Advertisement
১৭ মে ২০২৪

পদবির ভুল মুখ্যমন্ত্রীর মুখেও

এ বার ঝাড়গ্রামে দলীয় প্রার্থীর নাম বলতে গিয়ে পদবি ভুল করে বসলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুধু পদবিই নয়, ইভিএমে দলীয় প্রার্থীর ক্রমিক নম্বরও প্রথমে ভুল বললেন তিনি! যদিও দু’টি ভুলই পরে শুধরে নেন মমতা। 

গোয়ালতোড়ের সভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: কৌশিক সাঁতরা

গোয়ালতোড়ের সভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: কৌশিক সাঁতরা

নিজস্ব সংবাদদাতা
গোয়ালতোড় শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০১৯ ০০:১৬
Share: Save:

ফের পদবি ভুল।

এ বার ঝাড়গ্রামে দলীয় প্রার্থীর নাম বলতে গিয়ে পদবি ভুল করে বসলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুধু পদবিই নয়, ইভিএমে দলীয় প্রার্থীর ক্রমিক নম্বরও প্রথমে ভুল বললেন তিনি! যদিও দু’টি ভুলই পরে শুধরে নেন মমতা।

তবে রবিবার পশ্চিম মেদিনীপুরের গোয়ালতোড়ে হাইস্কুল মাঠের জনসভায় নেত্রীর এই ‘ভ্রান্তিবিলাসে’ দলীয় নেতা-কর্মীদের একাংশের মধ্যে সভাস্থলেই গুঞ্জন শুরু হয়ে যায়। এ দিন বক্তৃতার শেষ পর্যায়ে বিরবাহা সরেনকে পাশে দাঁড় করিয়ে মমতা বলেন, ‘‘উমা সরেন আগে আমাদের সাংসদ ছিল। মেয়েটা যথেষ্ট ভাল। কিন্তু ওকে দিয়ে আমি অন্য কাজ করাব। আর ‘বিরবাহা হাঁসদা’কে নিয়ে এসেছি।’’

পরক্ষণেই ভুল বুঝতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী। বলে ওঠেন, ‘‘সরি বিরবাহা টুডু। হাঁসদা নয়। হাঁসদা চুনিবালা হাঁসদার মেয়ে। ওকে কিন্তু দেবেন না। আমি ওকে এক সময় ডেকেছিলাম কথা বলতে। তারপরে আর আসেনি। প্রয়োজন নেই। আমাদের যারা কাজ করবে আমি তাকে নিয়ে কাজ করাব।’’এরপর প্রার্থীকে দেখিয়ে মমতা বলেন, ‘‘ও হচ্ছে বিরবাহা সরেন। ও কী?’’ সভাস্থলের একাংশ তখন ফের বিরবাহা হাঁসদার নাম বললে মুখ্যমন্ত্রী গলা চড়িয়ে বলে ওঠেন, ‘‘সরেন সরেন বিরবাহা সরেন। ওর বিয়ে হয়েছে টুডু।’’

শুধু দলীয় প্রার্থীর পদবি নয়, ইভিএমে তাঁর ক্রমিক নম্বর বলতে গিয়েও ভুল করেছেন মমতা। ইভিএমে বিরবাহা সরেনের ক্রমিক সংখ্যা চার। কিন্তু মমতা বলে বসেন, ‘‘বিরবাহার প্রতীকের ক্রমিক নম্বর ৩, মানে এক দুই তিন/ বিজেপিকে হারিয়ে দিন।" পাশ থেকে এক নেতা বীরবাহার ক্রমিক নম্বর ৪ বলাতে মমতা ভুল শুধরে বলেন, ‘‘ক্রমিক নম্বর ৪, মানে এক দুই তিন চার / বিজেপির হবে হার।’’

যাঁর নাম ভুল করে বলে বসলেন মুখ্যমন্ত্রী সেই বিরবাহা হাঁসদা এ বার ঝাড়গ্রাম লোকসভা কেন্দ্রে ঝাড়খণ্ড পার্টি (নরেন) ও ঝাড়খণ্ড অনুশীলন পার্টির জোটের প্রার্থী। তিনি সাঁওতালি সিনেমার জনপ্রিয় অভিনেত্রী। গত বছর ঝাড়গ্রামে আদিবাসী দিবসের সরকারি অনুষ্ঠানে তাঁকে সংবর্ধনা দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। শুধু তাই নয়, অভিনেত্রী বিরবাহাকে নবান্নে ডেকে পাঠিয়ে শাড়ি উপহার দেন মুখ্যমন্ত্রী। পরে ঝাড়গ্রামে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের একটি সরকারি অনুষ্ঠানেও আমন্ত্রিত হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। বিরবাহা হাঁসদাকে সরকারি স্তরে গুরুত্ব দেওয়ার ফলে জল্পনা শুরু হয় যে সাঁওতালি সিনেমার অভিনেত্রী এ বার তৃণমূলের প্রার্থী হতে পারেন। তবে শেষ পর্যন্ত জল্পনা সত্যি হয়নি।

তবে প্রার্থীর নাম ঘোষণার পর থেকে তৃণমূলের রাজ্য ও জেলা স্তরের একাধিক নেতা সোশ্যাল মিডিয়ায় বিরবাহা সরেনকে নিয়ে প্রচারমূলক পোস্টে অভিনেত্রী বিরবাহা হাঁসদার ছবি ব্যবহার করে বসেন। তৃণমূলের সব মহিলা প্রার্থীদের নিয়ে একটি ফেসবুক পোস্টে বিরবাহা সরেনের নাম ঠিক থাকলেও ছবি ব্যবহার করা হয় বিরবাহা হাঁসদার।

রবিবার লালগড়ে প্রচারে ছিলেন বিরবাহা হাঁসদা। সেখান থেকে ফোনে তাঁর দাবি, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী খুব ভাল করে জানেন, জঙ্গলমহলে বিরবাহা হাঁসদাকেই সবাই চেনেন। সেই কারণেই আমার নাম ব্যবহার করে ভোটারদের বিভ্রান্ত করছে তৃণমূল। এ বার মুখ্যমন্ত্রী নিজে ইচ্ছাকৃত ভ্রান্তিবিলাস করলেন। কারণ বিরবাহা সরেনকে নিয়ে তৃণমূল যতটা না চিন্তিত তার থেকে বেশি চিন্তিত মুখ্যমন্ত্রী।’’

মুখ্যমন্ত্রী কী আপনাকে ডেকেছিলেন? বিরবাহা হাঁসদার উত্তর, ‘‘গত বছর নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী ডেকে পাঠিয়েছিলেন। গিয়েছিলাম। দুটি শাড়ি উপহার দিয়ে কাজ করে যেতে বলেছিলেন।’’ তাঁর দাবি, মুখ্যমন্ত্রীর কাছে মাওবাদীদের হাতে নিহত ও নিখোঁজদের পরিবারের জন্য চাকরির অনুরোধ করলে তিনি নামের তালিকা চেয়েছিলেন। সেই তালিকা তৈরি করে নবান্নে বার বার যোগাযোগ করলেও মুখ্যমন্ত্রীর দেখা করার সময় দেওয়া হয়নি তাঁকে। ঝাড়গ্রাম আসনে প্রার্থী হওয়ার জন্য তৃণমূলের তরফে কখনও তাঁকে প্রস্তাবও দেওয়া হয়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Lok Sabha Election 2019 Mamata Banerjee TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE