-বড়িশা গ্রামের ছেলে শুভেন্দুর জগৎটা।

বাড়িতেই কামারশালা চালান শুভেন্দুর বাবা শ্যামল রাণা। তিনিই জানালেন, মাস খানেক আগে প্রথম শুভেন্দুর মাথা ব্যথা হয়েছিল। সঙ্গে পেটের গোলমাল। কোলাঘাটের এক চিকিৎসকের কাছে দেখিয়ে, ওষুধ খাওয়ার পরও লাভ হয়নি। পরে চিকিৎসকের পরামর্শে তাঁর রক্ত পরীক্ষা করা হয়। তাতেই ধরা পড়ে রক্তে প্লেটলেটের পরিমাণ বেড়ে গিয়েছে। এরপরই তাঁকে কলকাতার একটি নার্সিং হোমে ভর্তি করানো হয়। তারপর বারাসতের বেসরকারি হাসপাতাল। শুভেন্দু এখন সেখানেই চিকিৎসাধীন। কিন্তু ছেলেকে কী ভাবে সারিয়ে তুলবেন, বুঝতে পারছেন না ছাপোষা শ্যামলবাবু। টাকার জন্য হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন তিনি।


কোলাঘাট বাজারের বিভিন্ন দোকানে অর্থ সংগ্রহ করছে পড়ুয়ারা। পার্থপ্রতিম দাসের তোলা ছবি।

শুধু পড়াশোনা নয়, স্কুলে পড়ার সময় থেকেই ক্যুইজ, আবৃত্তি আর নাটকেও তুখোড় ছিলেন শুভেন্দু। নিচু ক্লাসের ছেলেদের কাছে রীতিমতো জনপ্রিয়ও ছিলেন। আর ভালবাসতেন শিক্ষকরা। শুভেন্দুর এই দুঃসময়ে তাই পাশে দাঁড়িয়েছেন তাঁরাই। পুরনো ছাত্রের মারণ রোগের খবর পেয়ে যথাসম্ভব সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন স্কুলের কোলা ইউনিয়ন হাইস্কুলের শিক্ষক ও পড়ুয়ারা। এই স্কুলে শিক্ষক-অশিক্ষক কর্মী মিলিয়ে রয়েছেন মোট ৬২ জন। আর ছাত্রছাত্রী ২৩০০ জন। সিদ্ধান্ত হয়েছে, শিক্ষকরা ১ লক্ষ ও ছাত্রছাত্রীদের ১ লক্ষ টাকা তুলে দেওয়া হবে শুভেন্দুকে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুজন বেরা জানান, ২০১৩ সালের মাধ্যমিকে ৬৬৭ নম্বর পেয়ে রাজ্যে মেধা তলিকায় প্রথম ২৫ জনের মধ্যে ছিল শুভেন্দু। ২০১৫ সালে উচ্চ মাধ্যমিকেও ৪৭১ নম্বর পেয়ে প্রথম সারিতে ছিল। আর জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষায় ইঞ্জিনিয়ারিং ও মেডিক্যাল বিভাগে প্রথম সারিতে ছিল। পছন্দ অনুযায়ী যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইলেকট্রনিক্স ও টেলিকমিউনিকেশন পড়ছে।

স্কুলের পড়ুয়া সৌগত, সোহমরা বলেন, ‘‘ভাল ছাত্র হিসেবে শুভেন্দুদাকে তো প্রথম থেকেই চিনতাম। ওকে কঠিন অসুখ থেকে সুস্থ করে তুলতেই হবে।’’ শুভেন্দু এখন যেখানকার ছাত্র, সেই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরাও ইতিমধ্যে ১৫ হাজার টাকা জোগাড় করে দিয়েছেন।

নুন আনতে পান্তা ফুরানো শুভেন্দুর পরিবারের পাশে লড়াইয়ে সামিল হয়েছে কোলাঘাটের বিভিন্ন স্বেছাসেবী সংগঠন। কোলাঘাটের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্তা অসীম দাস বলেন, ‘‘শুভেন্দু’র চিকিৎসায় আর্থিক সাহায্যের জন্য কোলাঘাটের বিভিন্ন ক্লাবের কাছে আবেদন জানিয়েছি। ইতিমধ্যে সাড়াও মিলেছে। আশা করি সকলের সাহায্যে সুস্থ করে তোলা যাবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

School Children Save Senior
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE